প্রোবায়োটিকের জীবাণু যে কারণে শরীরের জন্য উপকারী
আমাদের শরীরে কোটি কোটি জীবাণু বাস করে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এটাই সত্যি। এসব জীবাণুর সবই ক্ষতিকর নয়। বরং শরীরের কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া আমাদের হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই উপকারী ক্ষুদ্র যোদ্ধাদেরকেই আমরা বলি প্রোবায়োটিক।
প্রোবায়োটিক কী
প্রোবায়োটিক হলো জীবিত ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট, যা আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক গঠনে ভূমিকা রাখে। এরা অন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখে এবং খাদ্য হজমে সহায়ক। সাধারণত দই, লাচ্ছি, কেফির, আচারজাতীয় খাবার অথবা বিভিন্ন সাপ্লিমেন্টেই এসব পাওয়া যায়।
কীভাবে কাজ করে
আমাদের অন্ত্রে ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার একটি সামঞ্জস্য থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, অসুস্থতা, অনিয়মিত জীবনযাপন বা মানসিক চাপ এই ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তখন প্রোবায়োটিক এগিয়ে আসে সাহায্য করতে।
হারিয়ে যাওয়া ভালো ব্যাকটেরিয়া পূরণ করে
ক্ষতিকর জীবাণুকে দমন করে
হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে
কোন কোন ধরনের প্রোবায়োটিক বেশি পরিচিত
১. ল্যাক্টোবাসিলাস
দই ও ফারমেন্টেড খাবারে বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে ডায়রিয়া বা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা দূর করতে সাহায্য করে।
২. বিফিডোব্যাকটেরিয়াম
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) ও হজমের গণ্ডগোল কমাতে ব্যবহৃত হয়।
৩. স্যাকারোমাইসিস বুলার্ডি
এটি এক ধরনের উপকারী ইস্ট, যা ডায়রিয়া ও অন্ত্রের সমস্যায় কার্যকর।
কেন প্রোবায়োটিক গুরুত্বপূর্ণ
ডায়রিয়া দ্রুত কমাতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত অন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
হজম প্রক্রিয়া ও অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
গবেষণা অনুযায়ী, ত্বকের অবস্থা, মুড বা মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও এর সম্পর্ক থাকতে পারে।
প্রোবায়োটিকের উৎস কী
দই ও টক দই
সাওয়ারক্রাউট (ফারমেন্টেড বাঁধাকপি)
কিমচি ও অন্যান্য আচারজাতীয় খাবার
প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল, পাউডার বা ড্রপ
সতর্কতা
অধিকাংশ মানুষের জন্য প্রোবায়োটিক নিরাপদ। তবে যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা আছে বা কেমোথেরাপি চলছে, তাঁদের সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রোবায়োটিককে খাদ্য হিসেবে গণ্য করা হয়, ওষুধ হিসেবে নয়। তাই সব সাপ্লিমেন্ট একই রকম কার্যকর না–ও হতে পারে।
শরীরকে সুস্থ রাখতে অন্ত্রের স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই অন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম সহজ উপায় হলো প্রোবায়োটিক। ক্ষুদ্র জীবাণু হলেও, এসবের উপকারিতা বিশাল। খাবারের তালিকায় নিয়মিত দই বা অন্যান্য ফারমেন্টেড খাবার রাখলে আপনার হজমশক্তি ও সামগ্রিক সুস্থতায় ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।