বয়স কমাতে কে না চায়? এত দিন বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এবার সত্যি সত্যি বয়স কমিয়ে ফেলেছেন একদল নারী। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন একটি গবেষণা বলছে, সঠিক খাদ্যের অভ্যাস, পরিমিত ঘুম ও নিয়মিত শরীরচর্চা—এ তিনটির সঙ্গে যদি মস্তিষ্কের বিশ্রাম ও পরিমাণমতো ভিটামিনের সম্পূরক গ্রহণ করা যায়, তাহলে বয়স কমিয়ে ফেলা সম্ভব।

‘এইজিং জার্নাল’-এ প্রকাশিত ৮ সপ্তাহের একটি পরীক্ষামূলক গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ৪৫ থেকে ৫৬ বয়সী ৬ নারী
ছবি: পেক্সেলসডটকম

‘এইজিং জার্নাল’-এ প্রকাশিত ৮ সপ্তাহের একটি পরীক্ষামূলক গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ৪৫ থেকে ৫৬ বয়সী ৬ নারী। প্রত্যেককে খাবার, ঘুম ও ব্যায়াম ছাড়াও বিশ্রামের নির্দেশনা ও বিভিন্ন প্রোবায়োটিক, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সম্পূরক গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে তৈরি একটি তালিকা দেওয়া হয়। পরে রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, ছয়জনের পাঁচজনেরই জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) বয়স কমে গিয়েছে। একজন তো কমিয়ে ফেলেছেন প্রায় ১১ বছর! আর পাঁচজন কমিয়েছেন গড়ে ৪ দশমিক ৬ বছর।

পরীক্ষার শুরুতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কালক্রমিক (ক্রনোলজিক্যাল) বয়স ছিল ৫৮। তবে তাঁদের জৈবিক বয়স ছিল কম। সে জন্যই গবেষণা চলাকালে প্রত্যেকেই তাঁদের শরীরের বিভিন্ন রোগ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা লক্ষ করেছেন।

জৈবিক ও কালক্রমিক বয়সের পার্থক্য

ব্যক্তি ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে বর্তমান পর্যন্ত অর্থাৎ সে কত দিন ধরে বেঁচে আছেন, সেটি হচ্ছে কালক্রমিক বয়স। অন্যদিকে ব্যক্তির জৈবিক বয়স নির্ভর করে শরীরের কোষের বয়সের ওপর। কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে কখনো দুটি বয়সই এক হতে পারে আবার কারও ক্ষেত্রে দুটিতে পার্থক্য দেখা যায়।

মানসিক অবসাদ, হতাশা, ক্লান্তি, খাদ্যের অভ্যাস, ওষুধ—সবকিছুই মানুষের জৈবিক বয়সের ওপর প্রভাব ফেলে
ছবি: পেক্সেলসডটকম

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, মানসিক অবসাদ, হতাশা, ক্লান্তি, খাদ্যের অভ্যাস, ওষুধ—সবকিছুই মানুষের জৈবিক বয়সের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে শরীরে জিনগত পরিবর্তন ঘটে, যা শরীরের জৈবিক বয়স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

তবে নতুন এই গবেষণা প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে এ প্রক্রিয়ায় উল্টো বয়স কমিয়ে ফেলা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক গবেষণার প্রকাশিত খাদ্যতালিকা ও নিয়মাবলি।

প্রতিদিনের খাবারে যা ছিল

  • ২ কাপ গাঢ় সবুজ শাক

  • ২ কাপ সবুজ সবজি

  • ৩ কাপ রঙিন শাকসবজি

  • ১/৪ কাপ মিষ্টি কুমড়ার বীজ

  • ১/৪ কাপ সূর্যমুখীর বীজ

  • যকৃৎ বা যকৃতের সম্পূরক (সপ্তাহে ৩ বার)

  • ডিম (সপ্তাহে ৫-১০টি)

শরীরে কোষের বংশানুক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এমন খাবারও ছিল তালিকায়। সেগুলো হলো—

  • ১/২ কাপ বেরি

  • ২টি রসুনের কোয়া

  • ২ কাপ গ্রিন টি (১০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখা)

  • ২ কাপ উলং টি (চীনে তৈরি এক প্রকার চা, ১০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখা)

  • ১/২ টেবিল চামচ রোজমেরি

  • ১/২ টেবিল চামচ হলুদ

সঙ্গে প্রতিদিন যে নিয়মগুলো পালন করতে হতো—

  • ২টি প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল

  • ২টি ‘গ্রিন পাউডার’ সম্পূরক

  • ৮ কাপ পানি

  • ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম

  • দিনে ২ বার নিশ্বাসের ব্যায়াম

  • ৭ ঘণ্টা ঘুম

  • দিনের শেষ খাবারের পর ১২ ঘণ্টার উপবাস

‘নারীদের কেউই সব নিয়ম একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলতে পারেননি, কিন্তু এটা কোনো সমস্যা নয়। তালিকার মোটামুটি ৮২ শতাংশ যাঁরা মেনে চলতে পেরেছেন, প্রত্যেকের জৈবিক বয়স অনেকটাই কমেছে’, লিখেছেন গবেষকেরা।

সূত্র: ফরচুন