কী খেয়ে, কী করে বলিউড তারকা অক্ষয় কুমার এখনো ফিট আছেন

বলিউড তারকা অক্ষয় কুমারের বয়স কত, জানেন? ৫৯ বছর চলছে। এ বয়সে এসে এখনো নিজেকে বলিউডের অন্যতম ফিট তারকা হিসেবে ধরে রেখেছেন। কীভাবে সম্ভব?

অক্ষয়ের ফিটনেস দেখলে মনে হয় তাঁর নামকরণ একেবারে সার্থক
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

অক্ষয় নিজের সুশৃঙ্খল জীবনযাপন বজায় রেখে চলেছেন কয়েক দশক ধরে। ঘুম থেকে ওঠেন ভোরে, পরিকল্পিতভাবে নিজের দৈনন্দিন কাজ সারেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, পরিবারকে সময় দেন। তিনি এমন এক রুটিন মেনে চলেন, যেখানে কাজ ও বিশ্রাম—দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ভোর চারটায় দিন শুরু

ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও উদ্যোক্তা রণবীর আল্লাহবাদিয়ার একটি পডকাস্ট শোয়ে নিজের লাইফস্টাইলের গল্প শুনিয়েছেন অক্ষয় কুমার। তিনি জানান, তাঁর ভোরে ওঠা কোনো দেখনদারির বিষয় নয়; বরং আজীবনের অভ্যাস।

কীভাবে এই অভ্যাস গড়ে উঠেছে, সে বিষয়ে অক্ষয় বলেন, ‘আমি শুধু শৈশবের অভ্যাসগুলো ধরে রেখেছি। আমাকে বলা হতো, তাড়াতাড়ি ঘুমাতে আর তাড়াতাড়ি উঠতে। আমি সেটা এখনো মেনে চলি।’

অক্ষয় কুমারের বয়স চলছে ৫৯ বছর
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

অক্ষয় জানান, পার্টিতে যেতে তাঁর ভালো লাগে না। কোনো কারণে যেতে হলেও বাড়িতে ফেরার জন্য উসখুশ করতে থাকেন।

ভারতের অমর উজালা পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে অক্ষয় নিজের ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার নিয়মানুবর্তিতা নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার দিন শুরু হয় ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে। আর ঘুমিয়ে পড়ি রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে।’

কেন এই অভিনেতা এত সকালে ঘুম থেকে ওঠেন, বলেছেন সেটাও, ‘এই সময়টুকুই আমার নিজের। কারণ, তখন স্ত্রী-সন্তানেরা ঘুমায়। এ ছাড়া এ সময় কোনো চাপও থাকে না!’

আরও পড়ুন

কঠোর কর্মঘণ্টা, ব্যবহার করেন না ভ্যানিটি ভ্যান

ইউটিউব চ্যানেল ‘গালাতা প্লাস’–এর সঙ্গে আরেক আলাপে অক্ষয় নিজের কঠোর কর্মঘণ্টার গল্প শুনিয়েছেন। বলেন, ‘দিনে আট ঘণ্টা কাজ করি। ক্যামেরা আপনার প্রতিটি রোমকূপ পর্যন্ত ধরে ফেলে। আট ঘণ্টা পর শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টার দিন। এখানে আমি খুবই সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করার চেষ্টা করি। আট ঘণ্টা ঘুম, দুই ঘণ্টা খাওয়া, দুই ঘণ্টা ব্যায়ামের পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গেও কয়েক ঘণ্টা সময় কাটানো দরকার।’

শুটিংয়ের সময় অক্ষয়ের মনোযোগ অবিশ্বাস্য রকমের
ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

শুটিংয়ের সময় অক্ষয়ের মনোযোগ অবিশ্বাস্য রকমের। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে আট ঘণ্টা কাজ করি, কখনো ভ্যানিটি ভ্যানে যাই না। একবার সেটে গেলে সেখানেই থাকি। শুধু ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য বের হই।’

ভ্যানিটি ভ্যান হলো সিনেমা ও বিনোদনজগতে ব্যবহৃত বিশেষভাবে সাজানো চলমান গাড়ি বা বাস। এই ভ্যানে অভিনেতা–অভিনেত্রীরা শুটিংয়ের ফাঁকে বিশ্রাম নেন, পোশাক বদলান এবং মেকআপ–চুলের কাজ করেন। এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, ঘুমানোর জায়গাসহ নানা সুবিধা থাকে, তাই একে শুটিং সেটে শিল্পীদের ‘দ্বিতীয় ঘর’ও বলা হয়।

তাঁর ডায়েটের দর্শন

আয়ুর্বেদবিষয়ক বই ‘ইয়োর বডি অলরেডি নোজ’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসে অক্ষয় জোর দিয়ে বলেন রাতে সময়মতো খাওয়ার গুরুত্বের কথা, ‘রাতের খাবার আগেভাগে খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাতে বেশির ভাগ অঙ্গ বিশ্রাম করে; দেরিতে খেলে আমাদের পেটকে বিশ্রাম দেওয়া হয় না।’

ছেলেবেলায় পরিবারের শেখানো নিয়মশৃঙ্খলা আজও মেনে চলেন অক্ষয়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

অক্ষয় বিষয়টার একটা সরল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘মনে রাখতে হবে, সব রোগ কিন্তু পেট থেকেই উৎপন্ন হয়। তাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে খেয়ে নিলে খাবার হজমের পর্যাপ্ত সময় থাকে। আর রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়ার আগেই পেট পুরো বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়।’

আরও পড়ুন

সপ্তাহে এক দিন উপোস

সপ্তাহে একটা দিন অক্ষয় কুমার উপোস করেন এবং এটা নিয়মিত মেনে চলেন। সেটা শুরু হয় রোববার রাতের খাবারের পর। তিনি বলেন, ‘রোববার রাতের খাবারের পর আমি মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত কিছু খাই না।’

অক্ষয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর ভারী খাবার এড়িয়ে চলেন, ক্ষুধা লাগলে খান হালকা খাবার—ডিমের সাদা অংশ, গাজর, মুলা, স্যুপ বা সালাদ।

বেশ কয়েক বছর আগে অক্ষয়ের পুষ্টিবিদ মোহিত সাভারগাঁওকর জানিয়েছিলেন, অক্ষয় সাত্ত্বিক খাবার পছন্দ করেন, ‘কোনো মসলা নয়, কোনো পেঁয়াজ-রসুন নয়।’

স্ত্রী অভিনেত্রী টুইংকেল খান্নার সঙ্গে ছুটির মেজাজে অক্ষয়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

বছরে ১২৫ দিন ছুটি

‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কপিল শো’–তে অক্ষয় জানান, বছরে মোট ১২৫ দিন ছুটি নেন। দিয়েছেন হিসাব, ‘এর মধ্যে আছে ৫২টি রোববার, ৪০ দিন গরমের ছুটি, বড়দিনে ১২ দিন, দীপাবলিতে ৩ দিন। এ ছাড়া প্রতি তিন মাসে সাত দিনের বিরতি নিই।’

সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে অক্ষয়ের দর্শন সহজ, ‘সবারই দিনে ২৪ ঘণ্টা, বছরে ৩৬৫ দিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়ের সঠিক ব্যবহার আর সরলতা। জীবন জটিল করবেন না। স্ট্রেস নেবেন না। স্ট্রেস খুব ক্ষতিকর।’

তাঁর ব্যায়াম

ফিটনেসের ক্ষেত্রে অক্ষয় কুমারের দর্শন হলো স্বাভাবিক আর কার্যকর নড়াচড়া; ভারোত্তলন একদম নয়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

অক্ষয় সকাল শুরু করেন জগিং দিয়ে, এরপর করেন স্বাভাবিক কিন্তু অপ্রচলিত ব্যায়াম। বলেন, ‘আমি রক ক্লাইম্বিং করি, ওজন তুলি না। অনেক খেলাধুলা করি। আমার জিম বানরদের মতো ঝোলার জিনিসে ভরা—শুধু ঝুলি।’

ফিটনেসের ক্ষেত্রে এই তারকার দর্শন হলো স্বাভাবিক আর কার্যকর নড়াচড়া; ভারোত্তলন একদম নয়। তাঁর রুটিনে আছে জগিং, দৌড়, ঘাড়ের ব্যায়াম, সাইক্লিং, কিকবক্সিং, সাঁতার, যোগব্যায়াম।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও পড়ুন