দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ কি থাকা উচিত?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। সংখ্যায় তাঁরা নেহাত কম নন। অনলাইন-অফলাইনে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চলছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচিও চোখে পড়েছে।
দাবিদাওয়াগুলো যৌক্তিক কি না কিংবা সেটা বিবেচনা করা যায় কি না, এ বিষয়ে উভয় পক্ষের যুক্তি–তর্কই বিশ্লেষণ করাটা জরুরি। সাধারণ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় উচ্চশিক্ষার সুযোগ অবারিত রাখা হয়। বয়স বা সময় সেখানে কোনো বাধা নয়। কারও যদি যোগ্যতা থাকে, তিনি তাঁর ইচ্ছামাফিক যেকোনো বয়সে পছন্দের বিষয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার দুয়ার সংকুচিত করার প্রয়াসই যেন বেশি দেখা যায়।
বাংলাদেশের মতো জনবহুল এবং সীমিত সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন দেশের হিসাব অনেক দিক থেকেই উন্নত দেশগুলোর মতো হবে না, এই বাস্তবতাও ভুলে গেলে চলবে না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখতে চায় না, তাদের যুক্তিগুলোও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পড়ার বিষয় কিংবা ফলাফল যা-ই হোক, দিন শেষে নিজের উদ্যোগেই যে নিজেকে তৈরি করতে হয়, এই বার্তাও শিক্ষার্থীদের দেওয়া প্রয়োজন।
বহুবার না হোক, অন্তত দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া যায় কি না, এটা কিন্তু ভেবে দেখাই যায়। এতে আহামরি কোনো সমস্যা তৈরি হবে না বলেই আমি মনে করি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন এই সুযোগ আছে। তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে তো শুনিনি।
তবে হ্যাঁ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ চালু করতে গেলে হয়তো কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। যেমন দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যেহেতু এক বছর বেশি সময় পাবে, এতে করে একধরনের বৈষম্য তৈরি হবে। আরেকটি সমস্যা হলো, অনেকে প্রথমবারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিষয়ে ভর্তি হয়েও দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সুযোগ নিয়ে বিষয় বা বিশ্ববিদ্যালয় বদলে ফেলেন। ফলে তিনি প্রথমে যেখানে ভর্তি হয়েছিলেন, সেখানে একটি আসন ফাঁকা হয়ে যায়। এই প্রবণতা বা সমস্যা কীভাবে দূর করা যায়, সেটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
চ্যালেঞ্জ উতরানোর জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখা যায়। যেমন—
১. প্রথমবার যাঁরা পরীক্ষা দেবেন, তাঁরা যেহেতু দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার্থীদের তুলনায় সময় কম পাবেন, তাই বৈষম্য দূর করতে একটা নিয়ম করা যেতে পারে। যেমন দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিলে ৫ নম্বর কাটা যাবে। যেমনটা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় হয়। এই পদ্ধতিতে একধরনের সমতা তৈরি হবে।
২. আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নিয়ে অনেকে এক বছর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বিষয়ে পড়ে তারপর ছেড়ে দেন। আসন ফাঁকা থেকে যায়। আমার মতে, এই সমস্যার সমাধান হতে পারে দুইভাবে—
ক. একবার যদি কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যান, দ্বিতীয়বার তিনি আর ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন না। এই সুযোগ শুধু তাঁদের জন্যই থাকবে, যাঁরা প্রথমবার ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দেননি, কিংবা দিয়েও সুযোগ পাননি।
খ. আর যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ রাখা হয়, তাহলে দ্বিতীয়বারে প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১০-১২ নম্বর কেটে রাখা যেতে পারে। অথবা একবার ভর্তি হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার ভর্তির ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থা রাখা যায়। এতেও বিভাগ ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা কমবে।
শিক্ষার্থীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করেই সম্প্রতি সবার জন্য স্নাতকোত্তরের দরজা খুলে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একইভাবে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের চাওয়াটুকু বিবেচনা করা উচিত। সবাই মিলে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হলে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো উপায় বেরোবে।