লো কার্ব বা নো কার্ব ডায়েট কি স্বাস্থ্যকর
দ্রুত ওজন কমাতে লো কার্ব বা নো কার্ব ডায়েট বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, তারকারা এমন খাদ্যাভ্যাসে মেদ ঝরিয়ে ফেলেন কম সময়েই। প্রিয় তারকাকে অনুসরণ করেই হোক কিংবা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে জেনেই হোক, এ ধরনের চর্চা করতে গিয়ে ভাত-রুটি খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেন কেউ কেউ। এমন চর্চা কি আদতে স্বাস্থ্যকর? এ সম্পর্কে জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম।
শর্করা, আমিষ, স্নেহ পদার্থ, ভিটামিন, খনিজ উপাদান আর পানি—ছয় ধরনের পুষ্টি উপাদানের কোনোটিকেই খাদ্যতালিকা থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। কার্বোহাইড্রেট, অর্থাৎ শর্করাজাতীয় খাবার থেকে আমাদের রোজকার প্রয়োজনীয় ক্যালরির ৪০-৫০ শতাংশ আসা উচিত।
তাই শর্করার মাত্রা খুব কমিয়ে দেওয়া কিংবা একেবারে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এর অর্থ কিন্তু এমনটাও নয় যে মোট খাবারের ৪০-৫০ শতাংশই হবে শর্করাজাতীয় খাবার। কারণ, হিসাবটা খাবারের পরিমাণের নয়, হিসাবটা ক্যালরির।
শর্করা মানে কেবল ভাত-রুটি নয়
শর্করাজাতীয় খাবার বলতে মূলত ভাত বা রুটিকেই বোঝানো হয়ে থাকে। মুশকিলটা এখানেই। এমন বহু খাবার আছে, যাতে শর্করা থাকে, কিন্তু সাধারণত সেগুলোর শর্করাকে হিসাবের মধ্যে আনাই হয় না। এই ভুলের কারণে বহু মানুষের ওজন কমে না।
বিস্কুট, কুকি, কেক, পেস্ট্রি, পায়েস, নুডলস, পাস্তা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, শিঙাড়া, সমুচা—এ ধরনের সব খাবারেই আছে শর্করা। পানীয়ে থাকা চিনিও শর্করা। শীতের পিঠায় থাকা চালের গুঁড়া আর গুড়ও শর্করা। ভাত-রুটি না খেয়ে এ ধরনের খাবার থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের ভুলটাও করেন কেউ কেউ।
এমনকি ফলমূল আর সবজিতেও শর্করা থাকে কিছুটা। মিষ্টি ফলে শর্করার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। আলু, মিষ্টি মুলা, গাজর, শালগম, কচু, মানকচু কিংবা ওলের মতো সবজিতেও ক্যালরির মাত্রা বেশি থাকে।
বুঝতেই পারছেন, শর্করা থেকে পাওয়া মোট ক্যালরির হিসাবটা কেবল ভাত-রুটিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। আর সুস্থতার জন্য কিছুটা শর্করা আপনাকে খেতেই হবে। লো কার্ব বা নো কার্ব ডায়েট আদতে ওজন কমানোর জন্য খুব একটা ভালো পন্থা নয়। কারণ, সব ধরনের শর্করা বাদ দিতে গেলে বা একেবারে কমিয়ে দিতে গেলে প্রয়োজনীয় বহু পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হবেন আপনি।
মনে রাখতে হবে, প্রক্রিয়াজাত খাবার অল্প পরিমাণে খেলেও অনেক বেশি ক্যালরি পেয়ে যান আপনি। আর এ ধরনের খাবার দ্রুতই রক্তের শর্করা বাড়িয়ে দেয়, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। তাই এমন শর্করা বেছে নেওয়া প্রয়োজন, যা থেকে আপনি পরিমিত ক্যালরি পাবেন, আবার হজম হতে সময়ও বেশি লাগবে। ফলে রক্তের শর্করা বাড়বে ধীরে এবং আপনি ওই খাবার থেকে শক্তিও পাবেন লম্বা সময় ধরে।
কতটা শর্করা নেবেন, কোন উৎস থেকে নেবেন
তাই গোটা শস্য, সবজি আর পানসে ফল বেছে নেওয়া ভালো। লাল চাল, লাল আটা, ওট, যব, কিনওয়া প্রভৃতি গোটা শস্য খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। তবে কার কতটা ক্যালরি প্রয়োজন, তা নির্ভর করে তাঁর ওজন ও শারীরিক শ্রমের ওপর। তা ছাড়া একবার ওজন কমালেও সেটি ধরে রাখা আরেক চ্যালেঞ্জ বটে।
তাই ওজন কমাতে হলে কোন উৎস থেকে কতটা ক্যালরি গ্রহণ করবেন, তা একজন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, এক বেলার জন্য প্রয়োজনীয় মোট খাবারের অর্ধেক হওয়া উচিত শাকসবজি বা ফলমূল। এক–চতুর্থাংশ হওয়া উচিত আমিষ। বাকি এক–চতুর্থাংশ পূরণ করা উচিত শস্যদানা থেকে তৈরি খাবার, টক দই বা লো ফ্যাট দুধ এবং স্বাস্থ্যকর অন্যান্য স্নেহ পদার্থ থেকে। স্ন্যাকস বাছাইয়ের ক্ষেত্রে উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার এড়িয়ে চলুন।
তারকাদের জন্য কি বিষয়টা অন্য রকম
তারকাদের পেশাগত প্রয়োজনে দ্রুত ওজন কমানোর প্রয়োজন পড়ে। কারও কারও আবার ওজন বাড়াতেও হয় পেশাগত কারণে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি কতটা ওজন বাড়াবেন কিংবা কমাবেন, তার পুরোটাই হয় বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে। কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি যাতে না হয়, সেদিকেও যত্নের সঙ্গে খেয়াল রাখা হয়।
তাই জনপ্রিয় তারকা কোনো পন্থায় ওজন কমালেও অন্ধভাবে তাঁকে অনুকরণ করা ঠিক নয়। আর অবশ্যই মনে রাখবেন, কেবল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণই ওজন কমানোর জন্য যথেষ্ট নয়। পর্যাপ্ত কায়িক শ্রমের মাধ্যমে বিপাকের হার বাড়িয়ে মেদ ঝরাতেই হবে আপনাকে।