অর্ণব বললেন, ‘কী গান শুনবে?’

কদিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাঙালিদের গান শুনিয়ে এসেছেন অর্ণব। দর্শকসারিতে যাঁরা ছিলেন, কেমন ছিল তাঁদের অভিজ্ঞতা? পড়ুন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সারজানা আসিফের লেখা

মঞ্চে ‘অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’
ছবি: সংগৃহীত

প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে এমনিই সব সময় একধরনের ‘নস্টালজিয়া’ কাজ করে। সেই নস্টালজিয়া আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল ৪ ও ১১ মার্চ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও মেলবোর্নে বাংলা সংস্কৃতি ও সংগীতপ্রেমীদের জন্য ‘হোক কলরব’ নামে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল ধুন কালচারাল করপোরেশন। যেখানে গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী অর্ণব ও তাঁর বন্ধুরা।

বহুদিন পর অর্ণবকে সামনাসামনি বসে দেখা এবং শোনা যাবে, সবার মধ্যে কী উচ্ছ্বাস!
ছবি: সংগৃহীত

১১ মার্চ সন্ধ্যা ছয়টা বাজতে না বাজতেই দেখা গেল উইলিয়ামস টাউন হলের সামনে দর্শক সেজেগুজে হাজির। বহুদিন পর অর্ণবকে সামনাসামনি বসে দেখা এবং শোনা যাবে, সবার মধ্যে কী উচ্ছ্বাস! অনুষ্ঠানের শুরুতেই মেলবোর্নের বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী কন্যা’ মুনা যখন দর্শকদের জিজ্ঞেস করেন, অর্ণবের কোন গান তাঁদের পছন্দ; একের পর এক গানের নাম আসতে লাগল। আর যে–ই না অর্ণব মঞ্চে এলেন, ‘হোক কলরব’ বলে ঘোষণা দিতে হলো না, এমনিই কলরবে মুখর হয়ে উঠল পুরো মিলনায়তন।

চেনা ভঙ্গিতে অর্ণব গিটার নিয়ে বসেই বললেন, ‘কী গান শুনবে?’ শুধু গান নয়, তাঁর এই সহজ বন্ধুসুলভ আচরণই তো আমাদের তাঁর ও তাঁর গানের আরও কাছাকাছি নিয়ে গেছে। ‘হোক কলরব’, ‘তোমার জন্য নীলচে তারা’, ‘কষ্টগুলো’—একের পর এক গান হলো, দর্শক মেলাল গলা। অর্ণব–ভক্তদের একটা ব্যাপার লক্ষণীয়। প্রত্যেকেরই সব কটা অ্যালবামের প্রায় সব গান মুখস্থ! প্রতিটি গানের সঙ্গে অনেক স্মৃতি, অনেক গল্প এবং অনেক অনুভূতি মিলেমিশে একেবারে ‘ঝালমুড়ি’! নস্টালজিয়ায় ডুবে একাকার অবস্থা!

অর্ণব ও সুনিধি
ছবি: সংগৃহীত

অর্ণবের সঙ্গে তাঁর গান ও জীবনসঙ্গী সুনিধি নায়েকও ছিলেন। সুনিধি যখন ‘ও যে মানে না মানা’ গাইলেন—তাঁর কণ্ঠের মায়া ও গায়কির গভীরতায় যেন গোটা হলে এক আশ্চর্য নিস্তব্ধতা নেমে এল। যখন মহীনের ঘোড়াগুলির ‘ঘরে ফেরার গান’ গাইলেন, আমি নিশ্চিত আমার মতো ওখানে বসে থাকা অনেকের জন্যই কান্না ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল।

আরও পড়ুন

সেই পীড়নে আরেকটু ভার যোগ করলেন আরেক গুণী শিল্পী, সবার পছন্দের পান্থ কানাই। তিনি গেয়ে শোনালেন, ‘ওরে নীল দরিয়া’ ও চাটগাঁইয়া ভাষার একটি আঞ্চলিক গান। এর আগে কবে মেলবোর্নের মাটিতে দেশীয় এত সুন্দর কোনো আয়োজন উপভোগ করেছি, মনে পড়ে না। প্রত্যেক শিল্পী, বাদ্যযন্ত্রী আমাদের এক অভূতপূর্ব মুগ্ধতা ও মগ্নতায় ঘেরা সময় উপহার দিয়ে গেছেন।

পান্থ কানাই শুনিয়েছেন ‘ওরে নীল দরিয়া’
ছবি: সংগৃহীত

অনুষ্ঠানের শেষের অংশে অর্ণব দর্শকদের অনুরোধের গান গেয়ে শোনাতে শুরু করলেন। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে অনেক দিন পর যখন আমরা সবাই ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’ গাইলাম…আহা! সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়! অনুষ্ঠান শেষ হয় পান্থ কানাইয়ের ‘চুমকি চলেছে’ দিয়ে। নেচে-গেয়ে প্রিয় শিল্পী ও বন্ধুদের বিদায় জানাই আমরা।

ধন্যবাদ অর্ণব ও তাঁর বন্ধুদের, এত দূরে এসে আমাদের মনে একমুঠো আনন্দ ও একরাশ প্রশান্তি দেওয়ার জন্য! আমি নিশ্চিত, প্রত্যেক দর্শকের জন্য রাতটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ধন্যবাদ ‘ধুন কালচারাল করপোরেশন’ ও এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের।

বাংলাদেশের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, সংগীত, সিনেমা, চিত্রকর্ম এবং হস্তশিল্প অস্ট্রেলিয়ায় প্রদর্শনের ভাবনা থেকেই ২০২২ সালে ৪ জুলাই ধুনের যাত্রা শুরু হয়েছিল।