যে রোগে সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগে

অনেক মানুষ বছরের পর বছর সারাক্ষণ ক্লান্তি, সারা শরীরে ব্যথা, মাথা ভার ভার লাগা, ঘুম ঠিক না হওয়া—এমন সমস্যায় ভোগেন। পরীক্ষায় কোনো সমস্যা ধরা না পড়ার কারণে এগুলোকে অনেক সময় ভুলভাবে ‘অলসতা’ বা ‘মানসিক সমস্যা’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এ সমস্যার কারণ হতে পারে একটি রোগ, যার নাম ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম ও ফাইব্রোমায়ালজিয়া।

অনেক মানুষ বছরের পর বছর সারাক্ষণ ক্লান্তি, সারা শরীরে ব্যথা, মাথা ভার ভার লাগা, ঘুম ঠিক না হওয়া—এমন সমস্যায় ভোগেনমডেল: সুলতানা। ছবি: কবির হোসেন

কেন এই রোগ হয়

  • যেকোনো ভাইরাস সংক্রমণের পর দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তি অনুভব হতে পারে।

  • শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। 

  • ঘুমের সমস্যা।

  • মানসিক চাপ।

  • মস্তিষ্কের ব্যথা অনুভব করার সিস্টেম অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে যাওয়া। 

যেসব লক্ষণ দেখা যায়

ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমের ক্ষেত্রে বিশ্রামেও কমে না এমন ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। সামান্য কাজ করলেই মনে হয় খুবই ক্লান্ত লাগছে। মাথা ঘোরা ও মনোযোগ কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে হয়। ঘুমের ব্যাঘাত অর্থাৎ ঠিকঠাক ঘুম হয় না। 

ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ক্ষেত্রে সারা শরীরে ব্যথা হতে পারে। সকালে শরীরে জড়তা বা স্টিফনেস তৈরি হয়। ঘাড়–কাঁধ–পিঠে টেন্ডার পয়েন্ট, মানে কিছু বিন্দুতে ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা ও ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএসের মতো উপসর্গ থাকতে পারে। 

এ দুই অবস্থায় বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা না থাকলেও মস্তিষ্ক ব্যথাকে বেশি তীব্রভাবে অনুভব করে। ভয় বা দুশ্চিন্তা ব্যথা আরও বাড়ায়।

আরও পড়ুন

চিকিৎসা ও ফিজিয়্যাট্রিক ব্যবস্থাপনা

  • ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ বাড়ানো। 

  • নিয়মিত হাঁটা, স্ট্রেচিং, হালকা ব্যায়াম করা। 

  • গরম পানিতে ব্যায়াম উপকারী। 

  • এমিট্রিপটালিন, ডুলোক্সেটিন বা প্রিগাবালিনের মতো ওষুধ সেবন।  

  • হিট থেরাপি, স্ট্রেচ, ম্যানুয়াল থেরাপি নেওয়া যেতে পারে। 

  • শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যায়াম ও রিল্যাক্সেশন সংক্রান্ত ব্যায়াম করুন। 

আরও পড়ুন

প্রতিরোধে করণীয়

২০ থেকে ৩০ মিনিট কাজের পর ৫ মিনিট করে বিশ্রাম নিন। ভারী কাজ করুন সকালের দিকে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ঘুম হওয়া খুব জরুরি। স্ট্রেস কমানোর অভ্যাস করতে হবে। ব্যথা বাড়লে পুরো বিশ্রাম দরকার হয় না। এ সময় হালকা কাজ করা অব্যাহত রাখুন।

ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম বা ফাইব্রোমায়ালজিয়া চিকিৎসাযোগ্য। সঠিক শিক্ষা, ধীরে ধীরে ব্যায়াম, বিশ্রাম ও মানসিক স্বস্তি—এসব মিলেই রোগী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।

ডা. সাকিব আল নাহিয়ান, সহকারী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

আরও পড়ুন