ক্ষুধা লাগলে শরীরে কী কী ঘটে

ক্ষুধা লাগলে পেট জ্বালা করে বা পেটব্যথার মতো কষ্টদায়ক কোনো অনুভূতি হয়
ছবি: পেক্সেলস

যখনই আমাদের দেহের খাবার প্রয়োজন হয়, তখনই দেহে শুরু হয় নানা পরিবর্তন। এসব পরিবর্তনের পেছনে থাকে হরমোন ও স্নায়ুর ব্যাপার-স্যাপার। সাধারণভাবে সবাই জানেন, ক্ষুধা লাগলে পেট জ্বালা করে বা পেটব্যথার মতো কষ্টদায়ক কোনো অনুভূতি হয়। তবে এর বাইরেও ঘটে নানা কিছু।

অনেক সময় আমরা বুঝতেও পারি না, দেহের এসব পরিবর্তনের সঙ্গে ক্ষুধার সম্পর্ক আছে। সুস্থ–স্বাভাবিক জীবনধারায় নিয়মিত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট খালি না রাখার পরামর্শই দেওয়া হয়। তবে বাস্তবতা হলো, অনেকেই লম্বা সময় না খেয়ে থাকেন।

এমন অবস্থায় দেহে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে, সে সম্পর্কে জানালেন ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নওসাবাহ্ নূর

পেটে যা ঘটে

আমাদের পাকস্থলীতে সব সময়ই একধরনের অ্যাসিড নিঃসৃত হতে থাকে। এর নাম হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড। খাবার হজম করতে এই অ্যাসিড অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু যখন পাকস্থলীতে কোনো খাবার নেই, এমনকি নেই পানিও, তখন এই অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে থাকে। লম্বা সময় ধরে এই অ্যাসিড পাকস্থলীতে থাকলে তা পাকস্থলীর ভেতরের অংশে আলসার বা ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।

আরও পড়ুন

পাকস্থলী খালি হয়ে গেলে এর স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণের হার বেড়ে যায়। এর ফলেই ব্যথার মতো অনুভূতি হয়। খুব বেশি ক্ষুধা পেলে তীব্র সংকোচনের কারণে খানিকটা শব্দও হয় পেট থেকে। একেই বলা হয় পেট চোঁ–চোঁ করা।

খালি পেটে থাকলে পরিপাকতন্ত্র থেকে একধরনের হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। এই হরমোনের নাম গ্রেলিন। গ্রেলিন আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষুধার সংকেত পৌঁছে দেয়। খালি পেটে থাকলে দেহে লেপটিন নামে অন্য একটি হরমোনের মাত্রা কমে যায়।

এই হরমোনের কাজ হলো মস্তিষ্কে পরিতৃপ্তির সংকেত পৌঁছে দেওয়া। বুঝতেই পারছেন, এর মাত্রা কমে গেলেও মস্তিষ্কে ক্ষুধার সংকেত পৌঁছে যায়।

আরও পড়ুন

খারাপ লাগার আরও কারণ

বেশ কিছুটা সময় না খেয়ে থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। এর ফলে মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, দুর্বলতা বা শরীর কাঁপার মতো সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্তি বা নিস্তেজ ভাব দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে এই একই কারণে।

মন-মেজাজে ক্ষুধার প্রভাব

ক্ষুধা লাগলে রক্তের শর্করার মাত্রা কমে যায় বলেই মেজাজ বিগড়ে যায় সহজে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। চট করে রেগে যাওয়া, এমনকি মারামারি বাধাতে উদ্যত হওয়াও বিচিত্র নয়। নির্দিষ্ট কাজে মনোযোগ দেওয়াও বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষুধার্ত অবস্থায় ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাজারসদাই করতে নিষেধ করা হয় এ কারণেই।

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষুধায়...

দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষুধার সঙ্গে লড়তে থাকলে শরীর বা মন—কোনোটাই সুস্থ থাকে না। দেহের মেদ কমতে থাকে অস্বাভাবিক মাত্রায়। পেশিরও ক্ষয় শুরু হতে পারে একসময়। দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। মারাত্মক সব জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। আমিষের অভাবে শরীরে পানিও জমতে পারে। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর অভাবে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

আরও পড়ুন