মাসে দুবার পিরিয়ড হওয়া কি শারীরিক সমস্যার লক্ষণ?

এক মাসে দুবার পিরিয়ড হয়ে থাকলে দুশ্চিন্তা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
ছবি: সুমন ইউসুফ

একজন সুস্থ, স্বাভাবিক নারীকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত মাসিকচক্রের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। প্রকৃতির নিয়মই এমন। তবে এক মাসে কারও কারও পিরিয়ড দুবারও হয়ে থাকে। এটা কি স্বাভাবিক? নাকি কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ?

এ প্রসঙ্গে স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. আনিকা তাবাস্সুম জানালেন, নানান কারণেই এক মাসে দুবার পিরিয়ড হতে পারে। একজন নারীর মাসিকচক্র গড়ে ২৮ দিন। ২৮ দিনে চক্র সম্পন্ন হওয়ার অর্থ হলো একবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার দিন থেকে ২৮ দিন পর তাঁর আবার পিরিয়ড হবে। এই চক্র ২৮ দিন না হয়ে ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে যেকোনো দিনই হতে পারে। অর্থাৎ ২৮ দিনের চেয়ে কয়েক দিন কম বা বেশি হতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আবার কিছু শারীরিক সমস্যা, ওষুধ, এমনকি হঠাৎ করে ওজন খুব বেশি কমে বা বেড়ে গেলে কিংবা অতিরিক্ত ভারী ব্যায়ামের কারণেও মাসিকচক্র ছোট হয়ে আসতে পারে।

মাসে দুবার পিরিয়ড হওয়ার বিষয়টিকে কখন গুরুত্ব দিতে হবে, চলুন এই বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিই।

২১ দিন পর পিরিয়ড হলে

একবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার অন্তত ২১ দিন পর কারও স্বাভাবিকভাবেই পিরিয়ড শুরু হতে পারে। তবে যাঁর মাসিকচক্র আগে একভাবে চলছিল, হঠাৎ করে নিয়মিতভাবেই যদি তাঁর সময়টা কমে আসে, তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২১ দিনের আগে হলে

থাইরয়েড হরমোন কিংবা নারীত্বের হরমোন ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরনের মাত্রায় কোনো তারতম্য হয়ে থাকলে এ রকম হতে পারে। জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা পলিপ থাকলেও এমনটা হতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, কিছু জীবাণুর সংক্রমণ এবং প্রদাহও এমন সমস্যার জন্য দায়ী।

জীবনধারায় অতিরিক্ত মানসিক চাপ সামলাতে হলে কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি পরিবর্তন করা হলেও কখনো কখনো এমনটা হয়। কৈশোরে মাসিক শুরু হওয়ার পর এবং মেনোপজের কয়েক বছর আগে অবশ্য ২১ দিন বা তারও আগে মাসিক হওয়া স্বাভাবিক। তবু প্রকৃত কারণ জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

যদি এসব লক্ষণ থাকে

পিরিয়ড যত দিন পরপরই হোক, এসব লক্ষণ দেখা দিলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

  • অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।

  • ৭ দিনের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষরণ।

  • দুবার পিরিয়ড হওয়ার মাঝের সময়েও রক্তক্ষরণ।

  • তলপেটে তীব্র ব্যথা।

  • চোখমুখ বা হাতের তালু ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।

  • অতিরিক্ত ক্লান্তি।

  • মাথা ঘোরা।

যদি প্রয়োজন হয় চিকিৎসা

সমস্যা যে কারণে হচ্ছে, তা নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসক চিকিৎসাপদ্ধতি ঠিক করে দেবেন। রক্তশূন্যতা দেখা দিলে আয়রন খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হতে পারে। সঠিকভাবে চিকিৎসা নেওয়া না হলে রক্তশূন্যতা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। আর যে সমস্যার কারণে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সেটিও দিনে দিনে বাড়তে থাকবে। বাড়বে জটিলতা।

বিশেষ ক্ষেত্র

পিরিয়ড ছাড়াও অন্য সময় সামান্য রক্ত যেতে পারে। একে বলা হয় স্পটিং। যেমন পিরিয়ডের ১৪ দিন আগে যখন ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু আসে, তখন কারও কারও সামান্য রক্ত যেতে পারে। গর্ভধারণের ক্ষেত্রেও জরায়ু যখন ভ্রূণটিকে ধারণ করে, তখন কারও কারও সামান্য রক্ত যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বাদ পড়ে গেলেও এ রকম রক্তক্ষরণ হতে পারে।

আরও পড়ুন