হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ১২ বছর আগেই টের পাওয়া যায়, সতর্ক হবেন কীভাবে

হার্ট অ্যাটাক বলতে সাধারণভাবে তীব্র বুকে ব্যথার মতো কোনো উপসর্গের কথাই মনে হয়। কেউ কেউ হয়তো জানেন, এ ব্যথা পেটের ওপরের অংশেও হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণকে অ্যাসিডিটি বা ‘গ্যাসের ব্যথা’ ভেবে ভুলও করেন অনেকে। তবে সেসব তো হার্ট অ্যাটাকের সময়ের কথা। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অনেক বছর আগেও নিজের শরীরে কিছু পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন আপনি। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের প্রকাশিত এক গবেষণার সূত্র ধরে জানা গেছে এমনটাই।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ১২ বছর আগেই টের পাওয়া যায়ছবি: প্রথম আলো

যে লক্ষণটি খেয়াল রাখবেন

ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি থেকে জানা গেল, যাঁদের হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর বা স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে, তাঁদের মাঝারি বা তীব্র ধাঁচের শরীরচর্চার সক্ষমতা কমে যেতে পারে বহু বছর আগে থেকেই।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ১২ বছর আগে থেকেই এই লক্ষণ প্রকাশ পায়। আর হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর বা স্ট্রোকের পূর্ববর্তী দুই বছরের মধ্যে এই সক্ষমতা অনেক বেশি কমে যায়।

গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৩ হাজার ৬৮ জন ব্যক্তির মধ্যে পরবর্তী সময়ে হার্ট অ্যাটাক বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ, হার্ট ফেইলিউর বা স্ট্রোক হয়েছিল ২৩৬ জনের। তাঁদের অসুস্থতার আগের বছরগুলোর লক্ষণকে বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকেরা। তুলনা করে দেখেছেন অন্যদের সঙ্গে। আর তাতেই উঠে এসেছে এ তথ্য।

কোনটা ভয়ের, কোনটা ভয়ের নয়

অনভ্যস্ত ব্যক্তি শরীরচর্চা শুরু করতে গিয়েই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। হাঁপিয়ে উঠতে পারেন মাঝারি ব্যায়াম করতে গিয়ে। এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।

অনভ্যস্ততা কাটিয়ে ওঠার উপায় আছে। ধীরে ধীরে নিজেকে ব্যায়ামে অভ্যস্ত করে তুলুন। প্রশিক্ষকের সহায়তা নেওয়া ভালো।

হঠাৎ কোনো একটা দিন ব্যায়াম করতে গিয়ে ক্লান্ত বা অবসন্ন লাগলে সেটিকেও ভয়াবহ কোনো সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করবেন না। বিশ্রাম নিন।

ব্যায়ামের একটা ধারা নিজের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়ার পরে যদি ব্যায়ামের সক্ষমতা ক্রমাগত কমতে থাকে, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কেন আপনি আগের মতো ব্যায়াম করতে পারছেন না, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা খুঁজে বের করবেন তিনি। এটি কি কেবল বয়সের কারণে শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়া, নাকি হৃৎপিণ্ডের কোনো সমস্যার কারণে এমনটা হচ্ছে, তা বের করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

মাঝারি বা ভারী ব্যায়াম কী

মাঝারি বা তীব্র ধরনের শরীরচর্চার সক্ষমতা কমে যাওয়ার যে লক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, তা অনুভব করতে হলে আপনাকে এটাও জানতে হবে, কোন ধরনের ব্যায়াম এর মধ্যে পড়ে। মাঝারি ব্যায়াম হলো সেসব ব্যায়াম, যা করতে গেলে আপনার হৃৎপিণ্ডের গতি এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বাড়ে।

মাঝারি ব্যায়াম শুরুর মিনিট দশেক পর হালকা ঘামতে শুরু করবেন আপনি। এ ধরনের ব্যায়ামের সময় কথা বলতে পারলেও স্বাভাবিক বা সুরেলা কণ্ঠে কিছু বলতে পারবেন না।

মাঝারি ব্যায়াম শুরুর মিনিট দশেক পর হালকা ঘামতে শুরু করবেন আপনি
ছবি: কবির হোসেন

অন্যদিকে ভারী ব্যায়ামে আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত এবং ভারী হয়ে আসবে। হৃৎপিণ্ডের গতিও অনেক বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক মিনিটেই ঘামতে শুরু করবেন আপনি। শ্বাস নেওয়ার জন্য বিরতি না নিয়ে কয়েকটির বেশি শব্দ বলতেই পারবেন না।

সুস্থ থাকতে আপনি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নির্দেশনামাফিক এ ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন। তবে ব্যায়াম করতে গিয়ে নিজেকে অতিরিক্ত চাপে ফেলাও ঠিক নয়।

নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শরীরচর্চা করুন এবং খেয়াল রাখুন, এ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে কি না। তাহলে হার্ট অ্যাটাকের বহু বছর আগেই হৃৎপিণ্ডের অসুস্থতাকে চিহ্নিত করার সুযোগ পাবেন আপনি।

আরও পড়ুন

সুস্থ থাকতে আরও যা

  • একদিনে লম্বা সময় ব্যায়াম না করে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ভাগ করে ব্যায়াম করুন।

  • এমন ব্যায়াম করুন, যা আপনি উপভোগ করেন।

  • ব্যায়াম ছাড়াও এমনভাবে জীবন যাপন করুন, যাতে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা হয় কম।

  • লিফটের বদলে সিঁড়ির ব্যবহার কিংবা যাতায়াতের পথে কিছুটা হাঁটা দারুণ অভ্যাস।

এমন ব্যায়াম করুন, যা আপনি উপভোগ করেন
ছবি: কবির হোসেন

শেষ কথা

হৃৎপিণ্ডের সুস্থতায় শরীরচর্চার বিকল্প নেই। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সুস্থ থাকার জন্য সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের শরীরচর্চা কিংবা অন্তত ৭৫ মিনিট তীব্র ধরনের শরীরচর্চা করা প্রয়োজন।

এই দুই ধরনের ব্যায়ামের সমন্বয়ও করা যেতে পারে। পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন পেশি সুগঠিত করার ব্যায়ামও করা প্রয়োজন। এই নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আপনি এটাও অনুভব করতে পারেন, হৃৎপিণ্ডের বড় ধরনের রোগে আপনার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না।


সূত্র: ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, মায়ো ক্লিনিক

আরও পড়ুন