স্ট্রোক হওয়ার প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টাকে কেন ‘সোনালি সময়’ বলা হয়

স্ট্রোক হওয়ার প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টাকে ‘সোনালি সময়’ বলা হয়
ছবি: প্রথম আলো

স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের আক্রমণ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান মৃত্যুর কারণ এবং দীর্ঘমেয়াদি পঙ্গুত্বেরও মূল কারণ। স্ট্রোকের দুটি প্রধান প্রকারের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ হলো ইসকেমিক স্ট্রোক, যেখানে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।

এ ধরনের স্ট্রোকের চিকিৎসায় থ্রম্বোলাইসিস নামক আধুনিক পদ্ধতিটি রোগীর জীবন বাঁচানো এবং স্থায়ী ক্ষতি কমানোর জন্য এক বৈপ্লবিক চিকিৎসা হিসেবে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পরিচিতি পেয়েছে।

আরও পড়ুন

থ্রম্বোলাইসিস কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে
ছবি: ফ্রিপিক

থ্রম্বোলাইসিস এমন একটি চিকিৎসাপদ্ধতি, যেখানে শিরায় বিশেষ ধরনের ওষুধ (যেমন টিস্যু প্লাজমিনোজেন অ্যাকটিভেটর বা টিপিএ) প্রয়োগ করা হয়। এই ওষুধ মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জমাট বাঁধা রক্তকে দ্রবীভূত করে দেয়, ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে দ্রুত রক্ত চলাচল পুনরুদ্ধার হয়।

ইসকেমিক স্ট্রোকের চিকিৎসায় ‘সময়’ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্ট্রোক হওয়ার প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টাকে ‘সোনালি সময়’ বলা হয়। যেহেতু মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষের বেঁচে থাকার জন্য রক্ত সরবরাহ অপরিহার্য, তাই রক্ত চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতি মিনিটে মস্তিষ্কের ৯০ লাখ কোষ মারা যেতে থাকে। তাই যত দ্রুত এই জমাট বাঁধা রক্ত সরানো যাবে, রোগীর পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা তত বাড়বে।

থ্রম্বোলাইসিসের ‘সোনালি জানালা’

থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসার প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো এর প্রয়োগের সময়কাল। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব থ্রম্বোলাইসিস শুরু করতে হয়। সাধারণত স্ট্রোক হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে এই চিকিৎসা শুরু করলে রোগীর সবচেয়ে বেশি উপকার হয়। একে থ্রম্বোলাইসিসের ‘চিকিৎসার জানালা’ বলা হয়। সাড়ে চার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে ওষুধ প্রয়োগের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং কার্যকারিতা কমে যায়।

কীভাবে বুঝবেন এবং করণীয় কী?

স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে
ছবি: প্রথম আলো

স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে রোগীকে এমন হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে স্ট্রোক ইউনিট আছে এবং থ্রম্বোলাইসিস করার সুবিধা রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে নিউরোসায়েন্স সেন্টারসহ কয়েকটি করপোরেট হাসপাতালে এই সুবিধা চালু করা হয়েছে।

লক্ষণগুলো মনে রাখার জন্য ‘বি ফাস্ট’ (BE FAST) পদ্ধতিটি খুব জরুরি:

B (Balance): ভারসাম্য হারানো।

E (Eyes): দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া।

F (Face): মুখের একপাশ বেঁকে যাওয়া।

A (Arms): হাত বা পা দুর্বল হয়ে যাওয়া।

S (Speech): কথা জড়িয়ে যাওয়া।

T (Time): সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো।

দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা গেলে থ্রম্বোলাইসিস পদ্ধতি রোগীর পঙ্গুত্ব দূর করতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাও সম্ভব হতে পারে। তাই স্ট্রোকের লক্ষণ দেখামাত্রই একমুহূর্তও দেরি না করে জরুরি বিভাগে যোগাযোগ করুন।

ক্লিনিক্যাল স্টাফ, নিউরোসায়েন্স সেন্টার, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা।

আরও পড়ুন