দীর্ঘদিন স্টেরয়েড সেবন করছেন না তো?
শ্বাসকষ্ট, মারাত্মক অ্যালার্জি ও অন্যান্য রোগে সংকটাপন্ন ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে ওষুধ হিসেবে অনেক সময় স্টেরয়েড দেওয়া হয়। এটা দেওয়া হয় খুব কম সময়ের জন্য। এরপর তা দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয় বা মাত্রাটা কমিয়ে আনা হয়। স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই সেবন করা উচিত নয়। কিন্তু এই ওষুধের অপব্যবহার আমাদের দেশে অনেক। অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অথবা ওষুধ বিক্রেতা বা হাতুড়ে চিকিৎসকের কথামতো দীর্ঘদিন স্টেরয়েড সেবন করে থাকেন।
চাই সচেতনতা
অন্যের প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ সেবন কিংবা চিকিৎসকের নির্দেশনামাফিক ফলোআপে না যাওয়ার (নির্দিষ্ট সময় পর পুনরায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া) প্রবণতার কারণে অনেকেই দীর্ঘ মেয়াদে কিংবা ভুল মাত্রায় সেবন করে ফেলেন স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ। আবার ওজন বাড়ানোর জন্য কিছু ফুড সাপ্লিমেন্ট (সম্পূরক খাদ্য) অনেকে গ্রহণ করেন, যার উপাদানের উল্লেখ থাকে না (এখানেও থাকতে পারে স্টেরয়েড)। হারবাল বা ভেষজ ওষুধেও স্টেরয়েড মেশানো থাকতে পারে। সচেতন ভোক্তা হিসেবে লেবেল (উপাদানের লিখিত রূপ) ছাড়া এসব দ্রব্য কখনোই গ্রহণ করা উচিত নয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
স্টেরয়েডের প্রভাবে ওজন বাড়ে। পরবর্তী সময়ে খিটখিটে মেজাজ, দুর্বলতা, ব্রণ, ক্ষীণদৃষ্টি, ছানি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, সহজে ত্বকের নিচে রক্তপাত হওয়া, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া, পেট জ্বালাপোড়া, হাড়ক্ষয় ও হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। মারাত্মক এক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ‘কর্টিসল’ নামক জীবন রক্ষাকারী হরমোনের ঘাটতি হওয়া (অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি)। এর লক্ষণ হলো বারবার রক্তচাপ কমে যাওয়া (ফলে রোগীর মাথা ঘুরে ওঠে, এমনকি রোগী সাময়িক জ্ঞান হারানোর পরিস্থিতিতেও চলে যান), রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য, বদহজম, ওজন হ্রাস, বমি ভাব, বমি, পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা, হতাশা, মানসিক চাপে ভেঙে পড়া প্রভৃতি। কোনো ওষুধ সেবন করার পর এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে কালক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি হলে চিকিৎসক আপনাকে একটি স্টেরয়েড কার্ড দেবেন, যা সব সময় নিজের সঙ্গে রাখতে হয়। স্টেরয়েড কার্ডে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা, রোগের নাম ও যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে আপনাকে চিকিৎসা দিতে হবে, তা বিশদভাবে উল্লেখ করা থাকে। ব্রেসলেটে খোদাই করে বা লেমিনেটিং করে এটা সব সময় ব্যাগে রাখতে হয়। তবে এর চিকিৎসার জন্য আজীবন ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয় না।
তা ছাড়া ত্বকে স্টেরয়েড প্রয়োগের ফলে ব্রণ, ত্বকে ছোট গোটা, ত্বকের রঙের পরিবর্তন, এমনকি ত্বক পাতলা হয়ে আসার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। ইনহেলার হিসেবে স্টেরয়েড গ্রহণ করা হলে মুখে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
সবার জন্য করণীয়
যেকোনো ওষুধ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হলে ওষুধের নাম ও মাত্রা ঠিকঠাকভাবে খেয়াল করে কিনুন। কত দিন, কোন মাত্রায় সেবন করতে হবে, চিকিৎসকের কাছ থেকেই তা বুঝে নিন মনোযোগ দিয়ে। পরবর্তী সাক্ষাতের সময় কবে হবে, সেটি খেয়াল রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
*ডা. রোজানা রউফ: সহযোগী কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা