কম ঘুমালে মনটা কেন খাই খাই করে

কীভাবে রাতে ভালো ঘুমাবেন, এমন উপদেশ আপনি চলতে–ফিরতে হরহামেশাই পাবেন। তবে মাঝেমধ্যে এক শ একটা উপায় জানা সত্ত্বেও রাতে ভালোভাবে ঘুমানো সম্ভব হয় না। অথচ দিনের কাজগুলো তো সুন্দরভাবে করতেই হবে। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, কীভাবে রাতে কম ঘুমিয়েও আপনার সেরাটা দিয়ে কর্মময় দিন পার করবেন।

রাতে কম ঘুম

পাশের বাসায় বিয়ে, সারারাত চলছে ধুমধারাক্কা গান, এর মাঝে কি আর ঘুম হয়? অথবা আপনার হয়ত সাত মাসের ছোট্ট বেবি, সে দু ঘণ্টা পর পর ঘুম থেকে জেগে যায়, স্বাভাবিকভাবেই আপনার একটানা আটঘণ্টা ঘুমের বারোটা বাজে। অথবা এমনও হতে পারে, রাত ১২টায় বিছানায় যাওয়ার চেয়ে ‘মেইড ইন হেভেন’–এর দ্বিতীয় সিজনটা দেখে ফেলাই বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। এরকম তো হতেই পারে।  

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্কাডিয়ান নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক রাসেল ফস্টার জানান, আপনি যে রাতে কম ঘুমিয়েছেন, এর তিনটা লক্ষণ আছে। প্রথমত, আপনি নিজের সেরা এনার্জি দিয়ে কাজ করতে পারছেন না, মনে হচ্ছে যে ক্লান্ত, ঘুম ঘুম লাগছে। দ্বিতীয়ত, আপনি হয়তো সম্প্রতি ছুটি পেয়েছিলেন। তখন বেশি ঘুমিয়ে ফেলেছেন। তৃতীয়ত, আপনি দিনে ঘুমিয়েছেন। তাই রাতে ঠিকমতো ঘুমটা হয়নি।  

নানা কারণে রাতে কম ঘুম হতেই পারে
ছবি: আনস্প্ল্যাশ

কফি তো খেতেই পারি

এটা যদি হয়, আপনার দিনের চতুর্থ কফি, তাহলে উত্তর হলো না। আর না। কফি একটা দুর্দান্ত উদ্দীপক। আপনি যদি দুপুর হওয়ার আগেই তিন কাপ কফি খেয়ে ফেলেন, আর না। তাহলে আজ রাতটাও গত রাতের মতো হবে। ঘুম হবে না। নর্দামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ইয়ান ওয়ালশ ঘুম, ব্যায়াম ও পুষ্টি নিয়ে গবেষণা করছেন।

তিনি জানান, কফি বা ক্যাফেইন মানুষের স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করে, তবে মাত্রাতিরিক্ত কফি মানুষকে উদ্দীপ্ত রাখার বদলে ক্লান্ত করে ফেলে। এ ছাড়া অল্প ঘুমের পর আপনি যদি বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করেন, তাহলে গ্লুকোজ নিঃসরণে গরমিল হতে পারে। যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

তাই বেলা দুইটার আগেই যদি আপনি তিন কাপ কফি খেয়ে ফেলেন, আর খাবেন না। রিফ্রেশিং ড্রিংক হিসেবে হারবাল চা খেতে পারেন।  

চকলেটের বিকল্প হিসেবে স্বাস্থ্যকর কী খাওয়া যেতে পারে

যেকোনো চকলেট বা মিষ্টিজাতীয় খাবারও চট করে রক্তের সঙ্গে মিশে আপনাকে এনার্জি দেয়। কিন্তু মিষ্টিজাতীয় খাবারের স্বাস্থ্যঝুঁকিও তো রয়েছে। তাই সকালবেলা একটা ভরপুর স্বাস্থ্যকর নাশতার কোনো বিকল্প নেই। ডায়েটিশিয়ান রোজমেরি মার্টিন কিছু স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্টের পরামর্শ দিয়েছেন। হোলগ্রেইন কার্বোহাইড্রেটের (লাল চাল, ওটস, কর্ন) সঙ্গে সবজি, প্রোটিন, ফল আর স্বাস্থ্যকর চর্বি।

ওট পরিজ, সয়া মিল্ক, সয়া ইয়োগার্ট, কিছু বেরিজাতীয় ফল (ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, জাম) আর বাদাম একটা চমৎকার সকালের নাশতা। এ ছাড়া খেতে পারেন হোলমিল টোস্ট, সঙ্গে টমেটো, অ্যাভোকাডো ও শাকসবজি। এরপর কয়েকটা বাদাম আর এক কাপ চা, অবশ্যই চিনি ছাড়া। লাল চালের খিচুড়ি আর ডিমভাজিও আদর্শ সকালের নাশতা। রুটি বা পাউরুটির সঙ্গে সবজি, ডিম, একটা ফল আর কয়েক পদের কয়েকটা রোস্টেড (পেস্তা, কাজু, কাঠ, চিনা) বাদাম খেতে পারেন।    

ক্লান্ত থাকলে মনটা কেন খাই খাই করে

কম ঘুমালে স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্ত লাগে। আর ক্লান্ত লাগলে ক্ষুধা উদ্রেককারী হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। পেট ভরা থাকলেও মস্তিষ্ক সঠিক তথ্য পায় না। ফলে আপনার শুধু খেতে ইচ্ছে করে। ফলে খেয়াল রাখবেন, যেদিন কম ঘুম হয়, সেদিন খাবারে যেন অবশ্যই পর্যাপ্ত ফাইবার আর পানি থাকে।

ক্লান্ত থাকলেই ক্ষুধা পায়
ছবি: আনস্প্ল্যাশ

সুযোগ পেলেই কি দিনে খানিক গড়িয়ে নেবেন

দুপুরের খাবারের পর ২০ মিনিটের ন্যাপ আপনাকে দিনের বাকি সময় এনার্জিটিক রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু আপনি যদি রাতে ঠিকমতো না ঘুমান, তাহলে শরীর বা দেহঘড়ি ২০ মিনিটের ন্যাপের নির্দেশনা অমান্য করে দিব্যি ২ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেবে।
 
ঘুম না হলে জিমে যেতে ইচ্ছে করে না, কী করব

জিমে যাবেন না। শরীরের কথা শুনবেন। যদি ক্লান্ত লাগে, তাহলে শরীরচর্চা আপনাকে আরও ক্লান্ত করে তুলবে। জিমে গিয়ে আপনি তখনই উপকৃত হবেন, যখন আপনি শারীরিক আর মানসিকভাবে ঘাম ঝরাতে প্রস্তুত।