শীতকালীন কোন শাকসবজি কেন খাবেন
বাংলাদেশের খাদ্যাভ্যাসে নানা রকম শাকসবজির দেখা মেলে। তবে শীতকালে কাঁচা বাজার যতটা রঙিন থাকে, সেটা এ সময়ের শাকসবজির গুণেই। গ্রামীণ ও শহুরে জীবনযাত্রায় সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে প্রতিদিনের আহারে পর্যাপ্ত শাকসবজি জরুরি। শীতকালীন শাকসবজি এই দৃষ্টিকোণ থেকে পুষ্টিগুণে অনন্য, সহজলভ্য আর স্বাদের দিক দিয়েও উৎকৃষ্ট। শীতকালে দেশের বাজারগুলোতে পাওয়া যায় নানা রকম তাজা শাকসবজি। এর মধ্যে লালশাক, পালংশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি। এসব শাকসবজি শুধু স্বাদে নয়, বরং রোগ প্রতিরোধেও অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।
পালংশাক
পালংশাক উচ্চমানের পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর একটি শীতকালীন সবজি। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন আছে। তাই আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ ছাড়াও এটা হৃদ্রোগ এবং কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পালংশাকে থাকা উপাদানগুলো ক্যানসার, বিশেষ করে ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এর ক্যারোটিনয়েড ও শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট প্রোস্টেট ক্যানসার ও ওভারিয়ান ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তা ছাড়া পালংশাক হাড়কে মজবুত করে তুলতে, শরীরের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
শিম
শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। এটি সবজি হিসেবে এবং এর শুকনা বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। শিমের আঁশজাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে পাকস্থলী ও প্লীহার শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে। শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
মুলা
শীতের আরেকটি পরিচিত সবজি হলো মুলা। মুলা কাঁচা, রান্না দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। মুলা ভিটামিন ‘সি’র সমৃদ্ধ উৎস। মুলার চেয়ে মুলার পাতায় ভিটামিন ‘এ’ ছয় গুণ বেশি থাকে। মুলা বিভিন্ন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর বিটা-ক্যারোটিন হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। এটি শরীরের ওজন কমাতে কার্যকর। আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে। হুপিং কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে শীতের সবজি মুলা। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও মুলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
ফুলকপি
শীতের অন্যতম লোভনীয় সবজি ফুলকপি। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। এ ছাড়া আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার আছে প্রচুর পরিমাণে। এই সবজিতে আয়রন রয়েছে উচ্চমাত্রায়। রক্ত তৈরিতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্তঃসত্ত্বা নারী, বাড়ন্ত শিশু ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা ব্যক্তির জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী। ফুলকপিতে কোনো চর্বি নেই। কোলেস্টেরলমুক্ত ফুলকপি তাই উচ্চতা বাড়ানোর উপযোগী। পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে ফুলকপি বিশেষ কার্যকরী। এ ছাড়া মূত্রথলি ও প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যানসার প্রতিরোধে ফুলকপির ভূমিকা অনন্য। ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ফুলকপির ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্যও প্রয়োজনীয়।
বাঁধাকপি
শীতের টাটকা সবজির মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম। এটি উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন ও খুব সহজেই রান্না করা যায়। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ আছে। এ ছাড়া আছে সালফারের মতো খনিজ উপাদান। কাঁচা বাঁধাকপি পাকস্থলীর বর্জ্য পরিষ্কার করে। এ ছাড়া রান্না করা বাঁধাকপি খাদ্যদ্রব্য হজমে বেশ সহায়ক। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও সবজিটি দারুণ কার্যকর। বাঁধাকপি ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। বিশেষ করে কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে এই শীতকালীন সবজি বেশ ভূমিকা রাখে। বাঁধাকপি মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া বাঁধাকপি মানবদেহের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, আলসার নিরাময় ও দেহে রক্তসঞ্চালন উন্নত হয়।
টমেটো
টমেটো একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যালরিতে ভরপুর এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। কাঁচা ও পাকা—এই দুই অবস্থাতে টমেটো খাওয়া যায়। টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন ‘সি’ ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব দূর করে, ঠান্ডাজনিত রোগ ভালো করে। যেকোনো চর্মরোগ, বিশেষত স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা প্রকৃতির ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে। টমেটোতে লাইকোপিন আছে, যা শরীরের মাংসপেশিকে করে মজবুত করে, দেহের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের গোড়াকে করে আরও শক্তিশালী করে, চোখের পুষ্টি জোগায়।
মটরশুঁটি
মটরশুঁটিতে ক্যালরি ও ফ্যাট কম থাকায় ওজন কমাতে কাজ করে। ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগীদের জন্য উপকারী। এ ছাড়া মটরশুঁটিতে আছে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন বি৬, ফোলেট ও পটাশিয়াম। হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোলেস্টেরল কমাতে, হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে মটরশুঁটি। এতে পলিফেনাল থাকে, যা পাকস্থলী ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।