রমজানে ত্বকে পানিশূন্যতা হচ্ছে না তো?

রমজান মাসে রোজা রাখার কারণে অনেকের দেহেই পানির ঘাটতি দেখা দেয়মডেল: জাহিদ। ছবি: প্রথম আলো

রমজান মাসে রোজা রাখার কারণে অনেকের দেহেই পানির ঘাটতি দেখা দেয়। পানিশূন্যতার কারণে ত্বকের ক্ষতি হয়। ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক। পাশাপাশি উজ্জ্বলতা হারায় ত্বক। একজন রোজাদারের শরীরে পানিশূন্যতার পরিমাণ নির্ভর করে তিনি ইফতার থেকে শুরু করে সাহ্‌রি পর্যন্ত কতটুকু পানি পান করেছেন, কী পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করেন এবং তিনি যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানকার আবহাওয়ার ওপর। পানি ও খাবারের স্বল্পতা, দৈনন্দিন রুটিনের পরিবর্তন এবং পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতির কারণে রমজান মাসে আমাদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক একধরনের চাপ থাকে। ক্লান্তি দেখা দেয়। এ ছাড়া চোখের চারপাশে ডার্ক সার্কেল, অর্থাৎ কালো দাগ দেখা যায়। শরীর পানিশূন্য হওয়ার কারণে চোখে ক্লান্তি ফুটে ওঠে। তাই পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করা জরুরি।

কীভাবে বুঝবেন পানিশূন্যতা হচ্ছে

রোজা থাকা অবস্থায় শরীর যদি পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তাহলে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, চোখ গর্তে চলে যাওয়া, প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা ও ঝিমঝিম, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, দুর্বলতা, শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া, ত্বক শুকিয়ে যাওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। পানির অভাব দেখা দিলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্সও হয়। অর্থাৎ শরীরে তরল আকারে থাকা বিভিন্ন লবণ, যেমন সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, পটাশিয়ামের মতো বিভিন্ন উপাদানের অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। এই অসামঞ্জস্যতা বেড়ে গেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে রমজান মাসে শুধু পরিমাণমতো পানি খেলেই চলবে না, অন্যান্য খনিজযুক্ত তরল খাবারও বেশি বেশি খেতে হবে। যাতে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স না হয়। যেমন ডাবের পানি, চিনির শরবত, গুড়ের শরবত, লাচ্ছি, দুধ, স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। পানিশূন্যতা দেখা দিলে স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। পানিশূন্যতা খাবার দিয়েও পূরণ করতে পারেন। সেই খাবার হতে পারে মাছের ঝোল, ডাল, দুধ। এতে পানির চাহিদা কিছুটা পূরণ হবে। ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখতে ফলের রস খেতে পারেন। বাজারে এখন তরমুজ, বাঙ্গি, কমলা, বেলসহ নানা মৌসুমি ফল আছে। এসব ফল দিয়ে শরবত বানিয়েও খেতে পারেন। তবে লক্ষ রাখতে হবে, ফলের জুস ইফতারের সময় সরাসরি খাওয়া যাবে না। পানি মিলিয়ে খেতে হবে। সারা দিন রোজা রেখে খালি পেটে ফলের রস খেলে অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা হতে পারে।

ত্বক সতেজ রাখতে একজন রোজাদার ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করবেন। ত্বকের ধরন বুঝে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত শর্করা, লবণাক্ত খাবার, ফলমূলের কনসেনট্রেটেড জুস পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। বেশি বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, এমন শাকসবজি, ফলমূল বেশি খেতে হবে। এ সময় দিনে–রাতে মিলিয়ে আট ঘণ্টার মতো ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। দিনের বেলায় বাইরে বের হলে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করুন। আই কেয়ার ক্রিম ব্যবহার করুন। ত্বকের যত্নে ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ ফেস সিরাম এবং হায়ালুরনিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহার করা যেতে পারে। ইফতারের আধঘণ্টা পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটা বা শারীরিক ব্যায়াম শরীরকে সতেজ করবে।

ডা. লুবনা খন্দকার: সহযোগী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা