ঋতুপর্ণা ও তহুরাকে এমন লুকে আগে দেখেছেন কি?

ঋতুপর্ণা চাকমা ও তহুরা খাতুন। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের এই দুই কৃতী ফুটবলারকে আমরা ফুটবলের জার্সিতে দেখেই অভ্যস্ত; কিন্তু আজ আন্তর্জাতিক যুব দিবসে প্রথম আলোর মঙ্গলবারের ক্রোড়পত্র ‘নকশা’র আয়োজনে পাঠকের সামনে এলেন ভিন্ন বেশে, ভিন্ন সাজে।

সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে বিচারক আর পাঠকের ভোটে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা
পোশাক: ঢেউ, সাজ: পারসোনা। ছবি: কবির হোসেন

২০১১ সালে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট’। সেই উৎসব থেকেই উঠে আসা এক তারার নাম ঋতুপর্ণা চাকমা। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল রাঙামাটির কাউখালী থেকে আসা এই খেলোয়াড় এখন পুরো বাংলাদেশের গর্ব। সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে বিচারক আর পাঠকের ভোটে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। বাংলাদেশ নারী দলকে প্রথমবারের মতো নিয়ে গেছেন এশিয়ান কাপের মূল পর্বে।

মার্বেল খেলা, সাইকেল চালানো, মাছ ধরা–সবকিছুতেই তহুরা খাতুন সমান পারদর্শী
পোশাক: ঢেউ, সাজ: পারসোনা। ছবি: কবির হোসেন

বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও এখন প্রশংসা কুড়োচ্ছেন ঋতুপর্ণা। ভুটানের লিগে খেলতে গিয়ে নতুন নতুন বন্ধু হয়েছে। ভুটান দেশটা ছোট হলেও তাদের খেলোয়াড়, দল থেকে শুরু করে লিগ—সবারই বেশ পেশাদারি মনোভাব। তাই ঘুরে বেড়ানোর থেকে খেলাতেই সবার মনোযোগ বেশি।

খেলার কারণে খাওয়াদাওয়ায় ঋতুপর্ণাদের বাছবিচার করতে হয় সব সময়। বিশেষ করে যখন ট্রেনিং বা ক্যাম্পে থাকা হয়, তখন বাইরের খাবার খাওয়া হয় না বললেই চলে। সব খাবারেই তেল–চর্বির ব্যাপারে কড়াকড়ি থাকে।

পোশাকের ক্ষেত্রে ছিমছাম থাকতেই পছন্দ করেন ঋতুপর্ণা
পোশাক: যাত্রা, সাজ:পারসোনা। ছবি: কবির হোসেন

ফুচকা-চটপটি কিংবা ফাস্ট ফুড থেকে দূরে রয়েছেন বহুদিন। তবে গ্রামে গেলে এসব বাছবিচার করেন না। মায়ের হাতের বাঁশকোড়ল সবচেয়ে পছন্দ। সামুদ্রিক মাছ হলে তো কথাই নেই। এই দুই পদ দিয়ে খেয়ে উঠতে পারবেন যেকোনো সময়।

পোশাকের ক্ষেত্রেও ছিমছাম থাকতেই পছন্দ করেন ঋতুপর্ণা। রাঙামাটিতে গেলে গায়ে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকই থাকে। আর ঢাকায় থাকলে জিনস, টি-শার্ট আর টপস মিলিয়েই কেটে যায় সময়। তবে কালো রঙে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য।

সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারেও পরে এসেছিলেন কালো ব্লেজার। কালো যেন ঋতুপর্ণাকে এনে দেয় আলাদা আত্মবিশ্বাস। এক পোশাক ঘুরেফিরে তিন-চার বছর ধরে চালাতে পারেন বাংলাদেশের এই সুপারস্টার।

আরও পড়ুন
সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদ হয়েছেন তহুরা খাতুন
পোশাক: ক্লাব হাউস, সাজ:পারসোনা। ছবি: কবির হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজি বিভাগে পড়াশোনা করছেন ঋতুপর্ণা। তবে খেলার কারণে পড়াশোনায় তেমন একটা সময় দেওয়া হয় না। ক্যাম্পের কারণে সারা বছর ঢাকাতেই থাকা হয়। এর মধ্যে উৎসবকে কেন্দ্র করে যে লম্বা ছুটি পান, সেই ছুটিতে ছুটে যান গ্রামে, মায়ের কাছে। সেখানেই যেন সব প্রশান্তি।

ক্লাব ফুটবলে ঋতুপর্ণার পছন্দের দল রিয়াল মাদ্রিদ। ছোটবেলায় রোনালদোর খেলা পছন্দ ছিল, সেখান থেকেই রিয়াল মাদ্রিদকে ভালো লাগার শুরু। তবে জাতীয় দল হিসেবে তাঁর পছন্দ আর্জেন্টিনা। নিয়মিত রুটিনের ভেতরে থাকার কারণে খেলা খুব একটা দেখা হয়ে ওঠে না। অবসরে খেলা দেখে আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই কেটে যায়, আর না হলে ঘুম। ঘুমের মতো আরাম আর কিছুতেই খুঁজে পান না ঋতুপর্ণা।

ঋতুপর্ণা চাকমা আধুনিক নকশার পোশাকও পরেন
পোশাক: ঢেউ, সাজ: পারসোনা। ছবি: কবির হোসেন

বাংলাদেশ নারী দলের ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুনের গল্পটা যেন সিনেমার স্ক্রিপ্টের মতো করে লেখা। বাংলাদেশ জাতীয় দলে যে বছর অভিষেক, সে বছরই তিনি পেয়েছিলেন প্রথম আলো বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদের পুরস্কার।

এরপর থেকে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন, আঘাত পেয়ে দলের বাইরেও ছিলেন বেশ অনেক দিন। হতাশায় একসময় খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবারও দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষসেরা নারী ক্রীড়াবিদ হয়েছেন ‘কলসিন্দুরের মেসি’ তহুরা খাতুন।

আরও পড়ুন
কালো যেন ঋতুপর্ণাকে এনে দেয় আলাদা আত্মবিশ্বাস
পোশাক: ঢেউ, সাজ: পারসোনা। ছবি: কবির হোসেন

ছোটবেলায় ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবকিছু করতেন তহুরা খাতুন। মার্বেল খেলা, সাইকেল চালানো, মাছ ধরা—সবকিছুতেই তিনি ছেলেদের মতো সমান পারদর্শী। শহরের কোলাহল ছেড়ে গ্রামের সবুজ ও নির্জন পরিবেশই তাঁর বেশি পছন্দ। যে কারণে একটু অবসর পেলেই ছুটে যান শহর ছেড়ে গ্রামে। পুরোনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেতে ওঠেন আনন্দে।

পুকুরে মাছ ধরা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া আর সাইকেল চালিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেরিয়ে কেটে যায় সময়। মায়ের হাতের মাছ–ভাতে খুঁজে নেন প্রশান্তি। জাতীয় দলে আসার পর অবশ্য সেই খাবার মুখে ওঠে কালেভদ্রে।

খেলার বাইরে আড্ডা দিয়ে সময় কাটে তহুরার
পোশাক: ঢেউ, সাজ: পারসোনা। ছবি: কবির হোসেন

ছেলেবেলা থেকেই ছেলেদের মতো ছোট চুলের কাট পছন্দ তহুরার। এত বছর পরও মাথায় সেই কাটই শোভা পাচ্ছে। কোনো অনুষ্ঠান হলে ফরমালিটি মেনে পরা হয় ব্লেজার। নইলে শহরে জিনস-টপস আর টি-শার্টেই তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য।  লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনা আর বার্সেলোনার বিশাল ভক্ত তহুরা।

তবে খেলা দেখার সময় হয়ে ওঠে না। রাত জেগে খেলা দেখায় রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। তাই তো হাইলাইটস দেখেই তৃপ্ত থাকতে হয়। আর খেলার বাইরে আড্ডা দিয়েই তাঁর কাটে সময়।

আরও পড়ুন