মেছতার কারণ ও প্রতিকার

মেছতা ত্বকের খুব সাধারণ একটি রোগ। এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান এসকেএফ নিবেদিত ত্বক আলাপনে। ডা. নাদিয়া নিতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রাশিদুল হাসান। অনুষ্ঠানটি ১ এপ্রিল প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

মেছতা হলো ত্বকের ওপর দেখা দেওয়া বাদামি বা কালো দাগ। ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে মুখে মেছতা পড়তে দেখা দেয়। হাত বা বুকের ওপরও হতে পারে। মুখের ঠিক কোথায় মেছতা হচ্ছে, সেই অনুযায়ী একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন কপাল, নাক, মুখ, থুতনিতে হলে একে সেন্ট্রোফেসিয়াল, নাক ও গালে হলে ম্যালার এরিয়া ও শুধু থুতনি বরাবর হলে একে মেন্ডিবুলার মেছতা বলে। মেছতা যদি ত্বকের ওপরের স্তরে হয়, তখন তাকে এপিডার্মাল মেলাজমা ও ভেতরের স্তরে হলে ডার্মাল মেলাজমা বলে। দুই স্তরেই যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেটাকে মিক্স মেলাজমা বলা হয়।

মেছতার প্রধান কারণ হচ্ছে জেনেটিক প্রিডিসপজিশন। এ ছাড়া সূর্যের আলো, চুলার আগুন, গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও কসমেটিকসের প্রতিক্রিয়ার জন্য এটি হতে পারে। ইদানীং কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, থাইরয়েডের সমস্যা হলেও মেছতা দেখা দিতে পারে—এমনটাই জানান ডা. মো. রাশিদুল হাসান। তিনি আরও বলেন, হরমোনাল কারণে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মেছতা বেশি দেখা দেয়। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের ভেতর এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়।

আমাদের দেশে সানব্লক বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করার প্রবণতা খুব কম। মেছতা প্রতিরোধে এটি অনেক কার্যকর। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা অনেক বেশি থাকে। এ সময় বাসা থেকে বের হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে ভালোভাবে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। টানা তিন ঘণ্টা রোদে থাকলে, ঘেমে গেলে বা সাঁতার কাটলে সেটা পুনরায় লাগিয়ে নিতে হবে।

যাঁদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনে সমস্যা হয়, তাঁদের গাইনোকোলজিস্ট দেখিয়ে অন্য পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেকোনো কসমেটিকস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে। এ নিয়ে ডা. মো. রাশিদুল হাসান বলেন, ভালো ব্র্যান্ড দেখে কসমেটিকস পণ্য কেনা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ডার্মাটোলজিক্যালি টেস্টেড লেখা আছে, এমন পণ্য ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া তিনি প্রতিরোধ নিয়ে বলেন, হরমোনের সমস্যা থাকলে তাঁর চিকিৎসা করাতে হবে। আর গর্ভাবস্থায় মেছতা হলে সেটা নিয়ে আসলে কিছু করা যায় না। বাচ্চা জন্মের পর এটি এমনিতেই সেরে যায়। যদি না সারে, তখন চিকিৎসা করতে হয়।

মেছতার চিকিৎসা তিন ভাগে ভাগ করা হয়। ওরাল মেডিকেশন, টপিক্যাল মেডিকেশন, প্রসিডিউয়াল (সার্জারি, লেজার, ইনজেকশন,কেমিক্যাল পিলিং)। সমস্যার প্রকোপের ওপর চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে, তা নির্ভর করে। যাঁদের মেছতার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তাঁদের অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

অনুষ্ঠানে ত্বকের স্বাস্থ্যের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখান থেকে জানা যায়, খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মেছতার প্রত্যক্ষ না হলেও একটি পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। ত্বকের বিভিন্ন অংশ যেমন মুখ, হাত, বুকে যদি মেলানিন বেশি হয়, তাহলে কালো দাগ পড়ে। শরীরে মেলানিনের আধিক্য বাড়ার অন্যতম কারণ হলো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস। এটি প্রতিরোধের জন্য প্রচুর পরিমাণে সবুজ ও রঙিন ফলমূল, শাকসবজি খেতে হবে। এসব খাদ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হতে বাধা দেয়। এ ছাড়া তৈলাক্ত ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও ঘুম অনেক বেশি জরুরি।