স্টেরয়েড ব্যবহারে নারীদের যে ৭টি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে
শুধু সাময়িক ঝোঁকের বশে বা জনপ্রিয় ট্রেন্ড ফলো করে স্টেরয়েড ব্যবহারের আগে পেশাদার পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ড্রাগ পলিসিতে প্রকাশিত ২০২১ সালের এক গবেষণায় নারীদের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহারের সাতটি বিপজ্জনক প্রভাবের কথা বলা হয়েছে।
আজকাল ফিটনেস নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে। পাওয়ারলিফটিং ও ওয়েট ট্রেনিংয়ের মতো শরীরচর্চার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। শরীরচর্চা বা জিম ট্রেনিংয়ের মতো স্বাভাবিক উপায়ে পুরুষেরা সহজেই পেশিবহুল দেহকাঠামো অর্জনে সক্ষম হলেও নারীদের জন্য তা অতটা সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে অনেকেই স্টেরয়েড ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন।
বিশেষত অনেকে না জেনেই ব্যবহার করছেন অ্যানাবলিক স্টেরয়েড। ফলে সম্মুখীন হচ্ছেন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে নারীদের বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
কণ্ঠস্বর পরিবর্তন
যাঁরা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহার করেছেন, তাঁদের কণ্ঠস্বর বিভিন্ন মাত্রায় ভারী ও পুরুষোচিত হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। গবেষণায় অংশ নেওয়া এক নারী জানান, অচেনা কাউকে ফোন করার সময় তাঁকে প্রায়ই পুরুষ ভেবে ভুল করা হতো। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ন্যাপচ্যাটে নিজের পরিবর্তিত অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে রীতিমতো চমকে উঠেছিলেন তিনি।
মাসিক চক্রে পরিবর্তন
স্টেরয়েড ব্যবহারের জন্য নারীদের মধ্যে মাসিক চক্র হ্রাস পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গত বছর ‘সৌদি ফার্মাসিউটিক্যাল জার্নালে’ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের দীর্ঘায়িত ব্যবহার ডিম্বাশয়ের হরমোন নিঃসরণকে ব্যাহত করে, যার কারণেই মাসিক চক্র হ্রাস পায়। শুধু তা–ই নয়, এই পরিবর্তন বন্ধ্যত্বের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
শরীর মুখের লোম বৃদ্ধি এবং চুল পড়া
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী অনেক নারী জানান, স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে তাঁরা শরীর ও মুখের লোমের বৃদ্ধি লক্ষ করেছেন। শরীরের অন্যান্য অংশের লোম বাড়লেও মাথার চুল পড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যায়, স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে হরমোনে পরিবর্তন ঘটে। এ পরিবর্তন নারীদের চুল পড়ার কারণ হতে পারে এবং এ সমস্যাকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।
স্তনের আকৃতি হ্রাস
‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ অ্যাবিউজ’ও অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের অপব্যবহারের স্বাস্থ্যগত পরিণতি হিসেবে স্তনের আকার ছোট হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। অবশ্য অনেকেই এ ক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে স্তন ইমপ্লান্ট বেছে নিয়েছেন।
যৌনাঙ্গে পরিবর্তন
শুধু তা–ই নয় যৌনাঙ্গে পরিবর্তনও দীর্ঘ সময় ধরে স্টেরয়েড ব্যবহারকারী নারীদের একটি সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ যৌনাঙ্গ সংবেদনশীল এবং আঁটসাঁট হয়ে যাওয়ার কারণে বেদনাদায়ক শারীরিক সম্পর্কের মতো সমস্যাও অনুভব করেছিলেন। অনেকের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড ব্যবহার বন্ধ করার দুই বছর পরও এসব সমস্যার সমাধান হয়নি।
যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি
স্টেরয়েড ব্যবহারকারী কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি, আবার কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে যাঁদের ক্ষেত্রে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পেয়েছে তাঁরাও যৌনাঙ্গে পরিবর্তন ও সংবেদনশীলতার কারণে শারীরিক সম্পর্কে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
ব্রণ
ব্রণ হলো আরেকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ব্যবহার করার সময় নারীদের প্রায়ই দেখা যায়। ১৯৮৮ সালে ‘জার্নাল অব দ্য সোসাইটি অব কসমেটিক কেমিস্ট’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, আট সপ্তাহ স্টেরয়েড ব্যবহারের পরে হালকা ব্রণ দেখা গেছে। শুধু তা–ই নয় স্টেরয়েডের উচ্চমাত্রা ত্বকের পৃষ্ঠের লিপিড বৃদ্ধি করে, যা ব্রণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
শেষ কথা
স্বাস্থ্য ও ফিটনেসে কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ও পেশাদারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাময়িকভাবেশশ এটি হয়তো ব্যয়বহুল মনে হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে রক্ষা পেতে এর বিকল্প নেই। ফিটনেস অর্জনের কোনো সহজ পন্থার বিনিময়ে স্বাস্থ্যকে কখনোই ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না। মনে রাখবেন শারীরিক সুরক্ষার সঙ্গে কোনো আপস নয়।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক