মগজ বা মাছের মাথা খেলে কি আসলেই মাথা খোলে
অনেক সময়ই ছোটদের বলা হয়, মগজ খেলে বুদ্ধি হবে। মাছের মাথা বা প্রাণীর মগজ খেলে কি আদতেই মানুষের বুদ্ধি বাড়ে? টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান-এর কাছ থেকে এ প্রশ্নের উত্তর জেনেছেন রাফিয়া আলম
কী আছে প্রাণীর মগজে
প্রাণীর মগজে আছে প্রচুর ট্রাইগ্লিসারাইড। আরও আছে ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই আমাদের ত্বকের আবরণ ও ত্বকের নিচের প্রয়োজনীয় চর্বি ঠিকঠাক রাখতে সাহায্য করে প্রাণীর মগজ। চোখের জন্যও প্রাণীর মগজ ভালো। বাড়ন্ত শিশুর মস্তিষ্কের গঠনগত কাজেও পরোক্ষভাবে কিছুটা সহায়তা করে প্রাণীর মগজ। তবে মস্তিষ্কের বিকাশে প্রাণীর মগজ কোনো ভূমিকা রাখে না।
কী আছে মাছের মাথায়
মাছের মাথায় আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় এ উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পশু বা পাখির মগজের ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে যেসব উপকার পাওয়া যায়, মাছের মাথার ফ্যাটি অ্যাসিডেও সেসব উপকার মিলবে।
বাড়ন্ত শিশুর মস্তিষ্কের গঠনের কাজে মাছের মাথাও উপকারে আসে। তবে মস্তিষ্কের বিকাশে মাছের মাথার কোনো ভূমিকা নেই।
শিশু-কিশোরদের জন্য কি ভালো
শৈশব ও কৈশোরে প্রাণীর মগজ ও মাছের মাথা খাওয়া মন্দ নয়। তবে শৈশব-কৈশোরের স্বাভাবিক খেলাধুলা আর হুটোপাটি নিশ্চিত করতে হবে। তাতে ক্যালরি পুড়বে ঠিকঠাক। নইলেই বিপত্তি। এ ধরনের খাবার থেকে পাওয়া বাড়তি ক্যালরি পোড়ানো সম্ভব হবে না। তাই বাড়বে ওজন, বাড়বে দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগের ঝুঁকি। মনে রাখতে হবে, একটানা বসে মুঠোফোন দেখা বা কেবল পড়ালেখার মধ্যে ডুবে থাকাটা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়।
সবার জন্য সব নয়
মগজ উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার। এতে যে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, তা কক্ষ তাপমাত্রায় জমে যায়। অর্থাৎ এগুলো সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই সবার জন্য মগজ ভালো খাবার নয়। মগজ খেলে রক্তচাপ বাড়তে পারে, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে। হৃদ্রোগ আর স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ৩০ বছর বা এর বেশি বয়সীদের অবশ্যই মগজ এড়িয়ে চলা উচিত।
তবে মুরগির মগজ পরিমাণে খুব কম থাকে। তাই যেকোনো বয়সেই অল্প পরিমাণে মুরগির মগজ খেলে ক্ষতি নেই।
খুব বড় আকারের মাছের মাথার তেলও কক্ষ তাপমাত্রায় জমে যায়। অর্থাৎ এগুলোও সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই এগুলোও খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। ৩০ বছর বা এর বেশি বয়সীদের তাই খুব বড় মাছের মাথাও এড়িয়ে চলা উচিত।
আরও মনে রাখতে হবে চিংড়ির কথা। চিংড়ির মাথায় খুব বেশি পরিমাণে ক্ষতিকর চর্বি থাকে। এই অংশটা না খাওয়া সবার জন্যই ভালো।
যদি কেউ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা কিডনির রোগে ভোগেন কিংবা যদি কারও রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে প্রাণীর মগজ ও খুব বড় আকারের মাছের মাথা এড়িয়ে চলা উচিত। স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।
আরও সতর্কতা
মগজ বা মাথা ভালোভাবে সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত।
এসব পদ রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করা উচিত নয়।