ফুট ড্রপ বা পেরোনিয়াল নার্ভ প্যালসি কী, কেন হয়, চিকিৎসা কী

ফুট ড্রপ হলে পায়ের পাতা ও আঙুল ওপরের দিকে তুলতে অসুবিধা হয়। ফলে হাঁটার সময় মাটিতে ঠেকে যায় পায়ের আঙুল। একে ড্রপ ফুট বা পেরোনিয়াল নার্ভ প্যালসি নামেও ডাকা হয়। এটি আদতে কোনো রোগ নয়, বরং অন্য কোনো স্নায়বিক অথবা মাংসপেশির সমস্যার একটি লক্ষণ।

ফুট ড্রপ হলে পায়ের পাতা ও আঙুল ওপরের দিকে তুলতে অসুবিধা হয়ছবি: স্ট্রেইটস পডিয়াট্রি

কেন হয়

ফুট ড্রপ সাধারণত তিন ধরনের কারণে হতে পারে—

১. স্নায়ুর সমস্যা

  • পেরোনিয়াল নার্ভে আঘাত বা চাপ—হাঁটুর নিচে বা ঊরুর ওপরের অংশে নার্ভ চেপে গেলে।

  • লাম্বার রেডিকুলোপ্যাথি—কোমরের মেরুদণ্ডে ডিস্ক স্লিপ বা স্পন্ডেলাইসিসের কারণে এল ৪ ও এল ৫ নম্বর নার্ভ রুট চাপা পড়া।

  • সায়টিক নার্ভ ইনজুরি—পেছনের ঊরুর স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

  • পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি—ডায়াবেটিস, অ্যালকোহলিজম, ভিটামিনের অভাব ইত্যাদির কারণে স্নায়ুর ক্ষতি।

২. মাংসপেশি ও স্নায়ুরোগ

  • মটোর নিউরন ডিজিজ।

  • মাসকুলার ডিস্ট্রোফি।

  • পোলিওমাইলাইটিস (পোলিও সংক্রমণ)।

  • চারকোট-মেরি-টুথ রোগ

৩. মস্তিষ্ক বা স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা

  • স্ট্রোক-ব্রেইনের সেই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, যা পায়ের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে।

  • মাল্টিপোল স্কেলোরেসিস।

  • স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি।

যেসব লক্ষণ দেখা যায়

  • হাঁটার সময় পায়ের আঙুল মাটিতে ঠেকে যাওয়া।

  • পা টেনে হাঁটা বা পা অতিরিক্ত তুলে তুলে হাঁটা।

  • গোড়ালি ওপরের দিকে তুলতে না পারা।

  • দীর্ঘ মেয়াদে পায়ের মাংসপেশি ক্ষয় হওয়া।

আরও পড়ুন

চিকিৎসা কী

এর চিকিৎসা মূলত কারণভিত্তিক। যেমন—

প্রথমত: মূল রোগের চিকিৎসা

  • ডিস্ক স্লিপ বা নার্ভ প্রেশার থাকলে ফিজিওথেরাপি, ওষুধ, প্রয়োজনে সার্জারি।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ।

  • স্ট্রোক হলে নিউরো-রিহ্যাবিলিটেশন।

  • নিউরো-মাসকুলার রোগে বিশেষায়িত চিকিৎসা।

দ্বিতীয়ত: ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন

  • স্ট্রেচিং ও স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ—বিশেষ করে টিবিয়ালিস অ্যান্টেরিয়র মাংসপেশি শক্তিশালী করা।

  • ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিমুলেশন নার্ভ—মাংসপেশি উদ্দীপিত করা।

  • গেট ট্রেনিং বা হাঁটার প্রশিক্ষণ।

  • কনট্রাকচার বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে নিয়মিত ব্যায়াম।

তৃতীয়ত: সহায়ক যন্ত্রপাতি

  • অ্যাঙ্কল ফুট অর্থোসিস—পা সোজা ও স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।

  • বিশেষ ধরনের জুতা।

চতুর্থত: সার্জারি (প্রয়োজনে)

  • লার্ভ ডিকম্প্রেশন—চাপা পড়া নার্ভ মুক্ত করা

  • টেনডন ট্রান্সফার—অন্য মাংসপেশির টেন্ডন স্থানান্তর করে পায়ের পাতা তুলতে সক্ষম করা।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা

আরও পড়ুন