চামড়ার বিকল্প খুঁজে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন এই শিক্ষার্থীরা

‘লঞ্চ আ ডিফারেন্ট ওয়ার্ল্ড পিচ কম্পিটিশন’-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দল রাইন্ডকো লেদার্স

‘লঞ্চ আ ডিফারেন্ট ওয়ার্ল্ড পিচ কম্পিটিশন’-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দল রাইন্ডকো লেদার্স। গত ১০ ডিসেম্বর অনলাইনে অনুষ্ঠিত ফাইনাল শেষে ঘোষণা করা হয় বিজয়ীদের নাম। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার (১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি)। দলের সদস্যরা হলেন শাবাব হোসেন, শ্যানেন গমেজ ও এলিয়া ক্রিস্টোফার। পরামর্শক ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান গ্র। প্রতিযোগিতায় এবার প্রায় ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬১টি দল অংশ নেয়। তিনটি ধাপ পেরিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় পাঁচটি দল।

কারা আয়োজন করে

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি সংগঠন ওপেন সোসাইটি ইউনিভার্সিটি নেটওয়ার্ক (ওএসইউএন)। সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক, বিজ্ঞান ও কলা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা এবং জ্ঞানের অগ্রগতিকে একসঙ্গে এগিয়ে নিতে কাজ করে ওএসইউএন। মানসম্মত উচ্চশিক্ষার প্রসারে অনলাইনে কোর্স করানো, সরাসরি কোর্সে শিক্ষার্থী বিনিময়, গবেষণাসহ নানান সুবিধা পায় এই সোসাইটির অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো।

সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ও নিউইয়র্কের বার্ড কলেজের তত্ত্বাবধানে অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনসহ প্রায় ৪৬টি প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে যুক্ত। ওএসইউএনের সদস্যভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনলাইনেই এই আন্তর্জাতিক ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে অংশ নেন। এই সোসাইটি প্রতি সেমিস্টারে তাদের পরিচালিত কোর্সের ওপর বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ‘সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ’ শীর্ষক কোর্সে এবারের থিম ছিল স্থায়িত্ব ও পরিবেশ (সাসটেইনিবিলিটি ও ক্লাইমেট)। কোর্সের অংশ হিসেবেই একটি প্রকল্পে কাজ করতে হয়। একটি সামাজিক সমস্যা খুঁজে বের করে সেটার সমাধান খোঁজাই প্রতিযোগিতার নিয়ম।

যে আইডিয়ায় মিলল পুরস্কার

বাংলাদেশে চামড়াশিল্পের বেশ বড় বাজার আছে। চামড়া দিয়ে জুতা, বেল্ট, ব্যাগ, জ্যাকেটসহ উৎপাদিত হয় নানা ধরনের পণ্য। কিন্তু সেই সঙ্গে উপজাত হিসেবে তৈরি হয় বিশাল পরিমাণ বর্জ্য। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরাও নানা ধরনের চর্মরোগে ভোগেন। তাই প্রচলিত চামড়ার বিকল্প কিছু তৈরির চেষ্টা করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ‘রাইন্ডকো লেদার্স’। দলের সদস্য শাবাব হোসেন বুঝিয়ে বললেন, ‘চামড়াশিল্পের দূষণ নিয়ে আমরা সবাই জানি। একটা গবেষণায় আমরা পেয়েছি, এ শিল্পে সরাসরি যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রায় ৬ শতাংশ মানুষ জীবনের কোনো এক সময় ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। তাই আমরা এর বিকল্প খুঁজছিলাম।’ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে দলটি খুঁজে পায় আরেক সমস্যা। শাবাব যোগ করলেন, ‘আমের মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ছয় লাখ মেট্রিক টন আম নষ্ট হয়। এই অতিরিক্ত আম নষ্ট হওয়ার আগেই যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে সব দিক দিয়েই সাশ্রয় হয়। তাই আমরা “বায়ো লেদার্স”-এর ধারণা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। অর্থাৎ আম, কাঁঠালসহ আঁশযুক্ত ফল দিয়ে চামড়া বানাব। এটা শুধু দূষণই কমাবে না, সংশ্লিষ্ট মানুষদের অনেক রোগ থেকে মুক্তি দেবে।’ এই আইডিয়া উপস্থাপন করেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটি। প্রতিযোগিতার সময় যেহেতু আমের মৌসুম ছিল না, তাই কলা দিয়েই প্রোটোটাইপ বানিয়েছিল দলটি। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কারখানা পরিদর্শন করেও অনেক বাস্তবিক ধারণা পেয়েছেন দলের সদস্যরা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও প্রকল্প থেকে পণ্য তৈরিতে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে।

আরও পড়ুন

দলের বৈচিত্র্য সাফল্য পেতে সাহায্য করেছে

কোর্সে যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারলেও প্রকল্পটা বিবিএর শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী ছিল। কিন্তু এ দলে কেউই বিবিএ বা এমবিএর শিক্ষার্থী নন। শাবাব হোসেন লেখাপড়া করছেন আইন বিভাগে। শ্যানেন গমেজ জৈবপ্রযুক্তি এবং এলিয়া ক্রিস্টোফার কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পড়ছেন। তাঁরা তিনজনই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। দলে এই বৈচিত্র্য থাকার কারণে কি সমস্যায় পড়তে হয়েছে? উত্তর দিলেন শ্যানেন গমেজ। তাঁর মতে, ‘আমাদের জন্য সুবিধাই হয়েছে। হ্যাঁ, বিবিএর শিক্ষার্থীরা এ ধরনের প্রতিযোগিতার সঙ্গে বেশি পরিচিত। কিন্তু আমরাও চেষ্টা করলে পারি। প্রথমেই দক্ষতা অনুযায়ী কাজ ভাগ করে নিয়েছিলাম। বায়োটেকনোলজির শিক্ষার্থী হওয়ায় আমি ল্যাবে গবেষণার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছি। অন্যদিকে আইনকানুনের বিষয়গুলো দেখেছে শাবাব। এলিয়া সাহায্য করেছে কম্পিউটার প্রকৌশলের দিক থেকে। এ ছাড়া সব কাজেই একে অপরকে সহযোগিতা করেছি। সব মিলিয়েই এই সাফল্য এসেছে।’
ভবিষ্যতে এই পণ্যকে পুরোদমে বাজারজাতকরণের স্বপ্ন দেখেন এই শিক্ষার্থীরা।