অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেনে মাথার বদলে ব্যথা হয় পেটে, সমাধান কী

মাইগ্রেন বললেই মাথার তীব্র যন্ত্রণার কথা সবার আগে মনে পড়ে। কিন্তু এমন এক ধরনের মাইগ্রেন আছে, যেখানে প্রধান সমস্যাই হয় পেটে—এটি হলো অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেন। এটি শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও প্রাপ্তবয়স্কদেরও হতে পারে। পেটের সাধারণ ব্যথা ভেবে অনেকেই এটিকে এড়িয়ে যান, যা শিশু বা রোগীর দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।

এমন এক ধরনের মাইগ্রেন আছে, যেখানে প্রধান সমস্যাই হয় পেটে—এটি হলো অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেনছবি: প্রথম আলো

কী এই অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেন

অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেন একটি স্নায়বিক ব্যাধি। এটি সরাসরি পরিপাকতন্ত্রের কোনো রোগ নয়; বরং মাইগ্রেনেরই একটি রূপ। যখন স্নায়ুতন্ত্রের কিছু রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতার কারণে পেটের রক্তনালিগুলো অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত বা প্রসারিত হয়, তখন পেটে তীব্র ব্যথার পুনরাবৃত্তি হয়।

এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের পারিবারিক ইতিহাসে সাধারণ মাইগ্রেন বা এ ধরনের পেটের মাইগ্রেনের প্রবণতা থাকে। সাধারণত ৭ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুন

প্রধান উপসর্গ

অ্যাবডোমিনাল বা পেটের মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এটি বারবার ফিরে আসে। প্রধান লক্ষণগুলো হলো—

তীব্র পেটে ব্যথা: ব্যথা সাধারণত পেটের মাঝামাঝি বা নাভির চারপাশের অংশে অনুভূত হয়। এটি মাঝারি থেকে তীব্র হতে পারে এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপ বন্ধ করে দিতে পারে। অনেকে এটাকে অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা ভেবে ভুল করেন।

বমি বমি ভাব ও বমি: ব্যথার সময় প্রায়ই বমি বমি ভাব বা বমি হয়।

ক্ষুধামান্দ্য: এই পর্বের সময় রোগীর খাবার গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়।

ফ্যাকাশে ভাব: আক্রমণের সময় ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে।

ক্লান্তি: ব্যথা কমে যাওয়ার পর রোগী খুব ক্লান্ত বা নিস্তেজ বোধ করেন।
কিছু ক্ষেত্রে আলো বা শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা বা হ্যালুসিনেশনও দেখা যেতে পারে।

আরও পড়ুন

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

এই রোগের চিকিৎসা সাধারণত দুটি ধাপে করা হয়—

  • আক্রমণের সময় ব্যথা কমানো এবং

  • পুনরাবৃত্তি রোধ করা।

১. লক্ষণজনিত চিকিৎসা

ব্যথার তীব্রতা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ও বমিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কখনো কখনো ট্রিপটানসের মতো মাইগ্রেনের বিশেষ ওষুধও কাজে আসে।

২. প্রতিরোধ

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এর আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন—

ট্রিগার এড়িয়ে চলা: চকলেট, পনির, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ক্যাফেইনের মতো খাদ্যবস্তু যদি ব্যথা বাড়ায়, তা চিহ্নিত করে বাদ দিতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম: নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: যোগাসন বা মাইন্ডফুলনেসের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে আক্রমণের হার অনেকাংশে কমে।

যদি পেটে ব্যথা ঘন ঘন হয়, বমি ও পানিশূন্যতা দেখা যায় অথবা ব্যথা ৭২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই দ্রুত একজন শিশুবিশেষজ্ঞ বা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি শুধু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নয়; বরং একটি স্নায়বিক ব্যাধি, যা সঠিক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

আরও পড়ুন