অ্যালার্জির ওষুধ কি দীর্ঘসময় ধরে চলতে পারে
আমাদের চারপাশেই অনেক অ্যালার্জি অর্থাৎ হাইপারসেনসিটিভিটি বা অতিসংবেদনশীলতার রোগী। নির্দিষ্ট কোনো বস্তুর সংস্পর্শে এলে এ ধরনের রোগীর শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, হাঁচি-কাশি বা চুলকানি, খুসখুসে কাশির মতো সাধারণ উপসর্গ থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টের মতো মারাত্মক কিছুও হতে পারে এ থেকে। খাদ্যবস্তুতে অ্যালার্জি থাকলে পেটব্যথা ও ডায়রিয়া হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তীব্রতা গুরুতর না হলেও কখনও কখনও কিডনি ও লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের জটিলতাও দেখা দিতে পারে। কখনও রোগী শকে চলে যায় বা অচেতন হয়ে পড়ে, এমনকি মারাত্মক ধরনের সংবেদনশীলতায় রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। তাই অ্যালার্জিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই।
জানতে হবে কারণটা
ব্যক্তিভেদে অ্যালার্জির কারণ আলাদা। কারও ধুলাবালিতে অ্যালার্জি, কারও ফুলের রেণুতে। কারও উলের সংস্পর্শে, কারও আবার নির্দিষ্ট কোনো খাদ্যবস্তুতে। সুগন্ধী কিংবা প্রাণীর লোমেও কারও কারও অ্যালার্জি থাকে। কার্পেট, শতরঞ্জিতেও অ্যালার্জি থাকে অনেকের। কার কীসে অ্যালার্জি তা আগে জানা জরুরি। রোগী নিজেই অনেক ক্ষেত্রে বুঝতে পারেন কীসে তাঁর অ্যালার্জি। তবে নতুন নতুন বস্তুর প্রতি অ্যালার্জি বা অতিসংবেদনশীলতা সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতাও থাকে। তাই ভালো থাকার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। একজন ব্যক্তির ঠিক কোন কোন বস্তুতে অ্যালার্জি রয়েছে, পরীক্ষার মাধ্যমে তা নির্ণয় করার সুযোগ রয়েছে।
চিকিৎসাব্যবস্থা
অ্যালার্জির মূল চিকিৎসাই হলো এর মূল কারণকে এড়িয়ে চলা। কার্পেটে অ্যালার্জি থাকলে ঘরের কার্পেট সরিয়ে ফেলতে হবে। ধুলাবালুতে অ্যালার্জি থাকলে ঘর ঝাড়পোছ করার সময় দূরে থাকা। মানে যার যেটিতে অ্যালার্জি, সেটি এড়িয়ে চলতে হবে।
অ্যালার্জির চিকিৎসায় মূলত দুই ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে। এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলোর তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না। আর কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো অ্যালার্জির উপসর্গকে প্রশমন করে (অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ)। এগুলো আবার দীর্ঘ মেয়াদে সেবন করা উচিত নয়। এগুলোর কারণে ওজন বৃদ্ধি, রুচি বৃদ্ধি, মুখের শুষ্কতা হতে পারে। কোনোটির কারণে রক্তচাপ বাড়ে, কোনোটির কারণে বাড়ে রক্তের চর্বি। দীর্ঘদিন সেবনের ফলে রোগীর এক ধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হয়ে যায়, ওষুধ সেবন না করলে রোগী স্বস্তি পান না। তা ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ সেবন করলে দু’টি ওষুধের ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে কি-না, সেটিও খেয়াল রাখার বিষয়। তাই প্রয়োজন হলে অর্থাৎ অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিলেই কেবল এসব ওষুধ খাওয়া উচিত, তাও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে।
কিছু কিছু ওষুধ আছে যা সেবনে রোগীর অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়ে, যেমন ব্যথানাশক, বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ। তাই অন্য কোনো রোগের কারণে চিকিৎসা নিতে হলেও চিকিৎসককে আপনার অ্যালার্জির ইতিহাস জানানো জরুরি।
অনেক সময় তীব্র উপসর্গ উপশমে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়, যা অ্যালার্জির উপসর্গ খুব দ্রুত দূর করতে পারে। কিন্তু স্টেরয়েড দীর্ঘদিন সেবন করা খুবই বিপজ্জনক। অনেক রোগী অ্যালার্জি বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে স্টেরয়েড খেয়ে ফেলেন কারণ তিনি জানেন এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ। কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধ খাবেন না। প্রেসক্রিপশনে কোনো ওষুধ কত দিন চলবে তা ভালো করে অনুসরণ করুন। আগে খেয়েছেন, উপকার পেয়েছেন বলে বারবার খাবেন না।
অ্যালার্জি কখনও পুরোপুরি সেরে যাবে না কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণে রেখে ভালো থাকা যায়।