ভালো থাকুন
পারকিনসনস রোগের ব্যায়াম
শুরুর দিকে কোনো কিছু ধরে এক পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। পরবর্তী সময়ে না ধরেই একপায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।
পারকিনসনস মস্তিষ্কের একধরনের ক্ষয়রোগ। এর ফলে স্বাভাবিক চলাফেরার গতি কমে যায়। আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামে একধরনের রাসায়নিক বা নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয়। এটা শরীরের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণে সংকেত পাঠায়। পারকিনসনস রোগ হলে ডোপামিন তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে রোগীর স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হয়।
কাঁপুনি পারকিনসনস রোগের অন্যতম উপসর্গ। সাধারণত কোনো ভারী কাজ না করেও কিংবা আরামদায়ক অবস্থায় থাকার সময় রোগীর হাত, পা, বাহু, ঠোঁট বা আঙুল কাঁপতে থাকে। এ ছাড়া পারকিনসনস হলে হাত–পা–শরীর নাড়ানোয় ধীরগতি, রিজিডিটি বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ শক্ত হয়ে যাওয়া, শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা, স্মৃতিভ্রম ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এ রোগ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে অনেকটাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। আর এ জন্য নিয়মিত নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
কী করবেন
● পারকিনসনস রোগের উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই একজন নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
● উপসর্গের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এলে একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে নিয়ম মেনে ব্যায়াম করার জন্য একটি তালিকা তৈরি করে নিতে হবে এবং তা মেনে চলতে হবে। সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন দৈনিক অন্তত আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামের মাত্রা রোগীর লক্ষণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করবে।
যেসব ব্যায়াম করবেন
● স্ট্রেচিং: একটি চেয়ারে বসে ঘাড় একবার ডান দিকে, একবার বাঁ দিকে ঘোরান। ঘাড় পেছনের দিকে টেনে নিয়ে কাঁধের সঙ্গে লাগানোর চেষ্টা করুন। দুই হাত সামনে নিয়ে কবজির ওপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। একইভাবে পায়ের ব্যায়াম করতে হবে।
● স্কোয়াটিং: স্বাভাবিকভাবে চেয়ারে বসুন। এরপর উঠে দাঁড়ান। কিছুদিন পর চেয়ার সরিয়ে দিতে হবে। তখন হাঁটু ভাঁজ করে অর্ধেক বসার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ বার এ ব্যায়াম করতে হবে।
● ব্যালেন্সিং: শুরুর দিকে কোনো কিছু ধরে এক পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। পরবর্তী সময়ে না ধরেই এক পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। এভাবে একবার ডান পা, আবার বাঁ পা ব্যবহার করে এ ব্যায়াম করুন।
● হাঁটা: মেঝেতে পায়ের ছাপ এঁকে, সেই অনুযায়ী প্রতিটি ছাপে পা ফেলে হাঁটার অনুশীলন করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। বাড়ির বারান্দা, সড়ক, পার্কসহ যেকোনো জায়াগায় হাঁটতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, জায়গাটা যেন সমতল ও নিরাপদ হয়। হাঁটার সময় অবশ্যই জগিং সু কিংবা আরামদায়ক জুতা পরতে হবে।
সাধারণ পরামর্শ
● নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
● একটানা কোথাও বসে থাকবেন না। আধা ঘণ্টা অন্তর বসার জায়গা ও ভঙ্গিমা পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন।
● সামাজিক কার্যক্রমে নিজেকে জড়িত রাখুন।
● নিয়মিত লেখালেখি কিংবা গান শোনার চেষ্টা করুন। এতে মনঃসংযোগ বাড়বে।
● সব সময় প্রাণবন্ত থাকার চেষ্টা করুন।
●অস্থির হবেন না। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলে এ রোগ জয় করার চেষ্টা করুন।