ভালো থাকতে প্রতিদিন এই সহজ ব্যায়ামগুলো করুন
আদিম যুগে মানুষকে শিকারির জীবন যাপন করতে হতো। খাবারের জন্য ধাওয়া করতে হতো পশুদের পিছে। পানির জন্য যেতে হতো বহুদূর। সেই জীবন আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। এখন ঘরে বসেই পাওয়া যায় খাবার ও পানি। কোথাও যাওয়ার জন্যও আগের মতো পায়ের ওপর ভরসা করে ছুটতে হয় না। স্থল, জল ও আকাশ—সবই এখন আমাদের পদানত। কিন্তু বদলায়নি আমাদের শরীর। আর তাই নিয়মিত আদিম যুগের মতো নড়াচড়া না করলে দেখা দেয় নানা শারীরিক জটিলতা। ব্যথা, যন্ত্রণা, পক্ষাঘাত। সেসব এড়াতে প্রতিদিন এই সহজ ব্যায়ামগুলো করতে পারেন।
প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট মেঝেতে বসে থাকার অভ্যাস আপনার কোমর ও মেরুদণ্ডকে মজবুত করবে। সে জন্য তিন ধরনের আসনে বসতে পারেন। স্কুলের দিনগুলোর মতো দুই পা সামনে আড়াআড়ি করে রেখে বসতে পারেন। এক পা সোজা রেখে আরেক পা মেঝের সমান্তরালে নিয়ে ৯০ ডিগ্রি কোণ বানিয়ে বসুন। কিংবা দুই পা সামনে সোজা রেখে পিঠ টান টান করে বসুন।
বসা অবস্থা থেকে হাতে ভর না দিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। প্রথম প্রথম না পারাটাই স্বাভাবিক। তাতে হতাশ না হয়ে অনুশীলন চালিয়ে যান। পা আড়াআড়ি রাখা অবস্থা থেকে সোজা উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।
স্কুলে হাফ চেয়ার করে রাখার যে শাস্তি প্রচলিত আছে, স্কোয়াট অনেকটা সে রকম। হাঁটু ভাঁজ করে দাঁড়াতে হবে। কোমর নিচের দিকে ঝুলে থাকবে। হাত দুটো রাখতে হবে মেঝের সমান্তরালে। পায়ের আঙুলগুলো সামনের দিকে ভর দিয়ে থাকবে। এটা হাঁটু, কোমর, পিঠ ও শ্রোণী অঞ্চলের জন্য সহায়ক।
আপনার ডান পা একটা বেঞ্চি বা টেবিলের ওপর রাখুন। হাঁটু পর্যন্ত সমান্তরাল করে নামান। বাঁ হাত দিয়ে গোড়ালি চেপে রাখুন। এবার শরীর (ধড়) একবার ডানে ঘোরান, আরেকবার বাঁয়ে। যোগব্যায়ামের ভাষায় একে বলে পিজিয়ন পোজ।
ছোটবেলার আরেকটা কার্যকর শাস্তি হলো এক পায়ে দাঁড়ানো। অবশ্য বেশিক্ষণ এক পায়ে দাঁড়ানো আসলেই মুশকিলের ব্যাপার। সে জন্য ২০ সেকেন্ড করে শুরু করুন। ২০ সেকেন্ড পরপর পা বদলে নিন। তাতে দক্ষতা চলে এলে সময় বাড়াতে পারেন। তবে আরও কার্যকর হবে চোখ বন্ধ রেখে করতে পারলে।
আরেকটা দারুণ ব্যায়াম হলো দড়িলাফ। কিন্তু এ বাবদে নিয়মিত না হলে দড়িলাফের বদলে শুধু লাফাতে পারেন। আঙুলে ভর দিয়ে ছোট ছোট করে লাফ দিন। লক্ষ্য নির্ধারণ করুন ৫০ বার।
ব্যায়ামের মধ্যে সবার সেরা হাঁটা। এটা হাড়, হাড়ের সংযোগ ও মাংসপেশিকেও সবল করে। সাহায্য করে ভালো ঘুম ও ওজন নিয়ন্ত্রণেও। সে জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার পা। একা হাঁটার চেয়ে চেষ্টা করুন সঙ্গী জোগাড় করে হাঁটার।
শুধু হাঁটার চেয়ে ঘাড়ে ওজন নিয়ে হাঁটা আরও ভালো। সে জন্য ব্যাগে করে ২ থেকে সাড়ে ৪ কেজি ওজন বহন করুন। কিংবা হাঁটতে পারেন চড়াই পথে।
আপনি যতই ব্যায়াম করুন, দিনে যদি ৬-৭ ঘণ্টা বসেই কাটিয়ে দেন, তাহলে পিছিয়ে পড়তে হবে। কারণ, বসে থাকার চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় দ্বিগুণ ক্যালরি খরচ হয়। তাই কাজে ব্যবহার করতে পারেন দাঁড়ানোর টেবিল। না পারলে নিয়মিত বিরতি নিয়ে খানিকটা হাঁটুন। লিফটের বদলে ব্যবহার করুন সিঁড়ি।
টানা বসে থাকলেও তার মধ্যেই অল্পবিস্তর হালকা নড়াচড়া করবেন। একটু পরপর আসন বদলাতে পারেন। কিংবা পায়ের অবস্থান। মুদ্রাদোষের মতো হাতের নড়াচড়া। কারণ, এগুলোতেও খানিকটা ক্যালরি খরচ হয়।
দাঁড়ানো অবস্থায় হাত সোজা ওপরে তুলুন। একদম সোজা রেখে হাত ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে আনুন। এভাবে একেক হাত ১০ বার করে ঘোরান।
প্রকৃতিগতভাবে আমাদের পা মাটিকে স্পর্শ করার কথা। তাতে আমাদের শরীর পায়ের অবস্থান সম্পর্কে টের পায়। কিন্তু এখন আমরা সব সময় জুতা পরে থাকি। পা মাটিকে স্পর্শই করে না। সুযোগ পেলেই তাই খালি পায়ে চলা উচিত। আর দিনে মিনিটখানেক হাত দিয়ে পা মেসেজ করুন।
শরীরের কোথাও ব্যথা হলে সেখানে বল বা ফোম রোলার ব্যবহার করতে পারেন। ধরুন আপনার কোনো পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে ব্যথা পেয়েছেন। তাহলে পায়ের পেছন দিক দিয়ে বলটা চেপে ধরুন। পেশি টান টান করে ৪ সেকেন্ড শ্বাস নিন, তারপর ৪ সেকেন্ড নিশ্বাস বন্ধ করে রাখুন। এবার ছেড়ে দিয়ে ৮ সেকেন্ড ধরে শ্বাস ছাড়ুন।
এমনিতে মনে হয় ঘুমের মধ্যে আমরা নিঃসাড় পরে থাকি। শরীরের কোনো নড়াচড়াই হয় না। আসলে তা নয়। ঘুমের মধ্যেও শরীর শক্তি খরচ করে। তাই পর্যাপ্ত ঘুমানোও জরুরি। দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
আপনি যে ব্যায়াম যত কঠোরভাবেই করুন না কেন, সে অবস্থায় যদি ঠিকমতো শ্বাসপ্রশ্বাস চালাতে না পারেন, তাহলে আপনার ব্যায়াম ঠিকঠাক হচ্ছে না। সে জন্য নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। বড় করে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। চেষ্টা করুন প্রক্রিয়াটা নাক দিয়ে করতে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান