চুলে কৃত্রিম রং ব্যবহার করে ক্যানসার ডেকে আনছেন না তো?

চুল রাঙাতে কৃত্রিম রংয়ের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো
ছবি : প্রথম আলো

পাকা সাদা চুল কালো বা রঙিন করতে এবং অনেক সময় চুলে বিভিন্ন শেড আনতে নারী-পুরুষ সবাই চুলে নানা ধরনের রং করে থাকেন। চুলের কৃত্রিম রং কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত? এ থেকে কোনো ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা আছে কি?

চুল মূলত ক্যারাটিন নামের প্রোটিনে তৈরি। চুলের গোড়ায় থাকে চুলের ফলিকল, যা চামড়ার নিচে থাকে, দেখা যায় না। বাইরে আছে চুলের শ্যাফট, যা আমরা দেখতে পাই। চুলের শ্যাফটে রয়েছে প্রধানত তিনটি আবরণ (বাইরে থেকে ভেতরে): কিউটিকল, করটেক্স, মেডুলা।

সাধারণত আমাদের চুলের প্রকৃত রং হচ্ছে কালো। আবার ইউরোপীয়দের চুলের রং হচ্ছে লালচে। মূলত চুলের গোড়ায় যে মেলানিন থাকে, এর জন্যই আমাদের চুলের এই রং হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে চুলের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হতে দেখা যায়। বিভিন্ন রোগবালাই, বংশগত কারণেও অসময়ে চুলের রং পরিবর্তন হয়।

যে ডাই যত বেশি চুলের ভেতরের স্তরে প্রবেশ করে, তা তত বেশি ক্ষতিকর
ছবি : প্রথম আলো

চুলের কৃত্রিম রং বা হেয়ার ডাই কী

সাধারণত তিন ধরনের হেয়ার ডাই রয়েছে। ভেজিটেবল ডাই, মেটালিক ডাই ও সিনথেটিক অরগানিক ডাই। যে ডাই যত বেশি চুলের ভেতরের স্তরে প্রবেশ করে, তা তত বেশি ক্ষতিকর। আবার ভেতরে বেশি প্রবেশ করতে পারে যেসব ডাই, তার স্থায়িত্ব বেশি হয়। আর এ কারণে তত বেশি ন্যাচারাল কালার মনে হয়। তাই তো সেলুন, পারলারে সিনথেটিক অরগানিক ডাই বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়।

হেয়ার ডাইয়ের ক্ষতিকর প্রভাব

কৃত্রিম রং বা হেয়ার ডাই থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে মূত্রথলির ক্যানসার, ফুসফুস ক্যানসার, লিভার ক্যানসার, ব্লাড ক্যানসার বা লিউকোমিয়া, লিম্ফোমা, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া ইত্যাদির ক্যানসার অনেক সময় চুলে কৃত্রিম রং ব্যবহারের কারণে হয়ে থাকে। হেয়ার ডাইয়ে অ্যারাইলামাইন, অ্যামাইনোফেনল জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণেই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কারণ, এগুলো কারসিনোজেনিক। এ জন্য গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ জনগণের চেয়ে নাপিতদের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। ডাই যেন তাদের ত্বকের সংস্পর্শে আসতে না পারে এ জন্য গ্লাভস (যেমন নাইট্রাইল গ্লাভস) পরার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন
হেয়ার ডাইয়ে অ্যারাইলামাইন, অ্যামাইনোফেনল জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণেই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে
ছবি : প্রথম আলো

এ ছাড়া কৃত্রিম রং ব্যবহারের কারণে মাথার ত্বকে চুলকানি, চোখ লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, ফোসকা পরা, চোখ জ্বালা করা, শ্বাসকষ্ট এমন সমস্যাও চুলে দেখা দেয়। প্যারাফিনাইলিনডায়ামাইন নামের রাসায়নিকটি হেয়ার ডাইয়ে থাকার কারণে হাইপারসেনসেটিভ রিঅ্যাকশন বেশি হয়। তা ছাড়া গ্লাইসেরাইল মনোথায়োগ্লাইকোলেইট, অ্যামোনিয়া, পার অক্সাইড, পারসালফেইট থেকেও এ রিঅ্যাকশন হতে পারে।

কোন ধরনের হেয়ার ডাই নিরাপদ

যে ডাই চুলের ভেতরের স্তর কম ভেদ করতে পারবে, সে ডাই তত নিরাপদ। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, ভেজিটেবল ডাই, যেমন মেহেদি সবচেয়ে নিরাপদ। ভেজিটেবল ডাই চুলের কিউটিকল পর্যন্ত পৌঁছায়, আর ভেতরে প্রবেশ করে না বলে চুলের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তা ছাড়া অ্যালার্জিক কনটাক্ট ডার্মাটাইটিসও অনেক কম হয়। তাই ভেজিটেবল ডাইকে ননটক্সিক ডাই বলে।

সহকারী রেজিস্ট্রার

চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল