ডায়রিয়া হলে কি ওষুধ খাবেন
ডায়রিয়া হলে অনেকেই দ্রুত সুস্থ হতে বিভিন্ন রকম ওষুধ খাওয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু সব সময় সেটা নিরাপদ না–ও হতে পারে। ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ (লোপেরামাইড ও অ্যান্টিবায়োটিক) চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে যখন ডায়রিয়ার কারণ জীবাণু সংক্রমণ নাকি অন্য কিছু, সেটা অজানা থাকে। বেশির ভাগ ডায়রিয়া কোনো ওষুধ ছাড়া নিজে নিজেই সেরে যায়, কেবল পানি ও লবণশূন্যতা রোধে স্যালাইন খেলেই চলে।
কেন ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়
১. এতে দেহের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম বাধাগ্রস্ত হয়। ডায়রিয়া অনেক সময় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের ফল। ডায়রিয়ার মাধ্যমে সংক্রমণকারী জীবাণু ও টক্সিন আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্র থেকে বের হয়ে যায়। ওষুধ দিয়ে ডায়রিয়া বন্ধ করলে এ ক্ষতিকর উপাদানগুলো দেহে দীর্ঘক্ষণ থেকে যেতে পারে, ফলে সংক্রমণ আরও খারাপ ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
২. লোপেরামাইড বিভিন্ন হালকা বা গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বা বমি ভাব, পেটফাঁপা, মাথাঘোরা, দুর্বল বা হালকা মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা) হতে পারে। বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে হৃৎস্পন্দনের সমস্যা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের লিভার সমস্যা আছে বা যাঁরা অন্য ওষুধ নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
৩. কিছু ব্যাকটেরিয়া শিগা টক্সিন তৈরি করে। এই টক্সিন ডায়রিয়া এবং হিমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম (এইচইউএস) নামক একটি মারাত্মক অবস্থা তৈরি করে, যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে, দেখা দিতে পারে রক্তস্বল্পতা। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বন্ধের ওষুধ ব্যবহার করলে এইচইউএসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪. ডায়রিয়ায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের আগে সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ডায়রিয়ার কারণও হতে পারে, যা অ্যান্টিবায়োটিক-সম্পর্কিত ডায়রিয়া নামে পরিচিত। অন্যান্য ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে যেমন—ভাইরাল বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না।
তাহলে ডায়রিয়া হলে কী করবেন
১. পর্যাপ্ত পানি ও ইলেকট্রোলাইট গ্রহণ: ডায়রিয়ায় দেহ থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা পূরণ করা জরুরি। ওআরএস স্যালাইন সলিউশন বা লবণ-চিনি মিশ্রিত পানি পান করুন।
২. সহজপাচ্য হালকা খাবার খান: সহজে হজম হয় এমন খাবার, যেমন ভাত, কলা, আপেল, টোস্ট, শুকনা খাবার ইত্যাদি হালকা খাবার খেতে পারেন। চর্বিযুক্ত ও বেশি মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. প্রোবায়োটিক গ্রহণ: প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ল্যাকটোব্যাসিলাস বা অন্যান্য প্রোবায়োটিক গ্রহণ করা যেতে পারে, যা অন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: ডায়রিয়া যদি দুই দিনের বেশি স্থায়ী হয়, জ্বর, বমি রক্তযুক্ত পায়খানা বা তীব্র পেটব্যথা থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডায়রিয়ায় মৃত্যুর মূল কারণ শরীরে লবণ ও পানিশূন্যতা। এ ঘাটতি মেটাতে তাই সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হলো খাবার স্যালাইন। নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও তরল খেলে রোগী ধীরে ধীরে নিজেই সেরে ওঠেন।
কখন ওষুধ প্রয়োজন
দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। ভ্রমণকালীন ডায়রিয়ায় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শে।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন ডায়রিয়া যদি দুই দিনের বেশি স্থায়ী হয়, যদি তীব্র পেটব্যথা, জ্বর, বমি বা মলের সঙ্গে রক্ত যায়, যদি পানিশূন্যতা দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শুধু এমন পরিস্থিতিতে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।