মধু বা গুড় কি চিনির বিকল্প হতে পারে? কী বলছেন পুষ্টিবিদ

চিনির স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি। তাই কেবল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি নয়, স্বাস্থ্যসচেতন বহু মানুষই চিনির বিকল্প খোঁজেন। চিনির বিকল্প হিসেবে মধু বেশ জনপ্রিয়। গুড়কেও চিনির বিকল্প ভাবেন কেউ কেউ। আদতে মধু বা গুড় কি চিনির বিকল্প হতে পারে? টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান-এর সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছেন রাফিয়া আলম

পুষ্টিগুণে কি মধু এগিয়ে

অনেকে ভাবেন, প্রক্রিয়াজাত উপাদান হওয়ার কারণে চিনি আমাদের শরীরের যে ক্ষতি করে, প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া মধু ততটা ক্ষতি করে না, এ ভাবনা ভুল
ছবি: পেক্সেলস

এ কথা ঠিক যে মধুতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য কিছু পুষ্টি উপাদান থাকে, যা চিনিতে নেই। তবে মনে রাখতে হবে, মধুতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং বাকি সব পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ নগণ্য। বরং মধুতে সবচেয়ে বেশি যা আছে, তা হলো শর্করা।

অনেকে ভাবেন, প্রক্রিয়াজাত উপাদান হওয়ার কারণে চিনি আমাদের শরীরের যে ক্ষতি করে, প্রাকৃতিক উপায়ে পাওয়া মধু ততটা ক্ষতি করে না, এ ভাবনা ভুল। মধুতে চিনির চেয়েও ক্যালরির মাত্রা একটু বেশি। মোট কত ক্যালরি আপনি সারা দিনে গ্রহণ করছেন, সুস্থতার জন্য সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। সেই ক্যালরির উৎস যা-ই হোক না কেন।

এমনটাও নয় যে মধু খেলে আপনার রক্তের শর্করা তুলনামূলক ধীরে বাড়বে কিংবা সেটি আপনার দেহে লম্বা সময় পর্যন্ত শক্তি জোগাবে। বরং অনেকটা চিনির মতোই হুট করে রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়ায় মধু, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

আরও পড়ুন

গুড় কি ভালো বিকল্প

শীতের গুড় সুস্বাদু, তবে এতেও ক্যালরির মাত্রা চিনির প্রায় কাছাকাছি
ছবি : প্রথম আলো

শীতের গুড় সুস্বাদু। তবে এতেও ক্যালরির মাত্রা চিনির প্রায় কাছাকাছি; তা সেটি আখের গুড় হোক, কিংবা হোক খেজুর রসের গুড়। চিনি আর মধুর মতোই বেশ দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় গুড়।

বুঝতেই পারছেন, গুড়ে আপনার স্বাদবদল হলেও তা চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে না। এ ছাড়া বাজারের সব গুড় খাঁটি উপাদানে তৈরি কি না, সে–ও এক প্রশ্ন বটে।

আরও পড়ুন

সমাধান কী

চিনি ক্ষতিকর। স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে রোজকার চিনি গ্রহণের অভ্যাস। মধু, গুড়, বাদামি চিনি, কৃত্রিম চিনি, স্যাকারিন—কোনোটিই সাদা চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প নয়।

সুস্থ থাকতে মিষ্টি স্বাদের যেকোনো কিছু খাওয়া কমিয়ে দেওয়াই শ্রেয়। হুট করে অবশ্য তা করা কঠিন। তবে এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে সংকল্প করুন। ধীরে ধীরে খাবার ও পানীয়র মিষ্টতার পরিমাণ কমিয়ে আনুন।

চিনি ছাড়াই চা খাওয়ার অভ্যাস করুন ধীরে ধীরে
ছবি: পেক্সেলস

ধরুন, আপনি আগে এক চা–চামচ চিনি দিয়ে চা খেতেন। এখন আপনি চাইলে অল্প পরিমাণ মধু দিয়ে চা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। কারণ, মধু বেশি মিষ্টি হওয়ায় মধু দিয়ে স্বাদে ভারসাম্য আনা তুলনামূলক সহজ। এরপর মধুর পরিমাণও কমিয়ে আনতে থাকুন। একসময় আপনি চিনি, গুড়, মধু, কৃত্রিম চিনি—এসব ছাড়াই চা খেতে পারবেন।

যেকোনো মিষ্টি খাবার বা পানীয়র ক্ষেত্রেই এভাবে চর্চা করতে পারেন। মিষ্টতার অভাব পূরণ করতে স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে পারেন মসলা বা অন্য কোনো সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর উপাদান দিয়ে।

সারা দিনে আপনার যতটা ক্যালরি প্রয়োজন, তা মিষ্টি খাবার বা পানীয় থেকে নয়, বরং আসুক স্বাস্থ্যকর গোটা শস্য ও ফল থেকে
ছবি: পেক্সেলস

সারা দিনে আপনার যতটা ক্যালরি প্রয়োজন, তা মিষ্টি খাবার বা পানীয় থেকে নয়, বরং আসুক স্বাস্থ্যকর গোটা শস্য ও ফল থেকে। এমন খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় ধীরে ধীরে। দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি জোগায়। তাই মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি কমে।

লাল চাল, লাল আটা, ওট, যব, কিনোয়া—এ ধরনের কিছু শস্য; আপেল, কলা, খেজুর আর কিসমিসের মতো খাবারও দারুণ। মনে রাখবেন, ফলের রসের চেয়ে গোটা বা কাটা ফল বেশি স্বাস্থ্যকর। যেসব ফল খোসাসহ খাওয়া যায়, সেসবের খোসা ফেলে না দেওয়াই ভালো।

আরও পড়ুন