ফেসবুকে লাইক না পাওয়ার মতো সামান্য কারণে ঘন ঘন মন খারাপ হলে কী করবেন?

মন খারাপ হওয়ার মতো কত ঘটনাই তো ঘটে আমাদের জীবনে। তবে কিছু সামান্য ঘটনা বা কারণ আছে, যাতে মন খারাপ হওয়া অস্বাভাবিকই বটে। যেমন ফেসবুকে অমুক আমার পোস্টে কেন লাইক দিল না? তমুক কেন বিয়েবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাল না? আমার নতুন জামাটা দেখে ও কেন কিছু বলল না? এমন অনেক সামান্য কারণেও মন খারাপ হয় কারও কারও। এটা কি মামুলি সমস্যা নাকি এর পেছনেও লুকিয়ে থাকে বিশেষ কোনো কারণ?

কিছু সামান্য ঘটনা বা কারণ আছে, যাতে মন খারাপ হওয়া অস্বাভাবিকই বটেছবি: প্রথম আলো

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘ডোন্ট সোয়েট দ্য স্মল স্টাফ।’ বাংলা যার অর্থ, ‘ছোট জিনিসে ঘামলে চলবে না।’ অনেকের ক্ষেত্রে এ বাক্য মেনে চলা হয়তো কঠিন। তবে সনদধারী মার্কিন বিয়ে ও পরিবার–সংক্রান্ত থেরাপিস্ট নিকোল এম রেইনস বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মন খারাপ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। গত কয়েক বছরের অনিশ্চয়তা ও দুঃখ–কষ্টের প্রভাব হিসেবে আমাদের মনে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, ফলে ছোটখাটো কারণে মন খারাপ হয়।’

সবারই একটা সময় আসে, যখন মন খুব খারাপ থাকে, আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু এই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়া ঘন ঘন হচ্ছে কি না, তা খেয়াল করা প্রয়োজন। আরেক মার্কিন বিয়ে ও পরিবার–সংক্রান্ত থেরাপিস্ট বেকি স্টুমফিগ বলেন, ‘যদি দেখেন যে আপনি খুব সহজেই ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ করছেন, তাহলে বুঝে নিন, আপনার মধ্যে কোনো অন্তর্নিহিত মানসিক চাপ আছে।’

মানসিক সহ্যশক্তির এই স্বল্পতার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে বলে মনে করেন স্টুমফিগ। কারণগুলো হলো সম্পর্কের টানাপোড়েন, আর্থিক অসচ্ছলতা, খাদ্যের অনিশ্চয়তা, অতীতের কোনো মানসিক আঘাত, বেদনা, হতাশা, বিষণ্নতা, ঘুমের সমস্যা, সঙ্গহীনতা ইত্যাদি। স্টুমফিগ বলেন, কোনো চাহিদা ঠিকমতো পূরণ না হওয়ার ঘটনা এ মানসিক যন্ত্রণার অন্যতম কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন

এখন এই ছোটখাটো বিষয়ে ঘন ঘন মন খারাপ হলে কী করবেন? জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—

আপনার সঙ্গে কী ঘটছে, তা খেয়াল রাখুন

আপনার সঙ্গে আদতে কী কী ঘটছে, তা জানতে কৌতূহলী হন। কখনো কখনো খারাপ কিছু ঘটার ভয় থেকে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আপনার ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতির মাত্রা, কত সময় পর পর তা অনুভূত হয় এবং ব্যাপ্তি—এসব বিষয় খেয়াল রাখুন। আপনার মনে যদি পুরোনো কোনো স্মৃতি প্রায়ই জেগে ওঠে, তাহলে বুঝে নেবেন ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ হওয়ার পেছনে এর হাত আছে। অর্থাৎ আপনার সঙ্গে কী ঘটছে, তা নির্ণয় করে আপনি এর পেছনের কারণটি জানতে পারবেন। বর্তমানে যা ঘটছে, তা আদতে বড় কোনো সমস্যা নয়, হঠাৎ মন খারাপ হওয়ার পেছনে আছে কোনো বিশেষ কারণ।

নিজেকে সময় দিন

যখন সামান্য কারণে মন খারাপ হতে শুরু করবে, তখন শুরুতেই প্রতিক্রিয়াটা লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া তা যেন না ঘটে সে জন্যও কিছু করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তখন একটা বিরতি নেওয়া প্রয়োজন। হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে এসে কিছুটা শান্ত, নির্জন জায়গায় গিয়ে আগে নিজেকে ঠান্ডা করুন। এর উদ্দেশ্য হলো, এসব পরিস্থিতিতে আপনার প্রতিক্রিয়া যেন খুব খারাপ কিছুর দিকে না গড়ায়।

আরও পড়ুন

নিজেকে শান্ত করার উপায় অবলম্বন করুন

ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ হওয়া যদি নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে নিজেকে শান্ত করার কিছু উপায় অবম্বন করতে হবে। মেডিটেশন ও গভীর শ্বাস নেওয়ার মতো ব্যায়ামের চর্চা করলে স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয়। আমরা কী শুনছি, খাচ্ছি, স্বাদ নিচ্ছি এ রকম স্নায়বিক ঘটনাবলি অতীত বা ভবিষ্যতের নানা ঘটনা নিয়ে চিন্তা করার সময় কমিয়ে দিয়ে আমাদের যন্ত্রণা দূর করতে পারে। যোগব্যায়াম, ছবি আঁকা বা বাগান করার মতো এ রকম অনেক কিছু আছে, যেসবের চর্চা করতে পারেন। সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়াও হতে পারে ভালো সমাধান।

প্রিয় মানুষদের কাছে থাকুন

ভেতরের আবেগ যখন খারাপভাবে বের হয়ে আসতে চায়, তখন অন্যের সাহায্য খোঁজা একটা ভালো উপায় হতে পারে। আপনার ভেতরে কী অনুভূত হচ্ছে, তা একজন বন্ধুর কাছে বলতে পারেন। আবেগ যদি খুব প্রভাবশালী হয় এবং তা যদি আপনার আচরণকে পরিবর্তন করে ফেলে, তাহলে প্রিয় মানুষের কাছাকাছি থাকুন। প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কথা বললে এ সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। মোট কথা, এ ধরনের সমস্যার অন্যতম কারণ যোগাযোগের ঘাটতি এবং নিজের আবেগ অনুভূতিকে প্রকাশ করতে পারার অক্ষমতা। তাই ছোটখাটো বিষয়ে মন খারাপ করার সমস্যা এড়াতে যতটা সম্ভব প্রিয় মানুষদের সঙ্গে থাকুন।

আরও পড়ুন

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

অনেক সময় এ ধরনের আচরণের পেছনে কয়েক ধরনের কারণ থাকে। যেমন অতীতের কোনো অমীমাংসিত মানসিক ট্রমা, বিষণ্নতা, উদ্বেগ আপনার মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া। বিশেষজ্ঞ আপনাকে বলতে পারবেন, ঠিক কী কারণে আপনি ছোটখাটো বিষয়ে সহজেই মন খারাপ করে ফেলেন। অনেক সময় মনে হতে পারে, আপনার মধ্যে তেমন মারাত্মক কোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ইস্যু নেই। তবুও একজন থেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।

সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

আরও পড়ুন