রক্তে সুগার কেন কমে যায়, কী করবেন

রক্তে সুগার কমে যাওয়ার নানা কারণ থাকে
ছবি: পেক্সেলস

রক্তে শর্করা বা সুগার হঠাৎ স্বাভাবিক মাত্রার নিচে নেমে যাওয়ার নাম হচ্ছে হাইপোগ্লাইসেমিয়া। ডায়াবেটিসের রোগীরা কমবেশি এই নামের সঙ্গে পরিচিত। পরিসংখ্যান বলে, ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশই জীবনে কখনো না কখনো এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। কেন এই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মতো ঘটনা ঘটে?

সাধারণত ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে যাঁরা ইনসুলিন বা সালফোনিল ইউরিয়া গোত্রের ওষুধ সেবন করেন, তাঁরাই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকিতে আছেন। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের শরীরে অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ইনসুলিন নিঃসরণের কাজটি করে থাকে। যখন খাবার গ্রহণ করা হয় এবং রক্তে শর্করা বাড়ে, তখন প্যানক্রিয়াস ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, আবার যখন আমরা অভুক্ত থাকি, তখন কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনের এই স্বাভাবিক কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ। তার ওপর যাঁরা বাইরে থেকে ইনসুলিন নেন বা ইনসুলিন নিঃসরক ওষুধ সেবন করেন, তাঁরা আরও ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার পেছনে কিছু বিষয় দায়ী থাকে। এর মধ্যে সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ না করা, খাবার গ্রহণে দেরি করা, অতিরিক্ত ইনসুলিন বা ওষুধ সেবন, হঠাৎ অতিরিক্ত ব্যায়াম বা পরিশ্রম করা, বিশৃঙ্খল জীবনযাপন ইত্যাদি। এ ছাড়া যাঁদের কিডনি ও লিভারের রোগ আছে এবং যাঁরা অ্যালকোহল পান করেন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি।

আরও পড়ুন

কীভাবে বুঝবেন রক্তে সুগার কম

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে প্রথমে হাত–পা কাঁপা, বুক ধড়ফড়, অস্থিরতা, ঘাম, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে গ্লুকোমিটার যন্ত্রে রক্তের সুগার পরীক্ষা করে যদি দেখা যায়, তা ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল বা তার কম হয়ে গেছে, তবে নিশ্চিত যে আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এরপর অসংলগ্ন আচরণ, চেতনা বিলুপ্ত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। দীর্ঘ সময় এই অবস্থা বিরাজ করলে মস্তিষ্কে গ্লুকোজ কমে গিয়ে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

সুগার কম হলে কী করবেন

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে দ্রুত হাতের কাছে থাকা যেকোনো ধরনের সহজ শর্করা ১৫ গ্রাম পরিমাণ খেয়ে ফেলতে হবে। হতে পারে সেটা এক গ্লাস চিনির শরবত, একটি মিষ্টি চকলেট, খেজুর বা জুস। আধ ঘণ্টা পর আবার রক্তে সুগার মেপে যদি কম পাওয়া যায়, তাহলে আবারও শর্করা খেতে হবে। কিন্তু যদি রোগী চেতনা হারিয়ে ফেলে, তাহলে জোর করে মুখে খাওয়ানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে তাকে শিরাপথে গ্লুকোজ স্যালাইন দেওয়ার জন্য দ্রুত কাছের জরুরি বিভাগে নিতে হবে।

আরও পড়ুন

যেভাবে ঠেকাবেন সুগার কমে যাওয়া

হাইপোগ্লাইসেমিয়া যাতে না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া বেশি জরুরি। সে জন্য কিছু বিষয়ে সচেতনতা দরকার।

  • প্রতিদিনের ও প্রতি বেলার খাবারের সময়সূচি ঠিক রাখবেন, ব্যত্যয় করবেন না। সাধারণত ডায়াবেটিসের রোগীদের দিনে ছয়বার খাবার গ্রহণ করা উচিত। সকালের নাশতা, দুপুরের ভোজ, নৈশভোজের পাশাপাশি সকাল ও দুপুরের মধ্যবর্তী সময়ে, বিকেলে ও শোবার আগে কিছু খাবেন।

  • নিয়মিত বাড়িতে নিজের সুগার মাপা খুব জরুরি। এতে সুগার কমে যাওয়ার প্রবণতা আছে কি না বোঝা যায়, সে অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ সমন্বয় করা যায়।

  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ ওষুধের ডোজ বা ইনসুলিনের মাত্রা পরিবর্তন করবেন না।

  • হঠাৎ অতিরিক্ত ভারী ব্যায়াম করবেন না। হঠাৎ এমন পরিশ্রমও করবেন না যাতে আপনি অভ্যস্ত নন।

  • কিডনির সমস্যা থাকলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসের রোগীকে বছরে অন্তত এক বা দুবার কিডনি পরীক্ষা করতে হবে।

  • বাড়িতে অবশ্যই একটি গ্লুকোমিটার রাখবেন। এ ছাড়া বাইরে যেতে হলে, হাঁটতে যাওয়ার সময় বা ভ্রমণের সময় পকেটে চকলেট, খেজুর ইত্যাদি রাখুন।

আরও পড়ুন