দৈনিক কী পরিমাণ চুল পড়া স্বাভাবিক?

চুল পড়া নিয়ে কি দুশ্চিন্তা করবেন? নাকি স্বাভাবিক বলে মেনে নেবেন? সুখবর হলো, চুল পড়া বেশির ভাগ মানুষের জন্যই স্বাভাবিক। এতে চিন্তিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। তবে আমরা হয়তো খেয়ালও করি না যে দৈনিক আমাদের কী পরিমাণ চুল পড়ে। কারণ, খেয়াল করলে রোজই আঁতকে উঠতাম আমরা। এ বিষয়ে মার্কিন বিশেষজ্ঞ গ্রেচেন ফ্রিজ বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি চুল পড়ে। কারও কারও বেলায় এই সংখ্যা একটু কমবেশিও হয়। প্রতিদিন চুল কী পরিমাণ পড়বে, তা নির্ভর করে আপনি চুলের বিকাশের কোন পর্যায়ে আছেন, তার ওপর।’

চুলের বিকাশকালের কোন পর্যায়ে আপনি আছেন, তার ওপর নির্ভর করে দৈনিক কী পরিমাণ চুল আপনার পড়বেছবি: প্রথম আলো

চুলের বিকাশ পর্যায় কী?

জন্মের পর লম্বা সময় পাড়ি দিয়ে একজন মানুষ পরিণত হয়ে ওঠে। দীর্ঘ এই সময়ে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। অন্য সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো আমাদের চুলেরও আছে বিকাশের কয়েকটি স্তর বা পর্যায়। সেসব হলো, অ্যানাজেন বা বৃদ্ধিপর্যায়। অ্যানাজেন পর্যায়টি ২ থেকে ৬ বছর দীর্ঘ হতে পারে। ক্যাটাজেন বা ফলিকল থেকে মুক্ত হওয়ার পর্যায়, যা ১০ থেকে ২০ দিনের হতে পারে, টেলোজেন বা বিশ্রাম পর্যায়, যা ৩ থেকে ৪ মাস দীর্ঘ হয় এবং সব শেষে এক্সোজেন বা স্খলন পর্যায়।

চুলের বিকাশকালের কোন পর্যায়ে আপনি আছেন, তার ওপর নির্ভর করে দৈনিক কী পরিমাণ চুল আপনার পড়বে। এসব পর্যায়ে আপনি কখন প্রবেশ করবেন, বৈজ্ঞানিকভাবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকলে বা শীতকালে এবং প্রকৃতিতে ভিটামিন ডি কম থাকলে চুল এক্সোজেন পর্যায়ে প্রবেশ করে। ফলে চুল বেশি পড়ে।

কীভাবে বুঝবেন চুল পড়ায় অস্বাভাবিকতা আছে?

চুল পড়ায় কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না, তা কীভাবে বুঝবেন, সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সুসান ম্যাসিক বলেন, ‘মাথায় হাত দিলে যদি অস্বাভাবিক পরিমাণ চুল উঠে আসে এবং মাথার ত্বক যদি বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগে, তাহলে বুঝবেন, আপনার চুল পড়ার হার স্বাভাবিক নয়।’

কখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়ে?

যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়তে শুরু করে, তাহলে বুঝবেন, আপনার শরীরে কিছু ঘটছে। যেসব কারণে চুল অস্বাভাবিক পরিমাণে পড়তে শুরু করে—

  • হরমোনের পরিবর্তন

  • মানসিক চাপ

  • রক্তশূন্যতা

  • পুষ্টির অভাব (বিশেষ করে আমিষের)

  • থাইরয়েডজনিত সমস্যা

  • অবসাদ নিরাময়ে অ্যান্টিডিপ্রেসান্টের মতো ওষুধ সেবন

  • কেমোথেরাপি

পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যুতে মানসিক আঘাত, কোভিড-১৯–এর মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক হারে চুল পড়ার কারণ হতে পারে। টেলোজেন ইফ্লুভিয়ামের কারণেও চুল পড়তে পারে। মানসিক বা শারীরিক নানাবিধ চাপের ফলে চুল পড়া শুরু হলে তাকে টেলোজেন ইফ্লুভিয়াম বলে। অনেকেই কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হওয়ার পর টেলোজেন ইফ্লুভিয়ামের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সুখবর হলো রোগাক্রান্ত শরীর কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর চুল পড়াও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়।

শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা যেভাবে চুল পড়ার জন্য দায়ী হতে পারে

আমাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা অটো–ইউমিউনও চুলের ক্ষতি করতে পারে। লুপাস হলো শরীরের অটো–ইমিউনজনিত একপ্রকার রোগ, যা ত্বক, অস্থিসন্ধি, স্নায়ুতন্ত্রসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আক্রমণ করে। লুপাস মাথার ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে চুল পড়ার হার বাড়িয়ে দেয়। তবে লুপাসের ফলে শুধু মাথার চুলই নয়, কপালের ভ্রু, চোখের পাপড়ি এবং দাড়ি-গোঁফও পড়তে পারে। লুপাস নারীদের বেশি হলেও পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার হারও নেহাত কম নয়।

ড. সুসান বলেন, চুল পড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা। এটি হলো শরীরের একটি অটো–ইমিউনজনিত রোগ, যা চুলের ফলিকিউলকে আক্রমণ করে চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়।

যদি আপনার মাথার ত্বকে বেশি চুলকানি হয়, জ্বালাপোড়া করে, তাহলে বুঝে নিন আপনার ‘স্ক্যাল্প সোরাইসিস’ হয়েছে। স্ক্যাল্প সোরাইসিসের কোনো প্রতিকার নেই, তবে চিকিৎসা করলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

বংশগত কারণে যেভাবে চুল পড়তে পারে

কখনো কখনো বংশগত কারণেও চুল পড়ে। অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া হলো চুল পড়ার সবচেয়ে পরিচিত বংশগত কারণ। ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন হরমোনজনিত ত্রুটির কারণে বংশগত এই রোগ দেখা যায়।

অনেকে বিশ্বাস করেন, টাকের জন্যে দায়ী জিন পূর্বপুরুষের কোনো একজন পুরুষ সদস্যের কাছ থেকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিস্তৃত হয়। এটা ভুল ধারণা। পুরুষ বা নারী—উভয় লিঙ্গের পূর্বপুরুষই এর জন্য দায়ী হতে পারেন।

অস্বাভাবিক চুল পড়া লক্ষ করলে যা করণীয়

কমবেশি চুল পড়া চিন্তিত হওয়া মতো কোনো বিষয় নয়। তবে যদি খুব বেশি পরিমাণ চুল পড়ে, তাহলে দ্রুত  চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকেরা আপনার চুল পড়ার সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে পারবেন। তবে চুল পড়ার পাশাপাশি শরীরের অন্য কোনো রোগের লক্ষণ দেখলে আমলে নিন। আতঙ্কিত হবেন না। দেরি না করে দ্রুতই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

 সূত্র: ইয়াহু

আরও পড়ুন