ইফতারে পেঁয়াজু খাবেন নাকি বেগুনি, কোনটা কম ক্ষতিকর

ইফতার ঘরে করা হোক কিংবা বাইরে, ভাজাপোড়া খাবারের আয়োজন থাকে অধিকাংশ জায়গায়ই। যদিও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা ইফতারে সহজপাচ্য ও হালকা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন, তবু প্রচলিত ভাজাপোড়া পদের জনপ্রিয়তা কমে না। বছরের পর বছর এ দেশে ইফতারের প্রায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে পেঁয়াজু ও বেগুনি। হালকা ধাঁচের ইফতারির সঙ্গে যদি অন্তত একটি ভাজাপোড়াজাতীয় মুখরোচক খাবার খাওয়া হয়, তাহলে কোনটি বেছে নেওয়া ভালো? পেঁয়াজু নাকি বেগুনি?

বছরের পর বছর এ দেশে ইফতারের প্রায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে পেঁয়াজু ও বেগুনি
ছবি: প্রথম আলো

দুটি পদই ভাজাপোড়াজাতীয় হলেও দুটির উপকরণ একেবারেই আলাদা। পেঁয়াজু বানানো হয় ডাল দিয়ে। ডাল উদ্ভিজ্জ আমিষ। বেগুনি বানানোর জন্য বেগুনের স্লাইস বেসনে ডুবিয়ে নেওয়া হয়। বেসনও ডালের গুঁড়া। অর্থাৎ এখানেও আছে উদ্ভিজ্জ আমিষ। সবজি হিসেবে বেগুন দারুণ পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। তবে বেগুনি তৈরি করার সময় বেগুনের অধিকাংশ পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। তেলে ভেজে তৈরি করা হয় বলে দুটি পদ থেকেই আপনি পাবেন উচ্চ ক্যালরি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো পেঁয়াজু বা বেগুনির যে তেল, তা মূলত ট্রান্স ফ্যাট; স্নেহপদার্থের এ ধরনটি আমাদের হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পেঁয়াজু ও বেগুনির নানা দিক সম্পর্কে জানালেন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী

আরও পড়ুন

পুষ্টিগুণ

এটা ঠিক যে ডাল থেকে আপনি আমিষ পাবেন। তবে তা হলো দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ। উদ্ভিজ্জ আমিষ, অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ থেকে আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের সবগুলো পাওয়া যায় না। একই ওজনের একটা পেঁয়াজু আর একটা বেগুনির আমিষের মধ্যে তুলনা করে দেখুন। পেঁয়াজুর মূল উপকরণ ডাল; আর বেগুনির কেবল বাইরের আবরণটি ডাল থেকে আসে। তাই বেগুনির চেয়ে পেঁয়াজুতে আমিষের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। আবার কয়েক রকম উদ্ভিজ্জ আমিষ মিশিয়ে খেলে কিন্তু বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। তাই কয়েক রকম ডাল মিশিয়ে পেঁয়াজু করা হলে তা থেকে পুষ্টি পাবেন একটু বেশি। তবে ক্রমাগত খেসারির ডালের পেঁয়াজু খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্যগত আরও কিছু দিক

সাধারণত ইফতারে তিন-চারটি বা তারও বেশি পেঁয়াজু খাই আমরা; কিন্তু একটি-দুটির বেশি বেগুনি খান না অধিকাংশ মানুষই। তাই পেঁয়াজু খেতে গেলে বেশি মাত্রায় ক্যালরি এবং ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের ঝুঁকি থাকে। বেশি পেঁয়াজুতে খানিকটা বেশি উদ্ভিজ্জ আমিষ পাওয়া গেলেও এই স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকটি বিবেচনায় রাখতে হবে। তা ছাড়া দুটি পদের যেকোনোটি থেকেই অ্যাসিডিটি হতে পারে। বাড়তে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি।

আরও পড়ুন

সুস্থ থাকতে

ভাজাপোড়া পদ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন
ছবি: প্রথম আলো

ভাজাপোড়া পদ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে ইফতারে ভাজাপোড়া খেতে গেলে তা বেশি খেয়ে নেওয়ার আশঙ্কা থাকে। তারপরও নিতান্তই ভাজাপোড়া খেতে চাইলে বেছে নিন যেকোনো একটি। একাধিক পদ একই দিনে না খাওয়াই ভালো। আর অবশ্যই এসব খাবেন খুব কম পরিমাণে। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে এগুলো সব সময় ছোট আকারে পাতলা করে তৈরি করা ভালো। তেলেভাজা এসব খাবার গ্রহণের পরিমাণ কম রাখার একটি উপায় হলো মুড়ি, শসা, টমেটো প্রভৃতি দিয়ে মাখিয়ে খাওয়া।

শেষ কথা হলো, পেঁয়াজু বা বেগুনির কোনোটিকেই অন্যটির চেয়ে ‘বেশি ভালো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ নেই। একনাগাড়ে কোনোটিই খাবেন না; বরং অন্যান্য পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার বেছে নিন। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ কিংবা ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে পেঁয়াজু ও বেগুনি দুটিই অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আরও পড়ুন