জানেন কি ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে, মাথা থেকে নয়
ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ রোগ বিশ্বজুড়ে বয়সী ব্যক্তিদের মানসিক অক্ষমতা ও পরনির্ভরশীলতার অন্যতম কারণ। ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত হিসাবে দেখা যায়, পৃথিবীতে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ ব্যক্তি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। প্রতিবছর এই সংখ্যা ১০ লাখ করে বাড়ছে। বেশির ভাগ ব্যক্তি বিশ্বাস করেন, মস্তিষ্ক বেশি বেশি কর্মক্ষম রাখলে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ সম্ভব। কিন্তু অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের নিউরোসার্জন অরুণ এল নায়েক গবেষণার বরাত দিয়ে বলছেন, মাথা নয়, এই রোগ প্রতিরোধে পা শক্ত রাখাই সবচেয়ে জরুরি। ডা. অরুণ বলছেন, ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে, মাথা থেকে নয়।
ডিমেনশিয়া কী
ডিমেনশিয়া এমন এক শারীরিক পরিস্থিতি, যাকে অনেক রোগের ‘ছাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এসব রোগের কারণে মস্তিষ্ক ও এর চিন্তা করার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মে পড়ে ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে। একসময় স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্ত করে।
দ্রুত রোগ শনাক্ত, পরিবারের সহায়তা, জীবনযাপনের রীতিতে পরিবর্তন ও ওষুধপথ্যের মাধ্যমে এ রোগের প্রকোপ কমানো এবং জীবনযাপন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।
কীভাবে ডিমেনশিয়া হয়
শারীরিক শৈথিল্য অনেকের পায়ের পেশিকে দুর্বল করে তোলে। এ কারণে পেশির ভর কমে যায়, যা অনেক সময় পেশির ক্ষয়রোগের দিকে নিয়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পা মস্তিষ্কের চিন্তা করার ক্ষমতা দ্রুত কমিয়ে দেয়, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। অন্যদিকে কর্মক্ষম পেশি মস্তিষ্ক থেকে একধরনের শক্তিশালী রাসায়নিক নির্গত করে, যা স্নায়ুকে পুষ্টির জোগান দেয়। এসব রাসায়নিক ব্রেইন–ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাকটর বা বিডিএনএফ নামে পরিচিত।
এই বিডিএনএফ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে আরও ভালো করে। এসব রাসায়নিক মস্তিষ্কের নতুন স্মৃতি তৈরি ও পুরোনো তথ্য ধারণকারী হিপোক্যাম্পাসের যোগাযোগও বৃদ্ধি করে।
শক্তিশালী পা মানে শক্ত ভারসাম্য। শক্ত পা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি শূন্যের কোটায় নিয়ে যায়। বিশেষ করে ৬৫ বছরের পর পড়ে যাওয়া বেশিই বিপজ্জনক।ডা. অরুণ এল নায়েক, নিউরোসার্জন, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়, বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হাঁটার কম গতি মস্তিষ্কের আয়তন কমে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।
একই সঙ্গে এটা মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর কারণ হচ্ছে, হাঁটা শুধু শারীরিক ব্যাপারই নয়, এটা পুরো মাথারও কাজ। এর মধ্য দিয়ে পুরো মস্তিষ্কেরই অনুশীলন ঘটে।
হাঁটা কীভাবে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে
হাঁটা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সহজ শারীরিক ব্যায়াম। এর অনেক উপকারিতা। তার মধ্যে একটি হলো, হাঁটা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
ডা. অরুণের মতে, হাঁটার সময় প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরেবেলাম, স্পাইনাল কর্ড এবং প্রোপ্রিওসেপটিভ ইন্দ্রিয় যুক্ত হয়। এ ছাড়া হাঁটলে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ করে। একই সঙ্গে তা শরীরের বিষাক্ত বর্জ্য বের করে দেয়।
এই চিকিৎসক আরও বলেন, হাঁটার ধরন, ভারসাম্য ও গতির পরিবর্তন অনেক সময় মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগব্যাধি বিষয়ে আগাম ধারণা দেয়। হাঁটা মস্তিষ্কের কোষ নমনীয়, এমনকি পরিবর্তনের ক্ষমতাও রাখে। এটা যেহেতু মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ুকে পুষ্টি জোগান দানকারী রাসায়নিক নির্গত করে, তাই হাঁটা স্নায়ুবন্ধনকেও শক্তিশালী করে।
ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করে মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখবেন কীভাবে
ডা. অরুণ নায়েক শারীরিক নড়াচড়া বাড়িয়ে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করে মস্তিষ্ক সুরক্ষার কিছু উপায়ের কথা বলেছেন।
দিনে অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন।
এক পায়ের সামনে আরেক পা এনে কাল্পনিক সরলরেখা ধরে হাঁটা অথবা এক পায়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা—এমন ভারসাম্য–ব্যায়াম করুন।
হাঁটতে হাঁটতে বিভিন্ন কাজ করুন। যেমন কথা বলা বা কোনো কিছু চিন্তা করা।
কোমর থেকে নিচের অংশের বিভিন্ন ব্যায়াম করা, যা পা শক্তিশালী করে।
একটানা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বাদ দিন। প্রতি ঘণ্টায়ই নড়াচড়া করুন।
এসবের পাশাপাশি পায়ের পেশির ভর ঠিক রাখতে আমিষজাতীয় খাবার খান।
পরিশেষ
ডা. অরুণ নায়েক বলেছেন, যদি আপনার পা ধীরে চলে, তাহলে আপনার মস্তিষ্কও ধীরে চলবে। পা শক্ত হলে, মস্তিষ্কও শক্তিশালী হবে।
তাই মস্তিষ্ক সচল রাখতে পায়ের স্বাস্থ্যে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। দেরি না করে দ্রুতই এ বিষয়ে মনোযোগী হোন। গবেষণায় বলা হচ্ছে, বয়স ৪০ হলেই পায়ের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কোনোভাবেই দেরি করা যাবে না।
ভুলে গেলে চলবে না—শক্ত পা মানেই সতেজ মাথা।
সূত্র: হেলথ অনলাইন