হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়ার সমস্যা বেলস পালসি কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা
হঠাৎ এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, মুখের এক পাশ নড়ছে না, চোখ পুরোপুরি বন্ধ হয় না, হাসলে মুখ বেঁকে যায়, খাওয়ার সময় ঠোঁটের পাশ দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। বিষয়টা সত্যি আতঙ্কের, স্ট্রোক হলো নাকি? কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি বেলস পালসি; অর্থাৎ মুখের নার্ভের সাময়িক দুর্বলতা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে বেশির ভাগ রোগীই কয়েক মাসের মধ্যে ভালো হয়ে ওঠেন।
কেন হয় বেলস পালসি
বেলস পালসি অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই ঘটে যেতে পারে; অর্থাৎ আগাম লক্ষণ ছাড়াই মুখের এক পাশ হঠাৎ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। অন্য সম্ভাব্য কারণগুলো হলো—
সুপ্ত কোনো ভাইরাসের পুনরায় সক্রিয় হওয়া, যেমন হারপিস জোস্টার।
নার্ভের প্রদাহ বা ফোলা।
ঝুঁকির কারণ—ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ, ঠান্ডা বাতাস।
লক্ষণ
মুখের এক পাশ দুর্বল হয়ে যাওয়া। চোখ বন্ধ করতে না পারা।
কপালে ভাঁজ ফেলতে না পারা।
কথা জড়ানো। খাবার পড়ে যাওয়া।
অন্যান্য: চোখ শুকানো, কানে শব্দ বেশি লাগা, স্বাদ কমে যাওয়া। তবে এর সঙ্গে হাত-পা দুর্বল হওয়া বা কথা বেশি জড়িয়ে এলে স্ট্রোক সন্দেহে হাসপাতালে যেতে হবে।
চিকিৎসা কী
ওষুধ: ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্টেরয়েড, প্রয়োজন হলে অ্যান্টিভাইরাল দিতে হবে। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল।
চোখের যত্ন: কৃত্রিম চোখের পানি, লুব্রিকেটিং অয়েন্টমেন্ট, আই টেপিং, সানগ্লাস ব্যবহার।
রিহ্যাবিলিটেশন ব্যবস্থাপনা
এ সমস্যার চিকিৎসার মূল অংশই হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। একজন বিশেষজ্ঞের অধীনে করা উচিত।
আইআরআর (ইনফ্রারেড থেরাপি): ব্যথা ও স্টিফনেস কমায়, রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।
গরম সেঁক: দিনে ২-৩ বার। মুখে হালকা মালিশ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফেসিয়াল রিট্রেনিং এক্সারসাইজ।
পিএনএফ ফেসিয়াল এক্সারসাইজ: হাতের সহায়তায় মুখের পেশি সক্রিয় করা, ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা।
ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন: শুধু বিশেষজ্ঞের নির্দেশে করতে হবে।
দৈনন্দিন জীবনে করণীয়
চোখের সুরক্ষা ও যত্ন, নরম খাবার গ্রহণ, ধীরে কথা বলা, দুর্বল পাশ ওপরে রেখে খাওয়া, স্ক্রিন টাইম কমানো। ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলা।
ডা. সাকিব আল নাহিয়ান, সহকারী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা