পা দেখে যেভাবে রোগ চেনা যায়

পায়ের কিছু উপসর্গ বা সমস্যা প্রায়ই শরীরে লুকিয়ে থাকা অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার প্রথম সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। এসব উপসর্গ অবহেলা না করে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

পা দেখেই অনেক রোগের লক্ষণ বোঝা যায়ছবি: পেক্সেলস

পায়ে পানি আসা

পায়ের পাতা, গোড়ালি বা পায়ের নিচের অংশে ফোলাভাব দেখা দিলে চিকিত্সাবিজ্ঞানে ইডিমা বলে। এটি মূলত হৃদ্‌যন্ত্র, কিডনি ও লিভারের সমস্যার একটি গুরুতর ইঙ্গিত।

হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা বা হার্ট ফেইলিওর: যখন হার্ট ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন রক্তনালি থেকে তরল বের হয়ে টিস্যুতে জমা হতে শুরু করে। যেহেতু মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে তরল নিচের দিকে টানে, তাই পা সবার আগে ফুলে ওঠে।

কিডনির রোগ: কিডনি দুর্বল হলে শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের করে দিতে পারে না। ফলে শরীরে তরল জমা হয়, যা ইডিমা সৃষ্টি করে।

লিভারের সমস্যা: লিভার যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্তে প্রোটিন তৈরি করতে পারে না, তখন রক্তনালিতে তরল ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায় এবং তা টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ পা ফুলে গেলে বা পায়ে পানি জমা হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ফাটা গোড়ালি

পায়ের গোড়ালি তীব্রভাবে ফাটলে বুঝবেন শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধতে পারে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

গোড়ালি ফাটা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সেটা যদি ঘরোয়া চিকিত্সায় না সারে বা তীব্রভাবে দেখা দেয়, তবে এটি ডায়াবেটিস ও থাইরয়েডের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

ডায়াবেটিস: দীর্ঘমেয়াদি রক্তে উচ্চ শর্করা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি (পায়ের স্নায়ুর ক্ষতি) সৃষ্টি করে। এতে পা শুষ্ক হয়ে যায় ও ঘর্মগ্রন্থিগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। যে কারণে ত্বক খুব দ্রুত ফাটতে শুরু করে। ফাটা স্থানে সংক্রমণ হলে তা ডায়াবেটিক আলসারে (ঘা) পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

হাইপোথাইরয়েডিজম: থাইরয়েড গ্রন্থি যথেষ্ট হরমোন উত্পাদন না করলে ত্বক খুব বেশি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে, যা ফাটা গোড়ালির সমস্যা আরও বাড়ায়।
গোড়ালিতে তীব্র ফাটল ও সংক্রমণ দেখা দিলে তা ডায়াবেটিক ফুটের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেটা একটা গুরুতর পরিস্থিতি।

আরও পড়ুন

পায়ে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা

হাঁটাচলা বা বিশ্রামের সময় পায়ে ব্যথা কেবল ক্লান্তির কারণে না–ও হতে পারে। এমনটা পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজেরও লক্ষণ। এ ছাড়া আরও নানা অসুবিধার ফলে দীর্ঘদিন পায়ে ব্যথা হতে পারে।

পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ: এই রোগে ধমনিগুলো সরু হয়ে যাওয়ায় পায়ে পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছায় না। হাঁটার সময় পেশিতে তীব্র ব্যথা হয় (ক্লডিকেশন), যা বিশ্রামের পরে কমে যায়। এটি হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে একটি।

ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস: পায়ের গভীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধলে পা ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। এই জমাট বাঁধা রক্ত ফুসফুসে চলে গেলে তা পালমোনারি ইমবোলিজম নামে মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

সায়াটিকা: কোমরের সায়াটিক স্নায়ুতে চাপ পড়লে সেই ব্যথা কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।

ভ্যারিকোস ভেইন বা শিরা বাঁকা দেখানো

  • পায়ের ত্বকের ভেতরে যখন শিরাগুলো ফুলে ওঠে, তা বাইরে থেকে চোখে পড়ে; জায়গাটি প্যাঁচানো বা জালের মতো আকার ধারণ করে, তখন সেটিকে বলে ভ্যারিকোস ভেইন। এটি শিরার কার্যকারিতা হ্রাসের ইঙ্গিত।

  • পায়ের শিরাগুলোর ভেতরে ছোট ছোট কপাটিকা (ভালভ) থাকে, যা রক্তকে অভিকর্ষের বিপরীতে হার্টের দিকে ঠেলে দিতে সাহায্য করে। এই কপাটিকাগুলো দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পায়ে রক্ত জমা শুরু করে।

  • জমা হওয়া রক্তের চাপে শিরাগুলো ফুলে ওঠে এবং বেঁকে যায়। এর ফলে পা ভারী লাগা, চুলকানি বা রাতে পেশিতে টান পড়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।

  • ভ্যারিকোস ভেইন গুরুতর হলে আলসার বা ত্বকের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

সাধারণত আঘাত বা বয়সের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

হাঁটুর ব্যথা

সাধারণত আঘাত বা বয়সের কারণে হাঁটুতে ব্যথা হতে পারে। এটি প্রধানত অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস: এটি বয়সের কারণে হয়। যেখানে হাঁটুতে থাকা কার্টিলেজ (নরম অস্থি) ক্ষয় হতে শুরু করে। ফলে হাঁটার সময় হাড়ে হাড়ে ঘষা লেগে ব্যথা হয়।

বাতরোগ: এটি একটি অটো–ইমিউন রোগ। যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভুলবশত জয়েন্টগুলোর আস্তরণে আক্রমণ করে। এর ফলে তীব্র প্রদাহ, ফোলাভাব ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা হয়।

এসব লক্ষণের মধ্যে যেকোনো একটি দেখা দিলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। সময়মতো রোগনির্ণয় ও চিকিত্সা অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন