ক্ষত শুকাতে দেরি হয় কেন?

ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে নানা কারণে

ক্ষত সব সময় দ্রুত শুকায় না। অনেক সময় কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়। এমনকি কয়েক মাসও ক্ষত থাকতে পারে। সাধারণত এসব ক্ষতকে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত বলা হয়। নানা কারণে ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এসব ক্ষত সারাতে হলে বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসা নিতে হয়। আর অবহেলা করলে এই ক্ষত থেকে আরও গভীরে হাড়ে সংক্রমণ, এমনকি চর্মজনিত ক্যানসারও হতে পারে। ক্ষত নিরাময় মানবদেহের একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া, যা চারটি সুনির্দিষ্ট পর্যায়ের মাধ্যমে হয়। এর মধ্যে আছে—হেমোস্ট্যাসিস, প্রদাহ, প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ।

একটি ক্ষত সফলভাবে নিরাময়ের জন্য ওপরের চারটি পর্যায়ই যথাযথ ক্রম ও সময় মেনে ঘটতে হবে। বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো ক্ষতস্থান পূরণের পর্যায়গুলোয় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, ফলে ক্ষত শুকাতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় লাগে। যেমন

মরা চামড়া বা কোষ: ক্ষতস্থানে মরা চামড়া বা কোষ থেকে গেলে বা শরীরের অংশ নয় এমন কিছু রয়ে গেলে।

সংক্রমণ: ক্ষতস্থানে জীবাণু আক্রমণ করলে শরীর তখন ক্ষত পূরণ না করে জীবাণু ধ্বংস করতে ব্যস্ত থাকে।

রক্তক্ষরণ: ক্ষতস্থানে যদি রক্তপাত হতেই থাকে, তাহলে নতুন কোষ তৈরি, জোড়া লাগা, মজবুত হওয়া বন্ধ থাকে।

রক্ত চলাচলে বাধা: ক্ষতস্থানে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হয়।

ক্ষত পূরণের জন্য শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি দরকার হয়
ছবি: পেকজেলসডটকম

খাদ্য ও পুষ্টির ঘাটতি: ক্ষত পূরণের জন্য শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিন, জিংক, আয়রন ও ভিটামিন সি প্রয়োজন। এসব জিনিসের ঘাটতি থাকলে ক্ষত শুকাবে না। অন্যদিকে, বাড়তি ওজনের কারণেও ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।

কিছু রোগ: ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতার অভাব, ক্যানসার, রক্তনালির সমস্যা বা রক্ত চলাচলে সমস্যাজনিত রোগ থাকলে ক্ষত পূরণে দেরি হয়।

ধূমপান: ধূমপানের অভ্যাস থাকলে ক্ষতস্থান পূরণে ধীরগতি দেখা যায়। সেই সঙ্গে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া ডায়াবেটিস, নিউরোপ্যাথি ও কুষ্ঠ থাকলে অনুভূতি কমে যাওয়ার কারণে বারবার ক্ষত বা আঘাত লাগলেও রোগী বুঝতে পারেন না, ফলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতের সৃষ্টি হয়। বিশেষ ধরনের জীবাণু দিয়ে সংক্রমণ হলেও ক্ষত দীর্ঘমেয়াদি হয়।

সে জন্য শরীরে কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হলে এবং স্বাভাবিকের (৩-৪ সপ্তাহ) তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস, ওষুধ, অভ্যাস ও অন্যান্য রোগ সম্পর্কে জেনে প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা, রক্ত চলাচল ও স্নায়ু পরীক্ষা, ক্ষতস্থানের পুঁজ এমনকি ক্ষতস্থান থেকে সামান্য মাংস কেটে পরীক্ষা করে ক্ষত না শুকানোর কারণ বের করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করবেন।

সুতরাং দুর্ঘটনাবশত শরীরের কোথাও ক্ষতের সৃষ্টি হলে এবং শুকাতে দেরি হলে হেলাফেলা না করে নিকটস্থ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ডা. ফাতেমা-তুজ-জোহরা, রেজিস্ট্রার (সার্জারি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আরও পড়ুন