স্তনে যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন

অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস। স্তন ক্যানসার বর্তমানে নারীদের অন্যতম প্রধান ক্যানসারে পরিণত হয়েছে। তাই প্রত্যেক নারীর সতর্কতা অবলম্বন করাটা জরুরি। একেবারে শুরুর দিকে স্তন ক্যানসারের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ অনেক সময় প্রকাশ পায় না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক বা একাধিক উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। স্তনের এসব অস্বাভাবিকতা বা পরিবর্তন একজন নারী নিজেই অনুভব করতে পারেন, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অধিকাংশ পরিবর্তন ম্যামোগ্রাম, এমআরআই বা আলট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং–পদ্ধতির মাধ্যমেই সনাক্ত করা যায়।

চলছে স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস, অক্টোবর
ছবি: প্রথম আলো

এখন জানা যাক, কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন—


১. স্তনে এক বা একাধিক লাম্প বা চাকা অনুভূত হওয়া
২. আগে অনুভূত হওয়া কোনো চাকা পরিবর্তিত হওয়া
৩. স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন
৪. স্তনের যেকোনো জায়গায় চামড়া ফ্যাকাশে, লাল হওয়া বা ফুলে ওঠা
৫. স্তনবৃন্তে ব্যথা হওয়া
৬. স্তনবৃন্তের আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে অসমান, চ্যাপটা বা বেঁকে যাওয়া
৭. স্তনবৃন্ত থেকে তরল নিঃসরিত হওয়া
৮. বগল ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেওয়া।

ওপরের যেকোনো এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিলে দেরি করবেন না। স্তনের অন্য কোনো পরিবর্তন নারী নিজে বা অন্য কেউ, যে-ই বুঝতে পারুন না কেন, পরিবর্তনটি সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষার মাধ্যমে লক্ষণ বা পরিবর্তনটি স্তন ক্যানসার কি না, নির্ণয় করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

চিকিৎসা কী


স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার প্রচলিত যে ধরনগুলো আছে, তা হলো সার্জারি, রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি।


১. লাম্পেক্টমি স্তন ক্যানসারের শল্যচিকিৎসায় সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ের রোগীদের জন্য করা হয়। স্তনের টিউমার অপসারণের জন্য অনেক ধরনের সার্জারি রয়েছে। লাম্পেক্টমির মাধ্যমে টিউমার এবং আশপাশের কিছু টিস্যু অপসারণ করা হয়। মাস্টেকটমির মাধ্যমে স্তন অপসারণ করা হয়। ডাবল মাস্টেকটমি মানে উভয় স্তন অপসারণ।


২. স্তনের টিউমার থেকে কয়েকটি লিম্ফ নোড কেটে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। যদি ক্যানসারের রিপোর্ট নেগেটিভ হয়, লিম্ফ নোড অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। যদি সেন্টিনেল নোড বায়োপসির সময় অপসারিত লিম্ফ নোডগুলোতে ক্যানসার ধরা পড়ে, চিকিৎসক অতিরিক্ত লিম্ফ নোডগুলো অপসারণ করতে পারেন।

৩. কনট্রালট্রাল প্রোফিল্যাকটিক মাস্টেকটমি হলো একটি স্তনে ক্যানসার ধরা পড়লে কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ স্তনও সরিয়ে নেওয়া হয়। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণ রশ্মি ক্যানসার কোষগুলোকে লক্ষ্য করে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে ধ্বংস করে।


৪. ব্র্যাকিথেরাপি শরীরের ভেতর থেকে ক্যানসার অপসারণের জন্য ব্যবহার করা হয়। টিউমারের স্থানের কাছে শরীরের ভেতরে অল্প সময়ের জন্য তেজস্ক্রিয় বীজ বসানো হয় এবং এভাবে ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করা হয়।


লেখক পরিচিতি: ডা. সেতাবুর রহমান, ব্রেস্ট, খাদ্যনালি ও কলোরেক্টাল সার্জন, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, ল্যাবএইড ক্যানসার স্পেশালিস্ট হাসপাতাল, গ্রিন রোড, ঢাকা।

আরও পড়ুন