প্রোস্টেট ক্যানসারের উপসর্গগুলো আপনার জানা আছে কি
সেপ্টেম্বর মাস প্রোস্টেট ক্যানসার–সচেতনতার মাস হিসেবে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। প্রোস্টেট ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসায় সাফল্য আসার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই সচেতন হওয়া প্রয়োজন প্রত্যেকেরই। বিশেষত বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ সদস্যকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা জরুরি।
বয়সটাই যখন ঝুঁকি
বয়স বাড়লে, অর্থাৎ বয়স ৫০ বছর পেরোলেই প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। তাই দেশে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সংখ্যাও আগের চেয়ে বেশি। এই বিপুলসংখ্যক পুরুষের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি তরুণদের তুলনায় অনেক বেশি।
জীবনযাত্রার ধরনে বাড়ে আরও ঝুঁকি
জীবনযাত্রার আধুনিকায়ন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার এবং লাল মাংস খাওয়ার অভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত ঘুমের কারণে প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। নগরভিত্তিক ব্যস্ত জীবনে মানুষ যানবাহন এবং নানা ধরনের যন্ত্রের প্রতি অনেক বেশি নির্ভরশীল। প্রক্রিয়াজাত খাবারও সহজলভ্য আধুনিক শহুরে জীবনে। এসবই প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
যা করা প্রয়োজন
৫০ বছর বয়স পেরোলে সব পুরুষেরই নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হবে। পরিবারের কারও প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে আরও কম বয়স থেকেই সচেতন হয়ে ওঠা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন কম বয়স থেকেই।
নিয়মিত ব্যায়ামও করতে হবে তারুণ্যের দিনগুলো থেকে।
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা আবশ্যক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যেকোনো বয়সেই নিজের দেহে কোনো অস্বাভাবিকতা
লক্ষ করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ সদস্যকে নিজের সমস্যার কথা জানাতে বলুন নিঃসংকোচে।
উপসর্গগুলো জানা থাক
প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত বহু রোগীরই প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে কিছু সাধারণ পরিবর্তন দেখা দিতে পারে—
প্রস্রাবের শুরুতে কষ্ট হওয়া।
প্রস্রাবের প্রবাহ ক্ষীণ হয়ে যাওয়া।
বারবার প্রস্রাবের বেগ, বিশেষত রাতে।
প্রস্রাব করতে গিয়ে মাঝপথে আপনা–আপনি প্রস্রাবের গতি বন্ধ হয়ে যাওয়া।
প্রস্রাবের শেষেও ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব ঝরা।
অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষই এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। বয়সের সঙ্গে প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ার কারণে এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই ভয় পাবেন না।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে, সমস্যাগুলো কি প্রোস্টেট গ্রন্থি বয়সজনিত কারণে বড় হয়ে যাওয়ায় হয়েছে, নাকি এসবের জন্য দায়ী প্রোস্টেট ক্যানসার।
প্রাথমিক ধাপের পরের উপসর্গ
ক্যানসার প্রাথমিক ধাপ পেরিয়ে গেলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়, সেসবও জেনে রাখা উচিত—
প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
বীর্যে রক্ত যাওয়া।
প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করা।
তলপেটের নিচের অংশে বা কোমরে ব্যথা।
ওজন হ্রাস ও ক্ষুধামান্দ্য।
অস্বাভাবিক দুর্বলতা বা অবসাদ।
হাড়ে ব্যথা (যদি হাড়ে ছড়িয়ে যায়)।
শ্বাসকষ্ট (যদি ফুসফুসে ছড়িয়ে যায়)।
শেষ কথা
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। জীবন হয়ে উঠছে আধুনিক। ফলে বাড়ছে প্রোস্টেট ক্যানসারের হার। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসাপদ্ধতি সহজ। নিরাময়ের সম্ভাবনাও বাড়ে। তাই এই ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা আবশ্যক।