বিশ্ব হার্ট দিবস কেন গুরুত্বপূর্ণ
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘একটা স্পন্দনও যাতে মিস না হয়’। অর্থাৎ যত্ন নিতে হবে প্রতিটা হৃৎস্পন্দনের। এই প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়, হৃদয়ের সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে হৃদ্স্পন্দনকে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও সময়মতো চিকিৎসা—এসবেই নিহিত আছে হৃদয়ের সুরক্ষা। ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেকেই ছোটখাটো লক্ষণকে উপেক্ষা করি।
অনেক সময় বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনকে ‘সামান্য ব্যাপার’ ভেবে এড়িয়ে যাই। অথচ এগুলো হতে পারে বড় বিপদের আগাম বার্তা।
বিশ্ব হার্ট দিবস কেন গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্ব হার্ট দিবস কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়। বিশেষ এই দিবসের মানে হলো, সমাজের প্রত্যেক মানুষ যাতে নিজের এবং তার পরিবারের হৃৎস্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিতে উদ্বুদ্ধ হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা। দিনটি ঘিরে সারা বিশ্বের মানুষকে সচেতন করতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়, তা হলো—
হৃদ্রোগ সম্পর্কে সবার কাছে সঠিক ধারণা পৌঁছে দেওয়া।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি নির্ণয়ে প্রাথমিক স্ক্রিনিং হিসেবে নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে, রক্তের সুগার এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখতে মানুষকে উৎসাহিত করে তোলা।
হৃদ্রোগের প্রতিরোধমূলক প্রচারণা কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বাড়ানো।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম এবং ধূমপানমুক্ত জীবন গড়তে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।
প্রতিরোধের বার্তা
বংশগতির প্রভাব অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কের কারও হৃদ্রোগের পারিবারিক ইতিহাস ছাড়া হৃদ্রোগের অন্য বড় ঝুঁকিগুলো হলো—
ধূমপান
মদ্যপান
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
স্থূলতা
ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ
বংশগতির প্রভাবের ওপর আমাদের কোনো হাত নেই, কিন্তু বাকি সব ঝুঁকিই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। যাঁদের পারিবারিক হৃদ্রোগের ইতিহাস আছে, অর্থাৎ বংশগতির প্রভাব থাকার আশঙ্কা বেশি, তাঁরা যদি অন্য ঝুঁকিগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তাঁরাও হৃদ্রোগ প্রতিরোধে নিজেদের এক ধাপ এগিয়ে রাখেন।
প্রতিদিনের ছোটখাটো কিছু সিদ্ধান্ত এবং তার বাস্তবায়ন হতে পারে হৃদ্রোগ থেকে জীবন রক্ষাকারী।
নিয়মিত হাঁটাচলা অথবা একটু ব্যায়াম যেমন কমপক্ষে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা হাঁটা, খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও চর্বি কমানো, পর্যাপ্ত ঘুমানো, মানসিক চাপমুক্ত থাকা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এসবই আপনার সুস্থ হৃৎস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।
বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা
বিশ্বব্যাপী আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে হৃদ্রোগ। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে এই হার বিশ্বের অন্য অংশের তুলনায় বেশি।
হৃদ্রোগের চিকিৎসা, প্রতিরোধ এবং গবেষণায় হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জনরা বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাঁরা রোগ নির্ণয়ে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, স্ট্রেস টেস্ট, রক্ত পরীক্ষা, এনজিওগ্রাম, ২৪ ঘণ্টার ইসিজি বা হল্টার মনিটরিংয়ের মতো পরীক্ষার সাহায্য নেন। চিকিৎসায় ব্যবহার করেন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ।
ইন্টারভেনশনাল পদ্ধতিতে হার্টের রক্তনালিতে স্টেন্ট বা রিং লাগিয়ে চিকিৎসা করেন। দরকার হলে রোগীকে বাইপাস সার্জারির সিদ্ধান্ত নেন। রোগ প্রতিরোধে হৃদ্রোগের ঝুঁকি নির্ণয় করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেন।
এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স, পুষ্টিবিদ—সবার সম্মিলিত ভূমিকা সমাজে বিশেষ অবদান রাখছে।
বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫–এর মূল বার্তা আমাদের জানাচ্ছে, আমাদের হৃদয়, আমাদের জীবনের ছন্দ। এই ছন্দ ধরে রাখতে হলে প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব নিজের যত্ন নেওয়া, পরিবারের যত্ন নেওয়া। তাই পরিবারের সবার হৃৎস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হোন।
ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা