নখ আপনার স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, বুঝতে পারছেন তো?

নখের বৃদ্ধি মূলত নখের নেইল ম্যাট্রিক্স কোষের ওপর নির্ভর করেমডেল: আইরিন, কৃতজ্ঞতা : পারসোনা, ছবি : কবির হোসেন

দাঁত দিয়ে নখ কাটার বদভ্যাস অনেকেরই আছে। নখের যত্ন নেওয়ার বিষয়টিও থাকে না অনেকের মাথায়। নখ আমাদের হাত ও পায়ের আঙুলকেই শুধু রক্ষা করে না, আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু খাবার খেতে পারেন নিয়মিত। পুষ্টি–গবেষক নাফরিনা হক বলেন, ‘নখ ক্যারাটিন নামের শক্ত ধাঁচের প্রোটিন দিয়ে গঠিত। এই প্রোটিন চুল ও ত্বকের বাইরের স্তরে পাওয়া যায়। নখের বৃদ্ধি মূলত নখের নেইল ম্যাট্রিক্স কোষের ওপর নির্ভর করে। নখের গোড়ায় কিউটিকলের নিচে অবস্থিত এই বিশেষ কোষের মাধ্যমে নখ বড় হয়। নতুন ম্যাট্রিক্স কোষ তৈরি হওয়ার সময় ধীরে ধীরে পুরোনো কোষকে (নখ) বাইরে ঠেলে বড় হয়। হাতের আঙুলের নখ প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৩ মিলিমিটার বৃদ্ধি পায়। আর পায়ের নখ প্রতি মাসে ১.৬ মিলিমিটার বাড়ে। বয়স, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত অবস্থার কারণে নখের বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়।’

নখের সাধারণ সমস্যা ও সমাধান

নখের স্বাস্থ্য আদতে আমাদের শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার প্রতিফলন বলা যায়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করলে, পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখলে শক্তিশালী ও দ্রুত বর্ধনশীল নখ তৈরি হয়। ভঙ্গুর নখের অর্থ হচ্ছে আপনার পুষ্টির অভাব বা হাত অতিরিক্ত পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান, নখ মজবুতকারী তেল ব্যবহার করুন। নখে হলুদ ভাব দেখা দিলে বুঝতে হবে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে নেইলপলিশ কম ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে টি–ট্রি অয়েল ব্যবহার করুন। নখের ওপর দাগ দেখা গেলে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে, তখন আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান। নখে সাদা দাগের অর্থ জিংকের ঘাটতি, তখন জিংকসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

আরও পড়ুন

যেভাবে নখ দ্রুত বাড়ে

নখের বৃদ্ধিতে জেনেটিকসের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বড়দের তুলনায় শিশু ও কম বয়সীদের নখ দ্রুত বাড়ে। হরমোন নখের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। রক্ত ​​সঞ্চালন ও বিপাকীয় কার্যকলাপ বৃদ্ধির কারণে গর্ভাবস্থায় নখ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। এ ছাড়া সুস্থ শরীরে ভালো রক্ত ​​সঞ্চালনের কারণে নেইল ম্যাট্রিক্স কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ ঠিক থাকে। তখন নখের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি দেখা যায়। নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা এবং নখ ম্যাসাজ করলে রক্ত​​প্রবাহ উন্নত হয়, তখন নখ বৃদ্ধির গতি বাড়ে। সুস্থভাবে নখের বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ও খনিজের প্রয়োজন হয়। বায়োটিন, আয়রন, জিংক ও প্রোটিনের অভাবে নখের বৃদ্ধিতে ধীরগতি দেখা যায়। তখন নখ ভঙ্গুর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত সূর্যালোকের সংস্পর্শে রক্ত ​​সঞ্চালন ভালো থাকলে শীতের তুলনায় গ্রীষ্মকালে নখ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া ডিহাইড্রেশনের ফলে নখ ভঙ্গুর হতে পারে। তখন নখ সহজেই ভেঙে যায়, সামগ্রিক বৃদ্ধি ধীর হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি খাওয়া ও নখ নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করলে নখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

রাসায়নিক দ্রব্যাদি নখের ক্ষতি করে
ছবি: নকশা

নখ বৃদ্ধির জন্য খাবার

আমাদের ত্বক ও চুলের মতো নখেরও সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ সুষম খাদ্য নখের বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা উল্লেখযোগ্য হারে উন্নত করতে পারে। পুষ্টি–গবেষক নাফরিনা হক বলেন, ‘প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার নখের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। নখ যেহেতু ক্যারাটিন দিয়ে তৈরি, তাই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার অপরিহার্য। যে কারণে নিয়মিত ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, মসুর ডাল ও বাদাম খেতে হবে।

এ ছাড়া নিয়মিত বায়োটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। বায়োটিন (ভিটামিন বি৭) নখের শক্তি ও বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ জন্য অ্যাভোকাডো, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখীর বীজ, কলাসহ বিভিন্ন খাবার খেতে পারেন। আয়রনের ঘাটতিতে নখ ভঙ্গুর হতে পারে। জিংক দেহের কোষের বৃদ্ধি ও ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সাহায্য করে। এজন্য পালংশাক, মাংস, চিংড়ি, কুমড়ার বীজ ও ছোলা খেতে পারেন। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ক্যালসিয়াম নখের শক্তির জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। এ জন্য নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (পনির, দই ইত্যাদি), পাতাওয়ালা সবুজ শাক, কমলার রস বা বাদাম খেতে হবে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড নখের হাইড্রেশন বজায় রাখতে ও ভঙ্গুরতা কমাতে সাহায্য করে। এ জন্য চর্বিযুক্ত মাছ, চিয়া সিড বা আখরোট খেতে পারেন। ভিটামিন সি ও ই–যুক্ত খাবার কোলাজেন উৎপাদন ত্বরান্বিত করে নখকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। এ জন্য সাইট্রাস–জাতীয় ফল (কমলা, লেবু, মালটা), বেরি, সূর্যমুখীর বীজ খেতে পারেন।

আরও পড়ুন

নখের যত্নে আরও কিছু পরামর্শ

নখের যত্নে কিছু বিষয় মেনে চলা ভালো
ছবি: প্রথম আলো

সঠিক খাদ্যাভ্যাস শুধু থাকলেই হবে না, নখ শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাস তৈরি করতে হবে। শুষ্ক নখে বেশি ফাটল দেখা যায়। এমন নখ বেশি ভঙ্গুর হয়। ভিটামিন ই বা জজবা তেলের মতো ময়েশ্চারাইজিং হ্যান্ড ক্রিম বা কিউটিকল তেল ব্যবহার করুন। নখ ভাঙা রোধ করতে নিয়মিত নখ ছেঁটে ফেলুন। নখ কাটার পরে ঘষে মসৃণ করে নিন। ঘন ঘন হাত ধোয়া বা দীর্ঘক্ষণ পানির সংস্পর্শে থাকলে নখ দুর্বল হয়ে যায়। নখ রক্ষা করার জন্য বাড়ির কাজ করার সময় গ্লাভস পরুন। স্ট্রং নেইলপলিশ ব্যবহার করেও নখ সুরক্ষিত রাখতে পারেন। নখের ক্ষতি হয়, এমন নেইলপলিশ এড়িয়ে চলুন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নখ কামড়ানোর বদভ্যাস বাদ দিতে হবে। দাঁত দিয়ে নখ কাটলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত নখ ছোট রাখুন ও কামড়ানোর অভ্যাস থাকলে তেতো স্বাদের নেইলপলিশ লাগাতে পারেন।

সূত্র: স্ক্র্যাচ ম্যাগাজিন

আরও পড়ুন