ইতিহাসের খোঁজে ফরিদপুরের গিরিধর

ফেসবুক প্ল্যাটফর্মটির নাম ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’। ফরিদপুরের গিরিধর দের একক উদ্যোগে ২০১৬ সালে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফর্মে এখন ১০ লাখের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর আনাগোনা। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি ডিজিটাল সংগ্রহশালা গড়ে তোলাই ছিল গিরিধরের লক্ষ্য। তবে এই কাজগুলো করার পাশাপাশি এখন মানুষে মানুষে সেতুবন্ধও গড়ে দিচ্ছে এই প্ল্যাটফর্ম। সম্প্রতি যেমন ৪৭ বছর আগের একটি ছবির মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া পাঁচ বান্ধবীর পুনর্মিলন ঘটিয়েছে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’।

ব্রিটিশ আমলের রেডিওটা পরম যত্নে আগলে রাখতেন সুধীর কুমার দে বণিক। পুরোনো রেডিওর প্রতি বাবার এত মায়া কেন, কিছুতেই বুঝতেন না ছোট্ট গিরিধর। বুঝেছেন বড় হয়ে, যখন জেনেছেন, সেটা ছিল এলাকার প্রথম বেতারযন্ত্র।

সুধীর কুমার দের সংগ্রহে এমন আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য শখের জিনিস ছিল। ২০০১ সালে সাম্প্রদায়িক হামলায় বাড়ির দৈনন্দিন জিনিসপত্রের সঙ্গে এগুলোও লুট হয়ে যায়। গিরিধর দেরা সব হারানোর কষ্ট বুকে নিয়েই বড় হয়েছেন।

গিরিধর দে
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চাঁদহাট গ্রামে গিরিধরদের বাড়ি। ২০১৩ সালে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে স্নাতকে ভর্তি হন ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। সেখান থেকেই এখন স্নাতকোত্তর করছেন।

আরও পড়ুন

পড়াশোনার পাশাপাশি দেশীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন গিরিধর। ২০১৬ সালে শুরু করেন ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ নামের উদ্যোগ। ফেসবুকে চালু করেন একই নামের পেজ ও গ্রুপ। দিনে দিনে ফেসবুকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখন তো গ্রুপটির সংগ্রহে ৭০ হাজার ছবি।

একা হাতেই গ্রুপটি পরিচালনা করেন গিরিধর। দেশের নানা পেশার বিখ্যাত মানুষেরা তাঁর প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিটি পোস্ট অনুমোদন করার আগে তথ্য যাচাই করেন তিনি। খটকা লাগলে জেনে নেন গবেষকসহ সেই বিষয়ের মানুষের কাছে।

আরও পড়ুন

এই কাজের স্বীকৃতিও মিলছে। গত বছর ইয়াং বাংলার ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। এসব পুরস্কার-সম্মাননা গিরিধরকে হয়তো প্রেরণা জোগায়। প্রয়াত বাবার দেখানো পথে হাঁটতে পেরে তিনি গর্বিত। সংগ্রহের সলতেটা যে বাবা সুধীর কুমার দে–ই তাঁর মধ্যে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন।