যে ৯টি প্রশ্নের উত্তর বলে দেবে আপনি মানসিকভাবে কতটা দৃঢ়

মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিরা অন্যদের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী। তাঁরা বিরুদ্ধ স্রোতেও নিজেদের মতামত, মূল্যবোধ ও দর্শনে থাকেন অটল। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে প্রশিক্ষিত মনোবিদ ড. কোর্টনি ওয়ারেনের মতে, মানসিক দৃঢ়তা আমাদের সৃজনশীল, স্বতঃস্ফূর্ত, মুক্ত ও অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে সাহায্য করে। আপনি মানসিকভাবে বাকিদের চেয়ে দৃঢ় কি না, তা নিজেই যাচাই করতে পারেন। নিচের ৯টি প্রশ্নের মধ্যে অন্তত একটা উত্তরও যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে বুঝবেন আপনি অন্যদের চেয়ে মানসিক দৃঢ়তায় এগিয়ে আছেন।

বিরূপ পরিস্থিতিতে আবেগের বশে হুট করে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশ দক্ষ হন মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিরাছবি: প্রথম আলো

১. আপনি কি ভিন্নমতে সহনশীল?

মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিরা যেকোনো বিষয়ে অন্যের মতামত বা দর্শনের প্রতি বেশ শ্রদ্ধাশীল থাকেন। ঐকমত্য না হলেও অন্যের মতামত দমন করে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করেন না তাঁরা। কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধানে এ ধরনের ব্যক্তিরা ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করেন।

২. আপনি কি ব্যক্তিগত সীমানা তৈরি করতে পারেন?

আপনি কী পছন্দ করেন আর কী পছন্দ করেন না, কিসে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন আর কিসে করেন না, অন্য কেউ আপনার ব্যক্তিগত বিষয়াবলির ওপর কতটুকু প্রভাব রাখতে পারবে বা পারবে না—এসবের একটি অদৃশ্য সীমারেখা তৈরি করা মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিদের একটি বিশেষ গুণ। এই সীমানা শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকারই হতে পারে।

৩. আপনি কি নিজের ভুল স্বীকার করতে অভ্যস্ত?

জীবনে চলার পথে আমরা সবাই কমবেশি ভুলত্রুটি করি। কিন্তু ভুল করার পর তা স্বীকার করা অনেকের জন্যই কঠিন। অনেকে মনে করেন, নিজের ভুল স্বীকার করলে ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়। সত্য হলো, নিজের ভুল স্বীকার করলে ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয় না, বরং অন্যের কাছ থেকে সম্মান পাওয়া যায়। মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিরা নিজে কোনো ভুল করলে তা স্বীকার করেন, ভুল থেকে সৃষ্ট যেকোনো কিছুর ব্যাপারে দায়িত্বশীল থাকেন এবং পরবর্তী সময়ে ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন।

নিজের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ খুব ভালো করে জেনে রাখা মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য
ছবি: প্রথম আলো

৪. আপনি কি আপনার বিশ্বাস ও মূল্যবোধ খুব ভালো করে জানেন?

অন্যের তীব্র বিরোধিতার মুখে নিজের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইলে, সেসব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা চাই। কোনো মতাদর্শ বিশ্বাস করার আগে তা কেন বিশ্বাস করছেন, কতটুকু নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তা আপনার কাছে এসে পৌঁছেছে—এসব নিজের কাছে আগে জানতে চান। নিজের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ খুব ভালো করে জেনে রাখা মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিদের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

৫. নেতিবাচক মতামত প্রকাশের সময় অন্যের সম্মান অক্ষুণ্ন থাকে কি না, তা খেয়াল রাখেন?

যেকোনো বিষয়ে আপনার দ্বিমত থাকতেই পারে। তবে সেই দ্বিমত প্রকাশের ভঙ্গি বা ধরনই বলে দেয় অন্যের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে আপনি কতটা সচেষ্ট। নেতিবাচকতা প্রকাশের সময় সরাসরি ‘উহু’ বা ‘না’ দিয়ে বাক্য শুরু না করে, ‘কিন্তু, আমি মনে করি…’ বা ‘আমি বিশ্বাস করি...’ বলে বাক্য শুরু করা যেতে পারে।

৬. আপনি কি সমালোচনা গ্রহণ করেন?

গঠনমূলক সমালোচনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে ভদ্রভাবে গ্রহণ করা মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য। সমালোচনা সহ্য করার সাহস থাকা উচিত সবারই।

গঠনমূলক সমালোচনা সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে ভদ্রভাবে গ্রহণ করা মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য
ছবি: প্রথম আলো

৭. আপনি কি যেকোনো পরিবর্তন সহজে মেনে নিতে পারেন?

মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিরা জীবনের উত্থান–পতন খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেন। যেকোনো পরিবর্তন স্বাগত জানাতে পারেন। পরিবর্তন দেখে ভয় না পেয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজের সর্বোচ্চ ভালো অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করাও তাঁদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

আরও পড়ুন

৮. আপনি কি বিরূপ পরিস্থিতিতে হুট করে প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে নিজেকে বিরত রাখেন?

বিরূপ পরিস্থিতিতে আবেগের বশে হুট করে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশ দক্ষ হন মানসিকভাবে দৃঢ় ব্যক্তিরা। বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হলে এ ধরনের ব্যক্তি মাথা ঠান্ডা রাখতে জানেন। ফলে তাঁরা সহজেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন।

দৃঢ় মানসিকতার ব্যক্তিরা যেকোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে তা মেনে নিয়ে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকেন
ছবি: প্রথম আলো

৯. আপনি কি যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত?

দৃঢ় মানসিকতার ব্যক্তিরা জীবনে চলতে গিয়ে যেকোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলে তা মেনে নিয়ে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকেন। খারাপ সময়ে কীভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, তা তাঁরা ভালো করেই জানেন।

শেষ কথা

মানসিকভাবে দৃঢ় থাকলে কেবল মানসিক স্বাস্থ্যই ভালো থাকে না, এটি আমাদের নতুন কিছু করার এবং প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেয়। তাই আপনি মানসিকভাবে যত বেশি দৃঢ় থাকবেন, তত বেশি অর্থপূর্ণ উপায়ে নিজের জীবন উপভোগ করতে পারবেন। 

সূত্র: সিএনবিসি

আরও পড়ুন