অফিসের পরিবেশের কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে না তো
কর্মজীবীরা দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান অফিস বা কর্মস্থলে। তাই আপনার অফিস কতটা স্বাস্থ্যকর, তার ওপর নির্ভর করে সুস্বাস্থ্য। বিশেষজ্ঞরা ক্যানসারের ঝুঁকি মোকাবিলায় কর্মক্ষেত্র ও কাজের পরিবেশ উন্নত করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কারও ক্যানসার হলে তাঁর কাজের পরিবেশ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বাড়তি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া কর্মীদের ক্যানসার থেকে নিরাপদ রাখতে অফিসের পরিবেশে কিছু বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার।
যে কারণে ঝুঁকি বাড়ে
সাধারণভাবে ক্যানসার কিন্তু শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত যুদ্ধ নয়। কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তা পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও তাঁর আশপাশের সবাইকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ফলে ক্যানসার থেকে বাঁচতে সব রকমের চেষ্টা করাটাই দস্তুর। পরিবার, স্বজন কিংবা কোনো সহকর্মীর ক্যানসার হলে তাঁর পাশে থাকার চেষ্টাও করতে হবে।
ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রাথমিকভাবে শনাক্তের বিষয়ে ধারণা থাকা দরকার। অধিকাংশ সময় অনেকেই ক্যানসারের মাত্রা অনেক গভীরে চলে গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। নিয়মিত শরীর পরীক্ষা করলে, কোনো শঙ্কা থাকলে, তা দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। আমাদের অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা বা আলস্যের কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। আমরা কর্মক্ষেত্রে টানা অনেকক্ষণ না বসে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থান না করে সুস্থতা বজায় রাখার চেষ্টা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে অফিসের মানবসম্পদ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ যেন স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, তা খেয়াল রাখুন। প্রাণোচ্ছল কর্মক্ষেত্রের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
সচেতনতার জন্য যা করবেন
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্তকরণ সম্পর্কে জানুন। নিজে ও সহকর্মীদের মধ্যে খাবার রান্নাবিষয়ক সচেতনতা তৈরি করুন। নিয়মিত বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রচারণার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে আপনার সহকর্মীদের মধ্যে সাধারণ ক্যানসারের ঝুঁকি, সতর্কতা ও সচেতনতা সম্পর্কে অবহিত করতে পারেন। নারী ও তরুণদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ক্যানসার শনাক্তকরণ বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া বেশি জরুরি।
মানবসম্পদ বিভাগের কর্মী হলে যা করবেন
আপনি যদি মানবসম্পদ বিভাগে কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পদে থাকেন, তাহলে কর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দিন। সুস্থ কর্মী আপনার অফিস ও প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পদ। কর্মীদের শরীর ও মন ভালো না থাকলে সেই প্রভাব অফিসে পড়বে। কর্মীদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার সুযোগ থাকলে তা নিশ্চিত করুন। নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নসহ সুস্থতা সম্পর্কে সচেতন করুন। এ ছাড়া অফিসে অনেকেই ধূমপান করেন। তাঁদের সচেতন করার চেষ্টা করুন। অনেকই ই-সিগারেটসহ অন্যান্য বদভ্যাসে আসক্ত থাকেন। তাঁদের কাউন্সেলিং করার মাধ্যমে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন করুন। অফিস ক্যানটিনের খাবারের মান, ক্যানটিনে থাকা ওভেন বিষয়েও সচেতনতা দরকার। অফিসে প্লাস্টিক পণ্য এড়িয়ে চললে সেটা ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতার অংশ হিসেবে ধরে নিতে পারেন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন অনেক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার সুযোগও রাখে। যেখানে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা থাকে। কর্মস্থলের সুস্থতা ও প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের বিষয়টি মাথায় রেখেই ক্যানসার বিষয়ে সচেতন থাকুন।
নিজের খেয়াল রাখবেন যেভাবে
ক্যানসার প্রতিরোধে খাদ্য ও পুষ্টির অনেক ভূমিকা। নিজে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। শাকসবজিসহ দেশি ফল নিয়মিত খান। সতেজ ও মৌসুমি বিভিন্ন ফল নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করলে ক্যানসার প্রতিরোধ সহজ হয়। এ ছাড়া নিয়মিত পানি, দুধ, খেজুরসহ পুষ্টিকর সালাদ, উদ্ভিজ্জ বা আমিষজাতীয় স্যুপ খাওয়ার অভ্যাস করুন। নিরামিষভোজীরা প্রোটিনের জন্য পনির, দই ও বাটার মিল্কের ওপর নির্ভর করতে পারেন। আর আমিষভোজীরা নিয়মিত পুষ্টিকর মাছ, ডিম ও পরিমাণমতো মাংস খান। লাল মাংস পুরোপুরি এড়িয়ে চললে খুবই ভালো।
যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা চিকিৎসক শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ অফিসের কর্মীরা স্বাস্থ্যসচেতন নন। একজায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে কাজ করা ও অনেক মানসিক চাপের মধ্যে থাকার কারণে তাঁরা অনেক রোগের ঝুঁকিতে থাকেন। এ ধরনের ঝুঁকি ভবিষ্যতে ক্যানসারসহ বিভিন্ন মারাত্মক সংকট তৈরি করতে পারে। এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করবেন না। এতে মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তখন শরীরের বিভিন্ন জটিলতা শুরু হয়। প্রতি ঘণ্টায় চেষ্টা করুন কিছুটা হাঁটাহাঁটি করতে। দীর্ঘ সময় রোদে বা এসিতে থাকবেন না। ভিটামিন সি, ই, বিটা ক্যারোটিন, সেলেনিয়াম ও ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খান। এসব খাবারের রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক উপাদান কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। প্রাকৃতিক খাবার দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগের ঝুঁকি থাকলে তা কমাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া পুষ্টিকর খাবার দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায়, শারীরিক অবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য ফল, শাকসবজির মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। অফিসের লাঞ্চে পুষ্টিকর খাবার বাড়ি থেকে নেওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। অফিস কর্তৃপক্ষ যদি খাবারের ব্যবস্থা করে, সে ক্ষেত্রে পুষ্টির দিকে বেশি খেয়াল রাখুন। নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির জন্য সবাইকে ক্যানসার সম্পর্কে জানার পরামর্শ দিন। অনেক সময় কর্মস্থলের পরিবেশ ও রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিতে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়। এসব ঝুঁকি কমিয়ে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরিতে নিয়োগদাতা ও কর্মী সবার আগ্রহ থাকা প্রয়োজন।’
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস