ক্যালসিয়াম কমে গেলে কী হয়

শরীরে বিদ্যমান সর্বাধিক পরিমাণ খনিজ উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। এটি হাড় গঠন করতে ও মজবুত রাখতে সাহায্য করে। আমাদের স্নায়বিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে। মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণ তথা নড়াচড়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা রয়েছে। শরীরের ৯৯ ভাগ ক্যালসিয়াম জমা থাকে হাড় ও দাঁতের ভেতর। বাকি এক ভাগ রয়েছে রক্ত, মাংসপেশি ও অন্যান্য অঙ্গে।

প্রভাব

ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে শরীরে বিশেষত পায়ে ও পিঠে ব্যথা হয়। হাড় ও দাঁতের ক্ষয় শুরু হয়। এর অভাবে চুল ও ত্বক খসখসে হয়ে যায়। ত্বকের লাবণ্য ও চুলের লাস্যময়তা কমে যায়। নখে ফাটলের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ক্যালসিয়ামের অভাবে স্নায়বিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। স্মরণশক্তির সমস্যা, অস্থিরতা, হতাশা, অসংলগ্ন কথাবার্তা কিংবা আচরণ, মতিভ্রম ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তীব্র মাত্রার ক্যালসিয়ামের অভাবে এমনকি খিঁচুনি পর্যন্ত শুরু হতে পারে। পেটে ব্যথা হতে পারে। হৃৎস্পন্দন এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।

তীব্র মাত্রায় ক্যালসিয়ামের অভাব হওয়ার অবস্থাকে বলে টিটেনি। এ সময় হাত–পা কুঁকড়ে আসে। আঙুল বেঁকে যায়। ঠোঁট–মুখ ঝি ঝি করে। শৈশবে ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে শিশু তার কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে না। আর বৃদ্ধ বয়সে অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের কারণে হাড় ভেঙে যায়।

আরও পড়ুনঃ

কারণ

শরীরে ক্যালসিয়াম কমে যাওয়ার পেছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্যারাথাইরয়েড হরমোন ও ভিটামিন ডির ঘাটতি এবং কিডনি অকেজো হওয়া। এ ছাড়া বেশ কিছু ওষুধ, ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি, অগ্ন্যাশয় তথা প্যানক্রিয়াসের প্রদাহ এবং কিছু জন্মগত ত্রুটি ক্যালসিয়াম কমাতে পারে। এ ছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির শল্যচিকিৎসার পর অনেকের স্বল্প সময়ের জন্য ক্যালসিয়াম কমে যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ

করণীয়

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি যাতে না হয়, সে জন্য খাবারে ক্যালসিয়ামের জোগান থাকা প্রয়োজন। ক্যালসিয়াম–সমৃদ্ধ খাদ্যের উৎস হচ্ছে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সবুজ শাকসবজি, কাজুবাদাম, ফল, চিয়া সিড, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম যোগ করে কিছু খাদ্যকে সমৃদ্ধ করা হয়। যেমন কোনো কোনো দেশে ময়দা ও পানীয়তে ক্যালসিয়াম যোগ করা হয়। তবে শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য প্রয়োজন পড়ে যথেষ্ট প্যারাথাইরয়েড হরমোন ও ভিটামিন ডির। এ জন্য কোনো কারণে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।

  • লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা