ভূমিকম্পে শান্ত থাকতে কী করবেন
দেশে সম্প্রতি কয়েকবারের ভূমিকম্পে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকের রাতে ঘুম হচ্ছে না, কারও রক্তচাপ, কারও হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে। শিশুরাও ভয় পেয়েছে। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগ ঘটার আগমুহূর্তে সাধারণত নির্ভরযোগ্য কোনো সতর্কবার্তা পাওয়া যায় না। তাই ভূমিকম্পের বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকা ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা জরুরি, যা বড় ধরনের বিপর্যয় কমাতে সহায়তা করতে পারে।
মনকে শান্ত রাখতে করণীয়
মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। শান্ত হওয়ার জন্য ধীরে ধীরে ৩ সেকেন্ড শ্বাস নিন, ৩ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ৩ সেকেন্ডে ছাড়ুন। এতে আতঙ্ক কমে।
বাস্তবতায় ফোকাস করুন। ‘আমি আতঙ্কিত নই, আমি নিরাপদ পদক্ষেপ গ্রহণ করছি’—এ কথা মনে মনে বললে মন শান্ত থাকে এবং আতঙ্ক কমে যায়।
গুজবে কান দেবেন না। আতঙ্ক বাড়ায় এমন তথ্য ও গুজব এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাস ও রিল্যাক্সেশন অনুশীলন করুন।
অতিরিক্ত ভয়, ঘুমের সমস্যা, দুঃস্বপ্ন বা মাথাঘোরা অনুভব করলে সাইকিয়াট্রিস্ট, সাইকোলজিস্ট ও অকুপেশনাল থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুতি
বাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। যেমন গ্যাস সিলিন্ডার, চুলা, বৈদ্যুতিক তার নিরাপদ স্থানে রাখুন। ঘরের নড়বড়ে দেয়াল, সিলিং, ফ্যান, লাইট, ঝাড়বাতি মেরামত করে রাখুন।
জরুরি ব্যাগে টর্চ, পানি, শুকনা খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসা কিট ও গুরুত্বপূর্ণ নথির (এনআইডি, জন্মসনদ, সার্টিফিকেট) কপি রাখুন।
বের হওয়ার জরুরি পথ চিহ্নিত করুন এবং পরিবারের সদস্যদের ভূমিকম্পে করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষিত করুন। নিকটস্থ হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ স্টেশনের নম্বর লিখে রাখুন।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়
ঘরের ভেতরে থাকলে : হাঁটু গেড়ে বসুন। মজবুত টেবিল, ডেস্ক বা বিছানার নিচে আশ্রয় নিন। টেবিল বা ডেস্ক শক্ত করে ধরে থাকুন। বিপজ্জনক বস্তু থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। লিফট ব্যবহার করবেন না।
বাইরে থাকলে : খোলা জায়গায় অবস্থান করুন (মাঠ, খোলা রাস্তা)। ভবন, গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সাইনবোর্ড, ব্রিজ থেকে দূরে থাকুন।
গাড়িতে থাকলে : গাড়ি নিরাপদ জায়গায় থামিয়ে ভেতরে অবস্থান করুন। ওভারব্রিজ, ব্রিজ, টানেল বা বড় ভবনের কাছে গাড়ি থামাবেন না।
ভূমিকম্পের পর করণীয়
নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। কেউ আহত হলে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে যাবেন না। ভবনে ফাটল, ঝুলে থাকা দেয়াল, ভাঙা সিঁড়ি থাকলে ভেতরে প্রবেশ করবেন না। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ লাইন পরীক্ষা করুন। সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
ফারহানা হক, সিনিয়র ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট অ্যান্ড ইনচার্জ, মেন্টাল হেলথ ডে-সেন্টার, সিআরপি, মিরপুর, ঢাকা