কম খরচে পুরো পরিবারের প্রোটিন বা আমিষের চাহিদা মেটাবেন যেভাবে

খাবারের খরচ যদি কমাতেই হয়, তাহলে তা এমনভাবে করুন, যাতে খাবারের ধরন বদলালেও কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি না হয়ছবি: প্রথম আলো

সাধারণ মানুষের রোজগারের একটা বড় অংশ ব্যয় হয়ে যায় পরিবারের খাবারদাবারের পেছনে। অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে খরচ কমাতে পারলেও খাবারদাবারের বেলায় আপস করা মুশকিল। খাবারের পরিমাণ কমানো কিংবা পুষ্টিকর, ‘দামি’ খাবার একেবারেই না কেনার মতো সিদ্ধান্ত নিলে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে আমিষের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি। খাবারের খরচ যদি কমাতেই হয়, তাহলে তা এমনভাবে করুন, যাতে খাবারের ধরন বদলালেও কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি না হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমিষের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন ধরনের উৎস থেকে আমিষ গ্রহণ করা ভালো, যাতে দামি খাবার কম কেনা হলেও পুরো পরিবারই তার খানিকটা ভাগ পায়। এমনটাই বলছিলেন টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শম্পা শারমিন খান

আমিষের উৎস

আমরা প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ বিভিন্ন উৎস থেকেই আমিষ পাই। প্রাণিজ আমিষ সবচেয়ে ভালো। কারণ, প্রাণিজ আমিষে আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। এসবকে বলা হয় প্রথম শ্রেণির আমিষ। বুঝতেই পারছেন, অন্যান্য বহু খাবার খেলেও মাছ, মাংস, ডিম কিংবা দুধের মতো তুলনামূলক দামি খাবার কেন আমাদের প্রয়োজন।

অন্যদিকে নানা রকম ডাল, বাদাম, বীজ কিংবা সয়াবিনের মতো উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আমরা যে আমিষ পাই, তাতে কিন্তু আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের সব থাকে না। উদ্ভিজ্জ আমিষকে তাই বলা হয় দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ। বিষয়টা একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝা যেতে পারে। একটা ডিম খেলে আপনি যে পুষ্টি পাবেন, কোনো এক পদের ডাল অনেক খেলেও কিন্তু সেই পুষ্টি মিলবে না। অর্থাৎ সম্পূর্ণ পুষ্টি পাওয়ার জন্য আপনাকে একটি উদ্ভিজ্জ আমিষের সঙ্গে সম্পূরক হিসেবে আরও কিছু যোগ করতে হবে।

আরও পড়ুন

সবার জন্য আমিষ

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ মিলিয়ে কোনো পদ তৈরি করতে পারেন রোজ। এতে নানা ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিডের জোগান হবে শরীরে। একইভাবে একাধিক দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষের মিশ্রণ থেকেও বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির আমিষ এমনভাবে রান্না ও পরিবেশন করতে পারেন, যাতে তা পরিবারের সবাইকে দেওয়া যায়। এভাবে পুষ্টিকর খাবার পরিবেশনের কিছু উপায় জেনে নিন—

  • ঘন ডাল খেতে পারেন। রোজ কেবল মসুর ডাল না করে কখনো কখনো পাঁচমিশালি ডাল করা ভালো।

  • খিচুড়ির সঙ্গে একটা ডিম ভেজে নিয়ে পরিবারের সবাইকে ভাগ করে দিতে পারেন। নানা রকম ডাল মিলিয়ে খিচুড়ি করা ভালো। তবে খেসারির ডাল নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয়, তাতে ল্যাথাইরিজমের ঝুঁকি বাড়ে।

  • বিভিন্ন ধরনের ডাল আর বীজ একসঙ্গে রান্না করতে পারেন। চাইলে একটি ডিম যোগ করতে পারেন। ডাল ও বীজের বড়া করতে পারেন।

  • কাঁঠালের বীজের সঙ্গে একটা ডিম দিয়ে ভর্তা করতে পারেন।

  • এক পাতিল ডাল রান্না করে নামানোর আগে একটা ডিম দিয়ে দিন। কিংবা একটা ডিমের ঝুড়ি করে সবার পাতে দিতে পারেন অন্যান্য উদ্ভিজ্জ আমিষের সঙ্গে।

  • আলু বা কাঁঠালের বীজ বা শিমের বীজের সঙ্গে মাছ, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা প্রভৃতি মিশিয়ে মাছের কাটলেট বা বড়া করতে পারেন। অল্প তেল দিয়ে এভাবে একটি সুস্বাদু পদ তৈরি করলে স্বাদে ভিন্নতা আসে আর অল্প মাছই পরিবারের সবাইকে দিতে পারবেন।

  • মটরশুঁটি বা শিমের বীজের সঙ্গে মাঝারি আকারের একটি মাছের মাথা দিয়ে রান্না করতে পারেন।

  • ছোট মাছের সঙ্গে মটরশুঁটি বা শিমের বীজ দিয়ে চচ্চড়ি করা যায়।

  • মাছের মুড়িঘণ্ট করতে পারেন কোনো কোনো দিন। কিংবা মাছের কাঁটা দিয়ে চচ্চড়িও করতে পারেন।

  • সপ্তাহে এক দিন বুটের ডাল দিয়ে মুরগির গিলা-কলিজা রান্না করতে পারেন। অবশ্য মুরগির গিলা-কলিজা সপ্তাহে এক দিনের বেশি না খাওয়াই ভালো।

  • আলাদা আলাদা এক কাপ দুধ সবার জন্য যদি জোগান দেওয়া না-ও যায়, তাহলে পায়েস বা সুজি করতে পারেন। যোগ করতে পারেন কোনো বাদাম।

  • মাঝেমধ্যে পুডিং করতে পারেন। তুলনামূলক কম খরচে আমিষের ব্যবস্থা হবে এভাবেও।

আরও পড়ুন

যাঁদের চাই বাড়তি খেয়াল

যিনি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান কিংবা যিনি অন্তঃসত্ত্বা, তাঁর আমিষের চাহিদা বেশি থাকে। শিশু–কিশোরদের ক্ষেত্রেও আমিষের চাহিদা বেশি। পরিবারের এ ধরনের সদস্যদের জন্য অবশ্যই প্রথম শ্রেণির কোনো না কোনো আমিষের ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করুন রোজ।

আরও পড়ুন