ব্লাড সুগার বাড়ার পেছনে কি ঘুমের সমস্যা দায়ী

সুস্থতার অন্যতম শর্ত পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম। আমরা অনেকেই খাবার, ব্যায়াম কিংবা ওজন নিয়ে সচেতন থাকি, কিন্তু ঘুমকে গুরুত্ব দিই না। অথচ সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ঘুমের অনিয়ম ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার মাত্রাকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে, এমনকি আপনি মিষ্টি না খেলেও শর্করা বেড়ে যেতে পারে।

ঘুমের অনিয়ম ব্লাড সুগার বা রক্তে শর্করার মাত্রাকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারেছবি: প্রথম আলো

ঘুম কম হলে কেন রক্তে শর্করা বাড়ে

এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ আছে—

১. স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের বৃদ্ধি
ঘুম কম হলে বা টানা কয়েক রাত জেগে থাকলে শরীরে চাপ বাড়ে। এতে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নিঃসরণ বেড়ে যায়। কর্টিসল লিভারকে নির্দেশ দেয় রক্তে বাড়তি গ্লুকোজ ছাড়তে, যেন শরীর ‘জরুরি পরিস্থিতি’ মোকাবিলা করতে পারে। ফলে খাবার না খেলেও রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।

২. ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়। ফলে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং রক্তে থাকা গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করতে না পেরে রক্তেই জমে থাকে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়
ঘুম কম হলে লেপ্টিন কমে যায়, যা ক্ষুধা কমানোর হরমোন। অন্যদিকে বাড়ে ঘ্রেলিন, যা ক্ষুধা বাড়ায়। ফলে অতিরিক্ত ক্ষুধা, মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেটের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। আর তা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিণের বাইরে নিয়ে যায়।

৪. স্ট্রেস ও ঘুমহীনতা
যদি ঘুম কম হয় এবং তার সঙ্গে মানসিক চাপ থাকে, তাহলে দুটি মিলেই কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলাফল রক্তে শর্করার ধারাবাহিক উত্থান-পতন, যা ক্লান্তি, বিরক্তি ও মনোযোগ কমানোর পাশাপাশি বিপাকীয় সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ায়।

আরও পড়ুন
যদি ঘুম কম হয় এবং তার সঙ্গে মানসিক চাপ থাকে, তাহলে দুটি মিলেই কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়
ছবি: পেক্সেলস

যাদের বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন

  • ডায়াবেটিস রোগী

  • প্রি–ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সে ভোগা ব্যক্তি

  • কাজের চাপে যাঁরা নিয়মিত রাত জাগেন

  • অনিদ্রা, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অন্যান্য ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি

আরও পড়ুন

ভালো ঘুম ভালো গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের সূত্র

ঘুমের নির্দিষ্ট সময়সূচি

প্রতিদিন একই সময়ে শোয়া-জাগার অভ্যাস তৈরি করুন। শরীরের ঘড়ি নিয়মিত হলে হরমোনের ভারসাম্যও বজায় থাকে

শোয়ার আগে স্ক্রিন টাইম কমান

মোবাইল বা ল্যাপটপের নীল আলো মেলাটোনিন নামের ঘুমের হরমোনকে দমিয়ে দেয়। শোয়ার আগে অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন।

ক্যাফেইন ও ভারী খাবার রাতে কম

রাতের দিকে কফি, চা কিংবা ভারী খাবার ঘুমের তাল কেটে দেয়। হালকা ডিনার ঘুম ও হজম, দুইয়ের জন্যই ভালো।

চাপ কমাতে ছোট অভ্যাস

৫-১০ মিনিটের গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, মেডিটেশন, মৃদু যোগব্যায়াম বা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা, ঘুমের আগে শরীরকে শান্ত করে।

কিছু পরামর্শ

শ্বাসকষ্ট, নাকডাকা বা অতিরিক্ত দিনভর ঘুম পাওয়ার মতো উপসর্গ স্লিপ অ্যাপনিয়ার ইঙ্গিত হতে পারে, যা রক্তে শর্করার সামগ্রিক ভারসাম্য নষ্ট করে। ভালো ঘুম শুধু মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে না; শরীরের বিপাক, হরমোন এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তাই পরেরবার যখন অকারণে ক্লান্তি, খাবার খেলে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বা মনোযোগ কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়বেন, তখন খাবার বা ওষুধের আগে নিজের ঘুমের মানও খতিয়ে দেখুন। সুস্থতার প্রথম ধাপ রাতে ভালো ঘুম হওয়া।

আরও পড়ুন