খতনা করানোর আগে এই বিষয়গুলো জানা থাকা দরকার

আমাদের দেশে শীতকালে স্কুল বন্ধ থাকে, তাই সাধারণত এই সময় শিশুদের খতনা বা মুসলমানি করানো হয় সবচেয়ে বেশি। রাজধানীতে সম্প্রতি খতনার পর ৫ বছর বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেসথেসিয়া’ দিয়ে শিশুটির খতনা করানো হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। একটা সময় হাজাম দিয়ে খতনা করানোর চল থাকলেও আজকাল চিকিৎসকের কাছে গিয়ে খতনা করানো হয় বেশি। নিরাপত্তার কথা ভেবেই চিকিৎসককে দিয়ে খতনা করান অভিভাবকেরা। তারপরও সারকামসিশন বা খতনা করানোর আগে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. রেজা আহমদ

চিকিৎসকের সহায়তায় এখন খতনা করার চল বেশি
ছবি: পেক্সেলস

সারকামসিশন শব্দটি এসেছে লাতিন সারকামডায়ার থেকে, যার অর্থ হলো চারদিক থেকে কেটে ফেলা। পুরুষের লিঙ্গের অগ্রভাগের কিছু চামড়া চারদিক থেকে কেটে নেওয়ার পদ্ধতির নামই হলো সারকামসিশন বা খতনা।

কেন খতনা করা হয়?

সাধারণত ধর্মীয় রীতি অনুসারে মুসলিম ছেলে শিশুদের এটি করা হয়। কিছু কিছু জন্মগত রোগেও সাকামসিশন করার নির্দেশনা আছে। এর মধ্যে আছে—

  • যাদের লিঙ্গের অগ্রভাগের ছিদ্র ছোট থাকে, বারবার তাদের প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে।

  • যাদের চামড়া গ্লান্স লিঙ্গের পেছনে আটকে গিয়ে ব্যথা করে, তাদের ক্ষেত্রে এটি করা হয়।

  • এই দুটি অবস্থার মেডিকেল টার্ম হলো ফাইমোসিস আর প্যারাফাইমোসিস।

  • আবার কারও কারও জন্য এটা করা নিষেধ। যেমন—

  • যাদের হিমোফিলিয়া নামের রক্তরোগ আছে, তাদের সারকামসিশন করতে বারণ করা হয়। কারণ কাটাছেঁড়া করা হলে তাদের রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না।

  • যাদের প্রস্রাবের নালির ছিদ্র ভিন্ন জায়গায় থাকে। এসব রোগীদের নালি ঠিক করার অস্ত্রোপচারের সময় লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া নতুন নালি তৈরিতে কাজে লাগে।

আরও পড়ুন

কোন বয়সে খতনা করা উচিত

  • বিশ্বের অনেক দেশেই জন্মের সঙ্গে সঙ্গে খতনা করে দেওয়া হয়। এ সময় শিশুর ব্যথাজনিত বোধ সেভাবে তৈরি হয় না, ফলে ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়।

  • তবে ৪ থেকে ১২ বছর বয়সের শিশুদের খতনা করলে সমস্যা সবচেয়ে কম হয়।

  • বেশি ছোট শিশুরা ভয় পায় ও কান্নাকাটি করে বেশি। আর বড়দের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ইরেকশনের কারণে রক্তপাত হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়।

  • তবে শিশুর খতনা করানোর আগে বাড়ি থেকে তাকে সাহস দিন। তাকে না বলে, গোপন করে বা জোর করে খতনা করাতে গেলে সার্জারির সময় আঘাতজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বর্তমানে কিছু ডিভাইস, এমনকি লেজারের মাধ্যমেও খতনার সার্জারি হচ্ছে। তবে ডিভাইস ব্যবহার করা হলে ব্যবহারকারী চিকিৎসক প্রশিক্ষিত কি না, সেটা জেনে নেওয়া জরুরি। লোকাল অ্যানেসথেসিয়া বা জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে এই অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হলে অবশ্যই শিশুকে ৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত অবেদনবিদ ও এনআইসিইউ সুবিধা না থাকায় অনেক সময় শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। তাই সন্তানের অস্ত্রোপচারের আগে কোন ধরনের অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা হবে, জেনে রাখা জরুরি।

খতনার অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতা এড়াতে

খতনার অস্ত্রোপচারে সবচেয়ে বেশি যে জটিলতা দেখা যায়, তা হলো, রক্তপাতজনিত সমস্যা। অনেক সময় বাড়ি নিয়ে আসার পর আবার রক্তপাত শুরু হতে পারে। বেশি রক্তপাত হলে প্রথমে কাপড় দিয়ে চেপে ধরে রাখতে হবে। এরপরও না কমলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এ ছাড়া খতনার পরে লিঙ্গে ইনফেকশন ও লিঙ্গের অগ্রভাগে ক্ষত হতে পারে। সঠিক ওষুধ ও নিয়মিত ড্রেসিংয়ে এগুলো সহজেই সেরে যায়। লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হলে অনেক সময় লিঙ্গের গোড়া তিন-চার দিন ফোলা থাকতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই।

এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের পরের এক সপ্তাহে ক্ষতস্থান থেকে অল্প রক্তমিশ্রিত পানির মতো তরল আসতে পারে। এটিও এমনিতেই সেরে যাবে। নিয়মিত কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে ওঠে। অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সময় লুঙ্গি বা নরম ঢিলে কাপড় পরলে ব্যথা কম হয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই ক্ষত সেরে গেলে স্বাভাবিক পোশাক পরে সব কাজ করা সম্ভব।

ডা. রেজা আহমদ, কনসালট্যান্ট সার্জন, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সিলেট

আরও পড়ুন