টেনিস এলবো কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী

কনুইয়ের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা বা প্রদাহজনিত একটি রোগ টেনিস এলবো। কনুইয়ের বাইরের দিকের হিউমেরাস হাড়ের ল্যাটারাল এপিকন্ডাইলে মাংসপেশির টেনডন বা রগে এই প্রদাহ হয়। তাই এর আরেক নাম ল্যাটারাল এপিকন্ডাইলাইটিস।

কনুইয়ের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা বা প্রদাহজনিত একটি রোগ টেনিস এলবোছবি: পেক্সেলস

কেন হয়, লক্ষণ কী

আমাদের দেহের মাংসপেশিগুলো রগ বা টেনডনের সাহায্যে হাড়ের সঙ্গে যুক্ত। এর কাজ বাহুকে সোজা করা ও মুঠি শক্ত করে কোনো কিছু ধরা। বাহুতে চাপ পড়ে এমন কাজ কেউ দীর্ঘদিন করলে টেনডনে ব্যথা ও প্রদাহের সৃষ্টি হয়।

বাহুর অতিব্যবহারের (যেমন টেনিস, ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টন খেলা, রান্না, ভারী কিছু ওঠানো ইত্যাদি) কারণে টেনিস এলবো হতে পারে। আগে ধারণা করা হতো যে টেনিস খেলোয়াড়দের এটি বেশি হয়। সে জন্যই এর নাম দেওয়া হয় টেনিস এলবো।

এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কনুইয়ের বাইরের দিকে মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা, কনুইয়ের বাইরে থেকে বাহু ও কবজি পর্যন্ত ব্যথা, করমর্দন বা কোনো বস্তু ওঠাতে গেলে ব্যথা অনুভূত হওয়া।

টেনিস এলবো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করলেই ধরা যায়, তেমন কোনো ল্যাবরেটরি পরীক্ষার দরকার হয় না। কনুইয়ের বাইরের দিকে ফুলে যেতে বা লাল হতে পারে। কনুইয়ে চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যথা সব সময় অথবা বাহু সোজা করলেই হতে পারে।

মূলত অন্য রোগ থেকে আলাদা করতেই রক্ত পরীক্ষা, কনুইয়ের এক্স-রে, এমআরআই, ডায়াগনস্টিক আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদি করা হয়। টেনিস এলবোর সঙ্গে মিল আছে, এমন রোগ হলো সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস, মেডিয়াল এপিকন্ডাইলাইটিস, বাইসেপ টেনডিনাইটিস ইত্যাদি।

আরও পড়ুন

চিকিৎসা ও প্রতিকার

টেনিস এলবোর চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার খুব একটা লাগে না। মূলত রোগ সম্পর্কে রোগীকে সম্যক ধারণা দেওয়া জরুরি। এ রোগ হলে কী করা যাবে, কী করা যাবে না, তা রোগীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হয়।

তীব্র ব্যথার সময় বাহুকে বিশ্রাম দিতে হবে। লাল হলে বা ফুলে গেলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে দিনে তিন–চারবার বরফ লাগানো যাবে। প্রয়োজনে ব্যথানাশক ওষুধ, ইন্ট্রালেশনাল স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করা যায়। তবে কোনো ধরনের মালিশ করা যাবে না।

দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম, ম্যাসেজ থেরাপি, টেনিস এলবো ব্রেস ও পিআরপি থেরাপি ব্যবহার করা হয়। ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে কোনো ফল না এলে অপারেটিভ চিকিৎসা দরকার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘ল্যাটারাল এপি কন্ডাইল রিলিজ’ হলো প্রচলিত একটি অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি। জটিলতা হলো, অস্ত্রোপচারের পর বাহু পুরোপুরি সোজা না–ও হতে পারে। অস্ত্রোপচারের পরও ব্যথা থাকতে পারে এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে।

ডা. দিলীর জামাল, সহকারী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন, আলোক হেলথকেয়ার, ঢাকা

আরও পড়ুন