গরম পানি শরীরে পড়লে কী করবেন

ঝটপট গরম পানি পেতে অনেকে ইলেকট্রিক কেটলি ব্যবহার করেন
ছবি: অধুনা

শীতকালে গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে গরম পানির ব্যবহার বাড়ে। সাধারণত চুলায় বা ইলেকট্রিক কেটলিতেই সব সময় পানি গরম করা হয়ে থাকে। এই পানি এদিক-ওদিক নেওয়ার সময় বা ঢালতে গিয়ে প্রায়ই অসাবধানতাবশত শরীরের ত্বকে লেগে পুড়ে যায়। গবেষণা বলছে, এ সময় বাড়ির শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। তারা হঠাৎ গরম পানিতে হাত দিয়ে দেয় অথবা ছলকে এসে পানি তাদের গায়ে পড়ে। এ ধরনের ক্ষতকে বলা হয় স্কাল্ড। সাধারণত এ ধরনের বার্নে ত্বকের উপরিভাগে ক্ষত বেশি হয়ে থাকে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের বার্ন বিপজ্জনক হতে পারে।

কীভাবে হয়

বেশির ভাগ সময়ই অসাবধানতার কারণে শরীরে গরম পানি পড়ে ত্বক পুড়ে যায়। চুলা থেকে গরম পানি বালতিতে বা জগে ভরার সময় বা বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। অনেক সময় না বুঝে অতিরিক্ত গরম পানি বা হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করার জন্যও এমনটি হতে পারে।

ক্ষতের প্রকারভেদ

প্রথম ও দ্বিতীয় ডিগ্রি বার্নে (পোড়ায়) সাধারণত চামড়া লাল হয়ে যায় ও দ্রুত ফোসকা পড়ে। এ ধরনের পোড়ায় তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হয়। যদি ক্ষত বেশি গভীর হয়, তাহলে চামড়ার নিচের মাংসপেশি পর্যন্তও বার্ন হতে পারে। তখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

আরও পড়ুন

বাড়িতে করণীয়

পুড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে প্রথমে গরম পানি বা তরলের উৎস থেকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে। এরপর দেখতে হবে পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানের কাছে কোনো গয়না বা ধাতব জিনিস আছে কি না, থাকলে দ্রুত তা খুলে ফেলতে হবে। তা না হলে সেগুলো পরে চামড়ায় চেপে বসে ক্ষতস্থানে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে। ফোসকা নিজে নিজে গলানো উচিত নয়।

গরম পানিতে বা আগুনে ছেঁকা লাগলে আমরা অনেক সময় ভুল কিছু কাজ করি, যাতে আরও ক্ষতি হতে পারে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রথমে স্বাভাবিক কলের পানি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর শুকনা কাপড় বা গজ দিয়ে ড্রেসিং করে দিতে হবে। বার্নের ক্ষততে নার্ভের প্রান্ত উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তাই খোলা অবস্থায় রাখলে এ ধরনের ক্ষতস্থানে ব্যথা বেড়ে যায়। এরপর একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

চিকিৎসা

অনেকেই পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানে ডিম, টুথপেস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করেন। এতে সাময়িক ব্যথা উপশম হলেও পরে ড্রেসিংয়ের সময় সমস্যা হয়। ভেজা ড্রেসিং দিলেও বার্নের ক্ষততে ইনফেকশন হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। এর বদলে বাসায় টি–ব্যাগ থাকলে, তা পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে ক্ষতস্থানে ধরে রাখলে ব্যথা উপশম হতে পারে। যেকোনো বার্নেই শরীরের কার্যকরী তরলের পরিমাণ কমে যায়। তাই পুড়ে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি বা লবণ পানি খেয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া ক্ষতস্থান নিরাময়ের জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া ভালো।

প্রতিরোধে করণীয়

গরম পানি ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। চুলা থেকে পানি নামানোর সময় অন্যদিকে মন দেওয়া যাবে না। বড় হাঁড়ি বাথরুমে টেনে না নিয়ে বরং বালতি চুলার কাছে এনে পানি ঢালতে হবে। দরকার হলে অর্ধেক অর্ধেক করে ঢালতে হবে বা মগে নিতে হবে। পানি পান বা গোসলের আগে পানির তাপমাত্রা সতর্কতার সঙ্গে আঙুল ডুবিয়ে দেখে নিতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিসজনিত বা অন্য কারণে স্নায়ুবৈকল্য আছে, তাঁরা তাপমাত্রা সঠিকভাবে টের পান না। এমন হলে অন্যদের সাহায্য নিন। গরম পানির আধার যেন শিশুদের নাগালে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

ডা. রেজা আহমদ, কনসালট্যান্ট, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সোবহানীঘাট, সিলেট